ঢাকা ০২:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

মৃত ব্যক্তিকে সওয়াব পাঠানোর ২ শক্তিশালী উপায়

দেশের আওয়াজ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ১১:৪১:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৩ বার পড়া হয়েছে

ইসলামে মৃত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও সকল মুমিনের জন্য ঈসালে সওয়াব (সওয়াব পৌঁছানো) একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এতে মৃত ব্যক্তির কবরের জীবন ও আখেরাত কল্যাণময় হয়। নবীজি (স.) থেকে বহু হাদিসে এটির গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। মৃতব্যক্তিকে সওয়াব পাঠানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও উৎকৃষ্ট দুটি মাধ্যম হলো দোয়া ও সদকা।

১. দোয়া: মৃতের কল্যাণে শ্রেষ্ঠ উপায়
দোয়া এমন একটি আমল, যা জীবিত ব্যক্তি সরাসরি মৃত ব্যক্তির জন্য করতে পারে এবং তা আল্লাহর কাছে কবুল হলে মৃতের জন্য পরম উপকার বয়ে আনে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর যারা তাদের (মুহাজির ও আনসারদের) পরে এসেছে, তারা বলে-হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে এবং আমাদের পূর্ববর্তী ঈমানদার ভাইদেরকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা হাশর: ১০)

এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, পূর্ববর্তী মুমিনদের জন্য দোয়া করা পুণ্যময় ও প্রশংসনীয়।

হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমরা যখন মাইয়িতের জানাজার নামাজ পড়ো, তখন তার জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া করো।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৩১৯৯) দাফনের পর নবীজি (স.) বলতেন- ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য মাগফিরাত চাও এবং তার স্থিরতা কামনা করো। কারণ এখন তাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৩২২১) নবী (স.) নিজেও মৃতব্যক্তির জন্য দোয়া করতেন। (সহিহ মুসলিম: ৯২০)

এমন আরও বহু হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়- মৃত ব্যক্তির জন্য জীবিতদের দোয়া অত্যন্ত উপকারী।

২. সদকা: মৃতের জন্য স্থায়ী সওয়াবের উৎস
সদকা (দান) এমন একটি আমল, যার সওয়াব জীবিত ব্যক্তি নিজে গ্রহণ করতে পারে, আবার মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যেও পৌঁছাতে পারে। সাদ ইবনে উবাদা (রা.) বলেন, ‘আমার অনুপস্থিতিতে আমার মা ইন্তেকাল করেছেন। আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তাহলে কি উপকার হবে?’ রাসুল (স.) বলেন- ‘হ্যাঁ।’ (সহিহ বুখারি: ২৭৫৬)

আরেক সাহাবি জানতে চাইলেন- ‘আমার মা হঠাৎ মারা গেছেন। তিনি যদি সুযোগ পেতেন, সদকা করতেন। আমি তার পক্ষ থেকে সদকা করলে কি সওয়াব পাবেন?’ নবীজি (স.) বললেন- ‘হ্যাঁ।’ (সহিহ মুসলিম: ১০০৪)

আস ইবনে ওয়ায়েল জাহেলি যুগে একশ উট জবাই করার মানত করেছিল। অতপর (তার ছেলে) হিশাম তার পক্ষ থেকে ৫০টি উট জবাই করে। (বাকি ৫০টি অপর ছেলে আমর জবাই করতে চান।) এ ব্যাপারে তিনি নবী (স.)-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তোমার পিতা যদি তাওহিদ স্বীকার করত আর তুমি তার পক্ষ থেকে রোজা রাখতে বা সদকা করতে, তবে এটি তার কাজে আসত।’ (মুসনাদে আহমদ: ৬৭০৪)

ইমাম নববির (রহ.) বলেন- ‘দোয়া ও সদকার সওয়াব মৃত ব্যক্তির কাছে পৌঁছায়—এটি ইজমা তথা সর্বসম্মত বিষয়। এতে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মধ্যে কোনো মতভেদ নেই।’ (শরহু সহিহ মুসলিম: ১১/৮৫)

তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করতে চায়, সে যেন তাদের পক্ষ থেকে সদকা করে। সদকা মাইয়িতের কাছে পৌঁছায় এবং উপকারে আসে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যারা এর বিপরীত মত দেয়, তাদের বক্তব্য বাতিল।’ (শরহু সহিহ মুসলিম: ১/৮৯-৯০)

মৃত ব্যক্তির জন্য সওয়াব পাঠানোর বহু পদ্ধতি থাকলেও, দোয়া ও সদকা সবচেয়ে প্রমাণিত ও ফলপ্রসূ মাধ্যম। এই দুই আমল কোরআন-হাদিস দ্বারা সমর্থিত এবং উম্মাহর ইজমা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। প্রতিদিন আমরা আমাদের প্রিয় মৃতদের জন্য দোয়া করতে পারি এবং নিয়মিত সদকা করার মাধ্যমে তাদের রুহে সওয়াব পৌঁছাতে পারি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই কল্যাণময় আমলগুলো করার তাওফিক দিন। আমিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

