ঢাকা ১২:৫১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুরনো মডেল ‘ক্রলিং পেগ’ বাস্তবায়নে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ০১:৫৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৯ বার পড়া হয়েছে
    ‘মন্দ বৈদেশিক মুদ্রায়’ ব্যবহার হয় ক্রলিং পেগ
    প্রথম চালু হয় আশির দশকে
    স্থায়ী সমাধান নয় বলছেন বিশেষজ্ঞরা
    ইতিবাচক অবস্থান আইএমএফ’র
    দেশে ডলারের বাজার টালমাটাল। উদ্ভূত এই পরিস্থিতি ঠেকাতে ‘ক্রলিং পেগ’ বাস্তবায়নে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর বাস্তবায়নে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

    ক্রলিং পেগ কী
    ক্রলিং পেগ হলো একটি আর্থিক ব্যবস্থা, যা জাতীয় মুদ্রা বিনিময় হারকে একটি নির্দিষ্ট পরিসরে (ব্যান্ড) ওঠানামা করতে দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যান্ডের বাইরে চলে যাওয়া থেকে বিনিময় হার রাখতে চেষ্টা করে।

    অর্থাৎ দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয় পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে একটি মুদ্রার বিনিময় হারকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করতে দেয়। এক্ষেত্রে মুদ্রার দরের একটি সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করা থাকে।

    কলিং পেগ বেশ পুরনো মডেল। যা আশির দশকে চালু হয়। সাধারণ যেসব দেশের বৈদেশিক মুদ্রা খারাপ অবস্থায় থাকে সেসব দেশে ক্রলিং পেগ বাস্তবায়ন করা হয়। বর্তমানে কিছুসংখ্যক দেশে তা চালু থাকলেও বাস্তবায়ন নেই বলে জানা যায়।

    আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে যা জানা যায়
    সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক হয় আইএমএফের প্রতিনিধিদলের। এতে ক্রলিং পেগ চালুর বিষয়ে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন ও পর্যালোচনা হয়। পরে প্রাথমিকভাবে এই পদ্ধতি চালুর জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে।

    গভর্নরের পক্ষ থেকে জানানো হয়— সবকিছু ঠিক থাকলে সরকারের সর্বোচ্চ মহলে আলোচনা করে আগামী অর্থবছর থেকেই বাস্তবায়ন করা হবে এই পদ্ধতি।

    সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো উপায় না পেয়ে ক্রলিং পেগের উপর নির্ভর করা হচ্ছে। এই পদ্ধতি প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। এরপর বিভিন্ন দেশের মডেল কীভাবে ক্রলিং পেগকে নিয়ন্ত্রণ করত সেসব বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে। তবে ডলারের বাজার পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে এই পদ্ধতি স্থায়ী করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

    কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
    তবে ডলার সংকট ও বাজার পরিস্থিতির বেসামাল অবস্থা নিয়ন্ত্রণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতিকে স্থায়ী সমাধান বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক এই কর্মকর্তা বলছেন— উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানে ক্রলিং পেগ সাময়িকভাবে কাজে আসতে পারে। তবে এটি টেকসই বা স্থায়ী কোনো সমাধান নয়।

    ড. আহসান এইচ মনসুরের মতে— ডলার সংকট এখনও রয়ে গেছে। এর পেছনে বড় কারণ হলো ডলারের রেট বাজারভিত্তিক না করা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গায়ের জোরে ডলারের দাম নির্ধারণ করলেও একটা পর্যায়ে বাজারের ওপরই ছেড়ে দিতে হবে।

    ঢাকায় আইএমএফের বিশেষ প্রতিনিধিদল
    বেশকিছু এজেন্ডা নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছে আইএমএফের বিশেষ প্রতিনিধিদল। বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সফরের প্রথম বৈঠক করেছে তারা। এতে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ব্যালেন্স অব পেমেন্ট সূচকের উন্নতি ও পরবর্তী (২০২৪-২৫) অর্থবছরের পূর্বাভাস নিয়ে আলোচনা হয়।

    বুধবারের বৈঠকটি ছাড়াও আইএমএফের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আরও তিনটি বৈঠক হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের। মুদ্রানীতি কমিটি, ব্যাংকিং সুপারভিশন কমিটি এবং সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এসব বৈঠক হয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে মূল্যস্ফীতি, সুদহার, বিনিময় হার নিয়ে আলোচনা হয়।

    সূত্র বলছে— বৈঠকে আর্থিক খাত সংস্কার, খেলাপি ঋণ, সুদের হার বাস্তবায়ন, মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি, বিদেশি বাণিজ্যের ভারসাম্য ও আউটলুক, মুদ্রা বাজার ও তারল্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে সুদের হার বৃদ্ধিসহ গৃহীত পদক্ষেপের তথ্য সংগ্রহ করেছে সংস্থাটি।

    একই সঙ্গে রিজার্ভ পরিস্থিতি, ডলারের বিদ্যমান রেট, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক লেনদেন বিষয়ে হালনাগাদ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ জানতে চেয়েছে।

    এছাড়াও ব্যাংক খাতের সংস্কার, একীভূতকরণের পদক্ষেপ, রাজস্ব সংক্রান্ত পরামর্শের অগ্রগতির বিষয়ে প্রতিবেদন নিয়েছে আইএমএফ। এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও পর্যবেক্ষণে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অংশীজনদের সঙ্গে সংস্থাটি সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি চলমান।

    তবে প্রথমদিনের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য সংস্থার গৃহীত পদক্ষেপকে যথাযথ বলে জানিয়েছেন দাতাসংস্থটির সদস্যরা।

