ঢাকা ০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করল তালেবান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৩:৫৯:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৫ বার পড়া হয়েছে

আফগানিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি থেকে নারীদের লেখা বই সরিয়ে দিয়েছে তালেবান সরকার। মানবাধিকার ও যৌন হয়রানি বিষয়ক পাঠদানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। খবর বিবিসির।

‘শরিয়াবিরোধী ও তালেবান নীতির পরিপন্থী’ বলে চিহ্নিত করা ওই তালিকার মোট বইয়ের সংখ্যা ৬৮০টি। এর মধ্যে নারীদের লেখা প্রায় ১৪০টি বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ‘সেফটি ইন দ্য কেমিক্যাল ল্যাবরেটরি’ এর মতো শিরোনামের বইও।

এছাড়াও আরও ১৮টি বিষয় আর পড়ানো যাবে না বলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তালেবানের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এসব বিষয় ‘শরিয়াহ ও কাঠামোর নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক’।

চার বছর আগে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে একের পর এক জারি করা বিধিনিষেধের নতুন সংযোজন এটি।

চলতি সপ্তাহেই তালেবান শীর্ষ নেতার আদেশে দেশটির অন্তত ১০টি প্রদেশে ফাইবার-অপটিক ইন্টারনেট নিষিদ্ধ হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, ‘অনৈতিকতা’ ঠেকাতেই এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

এসব নিয়মকানুন দেশটির সাধারণ মানুষের জীবনে নানান প্রভাব ফেলছে। এর মধ্যেও নারী ও কন্যাশিশুরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখন ষষ্ঠ শ্রেণির পর তারা আর পড়তে পারছে না। যেসব বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ বা পড়ার উপায় ছিল তার মধ্যে একটি ২০২৪ সালের শেষদিকে ছেঁটে ফেলা হয়, সেসময় ধাত্রীবিদ্যা সংক্রান্ত কোর্সগুলো নিঃশব্দে বন্ধ হয়ে যায়।

এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী সংশ্লিষ্ট পাঠ্যবিষয়গুলোকে নিশানা বানানো হল। যে ১৮টি পাঠ্যবিষয় পড়াতে না করা হয়েছে, তার মধ্যে ‘জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’, ‘দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন’ ও ‘উইমেন্স সোশিওলজি’সহ ৬টির সঙ্গেই নারীর যোগ আছে।

তালেবান সরকার বলছে, তারা নারীর অধিকারকে সম্মান করে, তবে সেটি অবশ্যই হতে হবে তাদের ভাষায় আফগান সংস্কৃতি ও ইসলামী আইন অনুযায়ী।

বই পর্যালোচনাকারী কমিটির এক সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।

“নারীদের লেখা কোনো বই পড়ানোর সুযোগ থাকছে না,” বিবিসিকে এমনটাই বলেছেন তিনি।

তালেবান ক্ষমতায় ফেরার আগে আফগানিস্তানের ন্যায়বিচার মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা জাকিয়া আদেলি নতুন এ নিষেধাজ্ঞায় মোটেও বিস্মিত হননি। যাদের বই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে তার বইও আছে।

“গত চার বছর তালেবান যা করেছে তা বিবেচনায় নিলে তারা যে পাঠ্যক্রমেও হাত দেবে এটা বুঝতে খুব দুরদর্শী হতে হয় না। তাদের যে নারীবিদ্বেষী মনোভাব ও নীতি, সে অনুযায়ী নারীদের পড়তে না দেওয়া, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি, ভাবনা ও লেখালেখি চাপিয়ে রাখাই স্বাভাবিক,” বলেছেন তিনি।

পাঠ্যক্রম বিষয়ক তালেবানের এ নতুন নির্দেশনা অগাস্টের শেষদিকে জারি হয়েছে। নির্দেশনাটি দেখেছে বিবিসি।