মৃত ব্যক্তিকে সওয়াব পাঠানোর ২ শক্তিশালী উপায়

আপডেট সময় : ১১:৪১:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইসলামে মৃত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও সকল মুমিনের জন্য ঈসালে সওয়াব (সওয়াব পৌঁছানো) একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এতে মৃত ব্যক্তির কবরের জীবন ও আখেরাত কল্যাণময় হয়। নবীজি (স.) থেকে বহু হাদিসে এটির গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। মৃতব্যক্তিকে সওয়াব পাঠানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও উৎকৃষ্ট দুটি মাধ্যম হলো দোয়া ও সদকা।

১. দোয়া: মৃতের কল্যাণে শ্রেষ্ঠ উপায়
দোয়া এমন একটি আমল, যা জীবিত ব্যক্তি সরাসরি মৃত ব্যক্তির জন্য করতে পারে এবং তা আল্লাহর কাছে কবুল হলে মৃতের জন্য পরম উপকার বয়ে আনে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর যারা তাদের (মুহাজির ও আনসারদের) পরে এসেছে, তারা বলে-হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে এবং আমাদের পূর্ববর্তী ঈমানদার ভাইদেরকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা হাশর: ১০)

এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, পূর্ববর্তী মুমিনদের জন্য দোয়া করা পুণ্যময় ও প্রশংসনীয়।

হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমরা যখন মাইয়িতের জানাজার নামাজ পড়ো, তখন তার জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া করো।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৩১৯৯) দাফনের পর নবীজি (স.) বলতেন- ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য মাগফিরাত চাও এবং তার স্থিরতা কামনা করো। কারণ এখন তাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৩২২১) নবী (স.) নিজেও মৃতব্যক্তির জন্য দোয়া করতেন। (সহিহ মুসলিম: ৯২০)

এমন আরও বহু হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়- মৃত ব্যক্তির জন্য জীবিতদের দোয়া অত্যন্ত উপকারী।

২. সদকা: মৃতের জন্য স্থায়ী সওয়াবের উৎস
সদকা (দান) এমন একটি আমল, যার সওয়াব জীবিত ব্যক্তি নিজে গ্রহণ করতে পারে, আবার মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যেও পৌঁছাতে পারে। সাদ ইবনে উবাদা (রা.) বলেন, ‘আমার অনুপস্থিতিতে আমার মা ইন্তেকাল করেছেন। আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তাহলে কি উপকার হবে?’ রাসুল (স.) বলেন- ‘হ্যাঁ।’ (সহিহ বুখারি: ২৭৫৬)

আরেক সাহাবি জানতে চাইলেন- ‘আমার মা হঠাৎ মারা গেছেন। তিনি যদি সুযোগ পেতেন, সদকা করতেন। আমি তার পক্ষ থেকে সদকা করলে কি সওয়াব পাবেন?’ নবীজি (স.) বললেন- ‘হ্যাঁ।’ (সহিহ মুসলিম: ১০০৪)

আস ইবনে ওয়ায়েল জাহেলি যুগে একশ উট জবাই করার মানত করেছিল। অতপর (তার ছেলে) হিশাম তার পক্ষ থেকে ৫০টি উট জবাই করে। (বাকি ৫০টি অপর ছেলে আমর জবাই করতে চান।) এ ব্যাপারে তিনি নবী (স.)-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তোমার পিতা যদি তাওহিদ স্বীকার করত আর তুমি তার পক্ষ থেকে রোজা রাখতে বা সদকা করতে, তবে এটি তার কাজে আসত।’ (মুসনাদে আহমদ: ৬৭০৪)

ইমাম নববির (রহ.) বলেন- ‘দোয়া ও সদকার সওয়াব মৃত ব্যক্তির কাছে পৌঁছায়—এটি ইজমা তথা সর্বসম্মত বিষয়। এতে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মধ্যে কোনো মতভেদ নেই।’ (শরহু সহিহ মুসলিম: ১১/৮৫)

তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করতে চায়, সে যেন তাদের পক্ষ থেকে সদকা করে। সদকা মাইয়িতের কাছে পৌঁছায় এবং উপকারে আসে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যারা এর বিপরীত মত দেয়, তাদের বক্তব্য বাতিল।’ (শরহু সহিহ মুসলিম: ১/৮৯-৯০)

মৃত ব্যক্তির জন্য সওয়াব পাঠানোর বহু পদ্ধতি থাকলেও, দোয়া ও সদকা সবচেয়ে প্রমাণিত ও ফলপ্রসূ মাধ্যম। এই দুই আমল কোরআন-হাদিস দ্বারা সমর্থিত এবং উম্মাহর ইজমা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। প্রতিদিন আমরা আমাদের প্রিয় মৃতদের জন্য দোয়া করতে পারি এবং নিয়মিত সদকা করার মাধ্যমে তাদের রুহে সওয়াব পৌঁছাতে পারি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই কল্যাণময় আমলগুলো করার তাওফিক দিন। আমিন।