‘ধর্মীয় পণ্ডিত ও বিশেষজ্ঞদের’ একটি প্যানেল এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো এক চিঠিতে এমনটাই বলেছেন তালেবান সরকারের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠ্যবিষয়ক উপপরিচালক জিয়াউর রহমান আইয়ুবি।

কেবল নারীদের লেখা বই-ই নয়, ইরানি লেখক বা প্রকাশকদের বইও তালেবান নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে বলেই মনে হচ্ছে।

‘আফগান সংস্কৃতিতে ইরানি উপাদানের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে’ এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বই পর্যালোচনা প্যানেলের এক সদস্য।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৫০ পৃষ্ঠার একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে, যাতে নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া মোট ৬৭৯টি বইয়ের নাম আছে। এর মধ্যে ৩১০টিরই লেখক হয় ইরানি, নয়তো সেগুলো ইরানে ছাপা হয়েছে।

এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধ্যাপক বলছেন, যেসব বই নিষিদ্ধ হয়েছে, সেগুলোর অভাব পূরণ হবে না বলেই তিনি আশঙ্কা করছেন।

“ইরানি লেখক ও অনুবাদকদের বই আফগান বিশ্ববিদ্যালয় ও বৈশ্বিক অ্যাকাডেমিক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রধান সংযোগকারীর ভূমিকা পালন করতো। সেগুলো সরিয়ে নেয়ায় এখন উচ্চশিক্ষায় বড় ধরনের শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে,” বলেছেন তিনি।

এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকদেরই বাধ্য হয়ে পাঠ্যবইয়ের অধ্যায় প্রস্তুত করতে হবে, তালেবান সরকারের বিধিনিষেধ অনুযায়ী কী করা যাবে, আর কী যাবে না, তাও মাথায় রাখতে হবে, বিবিসিকে বলেছেন কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক।

কিন্তু আফগান শিক্ষকদের লেখা সেসব অধ্যায় বৈশ্বিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে কিনা সে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

এসব নিয়ে মন্তব্য চেয়ে বিবিসি তালেবান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও এখন পর্যন্ত সাড়া পায়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করল তালেবান

আপডেট সময় : ০৩:৫৯:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আফগানিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি থেকে নারীদের লেখা বই সরিয়ে দিয়েছে তালেবান সরকার। মানবাধিকার ও যৌন হয়রানি বিষয়ক পাঠদানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। খবর বিবিসির।

‘শরিয়াবিরোধী ও তালেবান নীতির পরিপন্থী’ বলে চিহ্নিত করা ওই তালিকার মোট বইয়ের সংখ্যা ৬৮০টি। এর মধ্যে নারীদের লেখা প্রায় ১৪০টি বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ‘সেফটি ইন দ্য কেমিক্যাল ল্যাবরেটরি’ এর মতো শিরোনামের বইও।

এছাড়াও আরও ১৮টি বিষয় আর পড়ানো যাবে না বলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তালেবানের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এসব বিষয় ‘শরিয়াহ ও কাঠামোর নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক’।

চার বছর আগে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে একের পর এক জারি করা বিধিনিষেধের নতুন সংযোজন এটি।

চলতি সপ্তাহেই তালেবান শীর্ষ নেতার আদেশে দেশটির অন্তত ১০টি প্রদেশে ফাইবার-অপটিক ইন্টারনেট নিষিদ্ধ হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, ‘অনৈতিকতা’ ঠেকাতেই এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

এসব নিয়মকানুন দেশটির সাধারণ মানুষের জীবনে নানান প্রভাব ফেলছে। এর মধ্যেও নারী ও কন্যাশিশুরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখন ষষ্ঠ শ্রেণির পর তারা আর পড়তে পারছে না। যেসব বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ বা পড়ার উপায় ছিল তার মধ্যে একটি ২০২৪ সালের শেষদিকে ছেঁটে ফেলা হয়, সেসময় ধাত্রীবিদ্যা সংক্রান্ত কোর্সগুলো নিঃশব্দে বন্ধ হয়ে যায়।

এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী সংশ্লিষ্ট পাঠ্যবিষয়গুলোকে নিশানা বানানো হল। যে ১৮টি পাঠ্যবিষয় পড়াতে না করা হয়েছে, তার মধ্যে ‘জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’, ‘দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন’ ও ‘উইমেন্স সোশিওলজি’সহ ৬টির সঙ্গেই নারীর যোগ আছে।

তালেবান সরকার বলছে, তারা নারীর অধিকারকে সম্মান করে, তবে সেটি অবশ্যই হতে হবে তাদের ভাষায় আফগান সংস্কৃতি ও ইসলামী আইন অনুযায়ী।

বই পর্যালোচনাকারী কমিটির এক সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।

“নারীদের লেখা কোনো বই পড়ানোর সুযোগ থাকছে না,” বিবিসিকে এমনটাই বলেছেন তিনি।

তালেবান ক্ষমতায় ফেরার আগে আফগানিস্তানের ন্যায়বিচার মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা জাকিয়া আদেলি নতুন এ নিষেধাজ্ঞায় মোটেও বিস্মিত হননি। যাদের বই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে তার বইও আছে।

“গত চার বছর তালেবান যা করেছে তা বিবেচনায় নিলে তারা যে পাঠ্যক্রমেও হাত দেবে এটা বুঝতে খুব দুরদর্শী হতে হয় না। তাদের যে নারীবিদ্বেষী মনোভাব ও নীতি, সে অনুযায়ী নারীদের পড়তে না দেওয়া, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি, ভাবনা ও লেখালেখি চাপিয়ে রাখাই স্বাভাবিক,” বলেছেন তিনি।

পাঠ্যক্রম বিষয়ক তালেবানের এ নতুন নির্দেশনা অগাস্টের শেষদিকে জারি হয়েছে। নির্দেশনাটি দেখেছে বিবিসি।

‘ধর্মীয় পণ্ডিত ও বিশেষজ্ঞদের’ একটি প্যানেল এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো এক চিঠিতে এমনটাই বলেছেন তালেবান সরকারের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠ্যবিষয়ক উপপরিচালক জিয়াউর রহমান আইয়ুবি।

কেবল নারীদের লেখা বই-ই নয়, ইরানি লেখক বা প্রকাশকদের বইও তালেবান নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে বলেই মনে হচ্ছে।

‘আফগান সংস্কৃতিতে ইরানি উপাদানের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে’ এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বই পর্যালোচনা প্যানেলের এক সদস্য।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৫০ পৃষ্ঠার একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে, যাতে নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া মোট ৬৭৯টি বইয়ের নাম আছে। এর মধ্যে ৩১০টিরই লেখক হয় ইরানি, নয়তো সেগুলো ইরানে ছাপা হয়েছে।

এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধ্যাপক বলছেন, যেসব বই নিষিদ্ধ হয়েছে, সেগুলোর অভাব পূরণ হবে না বলেই তিনি আশঙ্কা করছেন।

“ইরানি লেখক ও অনুবাদকদের বই আফগান বিশ্ববিদ্যালয় ও বৈশ্বিক অ্যাকাডেমিক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রধান সংযোগকারীর ভূমিকা পালন করতো। সেগুলো সরিয়ে নেয়ায় এখন উচ্চশিক্ষায় বড় ধরনের শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে,” বলেছেন তিনি।

এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকদেরই বাধ্য হয়ে পাঠ্যবইয়ের অধ্যায় প্রস্তুত করতে হবে, তালেবান সরকারের বিধিনিষেধ অনুযায়ী কী করা যাবে, আর কী যাবে না, তাও মাথায় রাখতে হবে, বিবিসিকে বলেছেন কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক।

কিন্তু আফগান শিক্ষকদের লেখা সেসব অধ্যায় বৈশ্বিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে কিনা সে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

এসব নিয়ে মন্তব্য চেয়ে বিবিসি তালেবান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও এখন পর্যন্ত সাড়া পায়নি।