    ঋণ ছাড়ের শর্ত বাস্তবায়ন
    এর আগে ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ ছাড়ের শর্ত হিসেবে ৪৭টি সংস্কার প্রস্তাব করে আইএমএফ। যার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র।

    মূলত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে স্মার্ট পদ্ধতিতে সুদের হার নির্ধারণ, রিজার্ভের লক্ষ্য পূরণ, বাজারভিত্তিক ডলারের রেট করা, ক্রলিং পেগের মাধ্যমে ডলার লেনদেন, জিডিপির তুলনায় রাজস্ব আদায়ের অনুপাত বৃদ্ধি, ব্যাংক খাতের সংস্কার, একীভূতকরণ নীতিমালা এবং বৈদেশিক বাণিজ্যিক লেনদেনসহ সামষ্টিক অর্থনীতির রিভিউ সংক্রান্ত বিষয়াবলির ওপর আলোচনা করেছেন। এরপর প্রথম দিনের আলোচনায় গৃহীত পদক্ষপে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন আইএমসএফের প্রতিনিধিরা।

    এর আগে গেল ১৮ এপ্রিল ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি সেভাবে হয়নি। সময় এসেছে, বাংলাদেশকে এখন মুদ্রার নমনীয় বিনিময় হারের দিকে যেতে হবে।

    কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য কী বলছে?
    বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে— গেল বুধবার গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের পরামর্শে বিপিএম-৬ অনুযায়ী হিসাবে তা ১৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। এটি অবশ্য প্রকৃত রিজার্ভ নয়। আর প্রকৃত ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ বের করতে বিপিএম ম্যানুয়াল থেকে চলতি দায় বাবাদ আকু বিল, বৈদেশিক পাওনা, প্রকল্প বকেয়া বিল এবং বিশেষ পরিপূরক মুদ্রার (এসডিআর) বকেয়া হিসাবে ৫ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। সেই হিসাবে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার।

    বাংরাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে গড় আমদানি ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ৫ দশমিক ২০ বিলিয়ন এবং মার্চে ৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার।

    চলতি ক্যালেন্ডার বর্ষের মার্চ মাসেও প্রকৃত রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ। মার্চ শেষে প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা ১৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু বাস্তবে ছিল প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের জুনে ২৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও নিট রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

পুরনো মডেল ‘ক্রলিং পেগ’ বাস্তবায়নে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক

আপডেট সময় : ০১:৫৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
    ‘মন্দ বৈদেশিক মুদ্রায়’ ব্যবহার হয় ক্রলিং পেগ
    প্রথম চালু হয় আশির দশকে
    স্থায়ী সমাধান নয় বলছেন বিশেষজ্ঞরা
    ইতিবাচক অবস্থান আইএমএফ’র
    দেশে ডলারের বাজার টালমাটাল। উদ্ভূত এই পরিস্থিতি ঠেকাতে ‘ক্রলিং পেগ’ বাস্তবায়নে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর বাস্তবায়নে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

    ক্রলিং পেগ কী
    ক্রলিং পেগ হলো একটি আর্থিক ব্যবস্থা, যা জাতীয় মুদ্রা বিনিময় হারকে একটি নির্দিষ্ট পরিসরে (ব্যান্ড) ওঠানামা করতে দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যান্ডের বাইরে চলে যাওয়া থেকে বিনিময় হার রাখতে চেষ্টা করে।

    অর্থাৎ দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয় পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে একটি মুদ্রার বিনিময় হারকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করতে দেয়। এক্ষেত্রে মুদ্রার দরের একটি সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করা থাকে।

    কলিং পেগ বেশ পুরনো মডেল। যা আশির দশকে চালু হয়। সাধারণ যেসব দেশের বৈদেশিক মুদ্রা খারাপ অবস্থায় থাকে সেসব দেশে ক্রলিং পেগ বাস্তবায়ন করা হয়। বর্তমানে কিছুসংখ্যক দেশে তা চালু থাকলেও বাস্তবায়ন নেই বলে জানা যায়।

    আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে যা জানা যায়
    সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক হয় আইএমএফের প্রতিনিধিদলের। এতে ক্রলিং পেগ চালুর বিষয়ে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন ও পর্যালোচনা হয়। পরে প্রাথমিকভাবে এই পদ্ধতি চালুর জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে।

    গভর্নরের পক্ষ থেকে জানানো হয়— সবকিছু ঠিক থাকলে সরকারের সর্বোচ্চ মহলে আলোচনা করে আগামী অর্থবছর থেকেই বাস্তবায়ন করা হবে এই পদ্ধতি।

    সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো উপায় না পেয়ে ক্রলিং পেগের উপর নির্ভর করা হচ্ছে। এই পদ্ধতি প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। এরপর বিভিন্ন দেশের মডেল কীভাবে ক্রলিং পেগকে নিয়ন্ত্রণ করত সেসব বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে। তবে ডলারের বাজার পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে এই পদ্ধতি স্থায়ী করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

    কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
    তবে ডলার সংকট ও বাজার পরিস্থিতির বেসামাল অবস্থা নিয়ন্ত্রণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতিকে স্থায়ী সমাধান বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক এই কর্মকর্তা বলছেন— উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানে ক্রলিং পেগ সাময়িকভাবে কাজে আসতে পারে। তবে এটি টেকসই বা স্থায়ী কোনো সমাধান নয়।

    ড. আহসান এইচ মনসুরের মতে— ডলার সংকট এখনও রয়ে গেছে। এর পেছনে বড় কারণ হলো ডলারের রেট বাজারভিত্তিক না করা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গায়ের জোরে ডলারের দাম নির্ধারণ করলেও একটা পর্যায়ে বাজারের ওপরই ছেড়ে দিতে হবে।

    ঢাকায় আইএমএফের বিশেষ প্রতিনিধিদল
    বেশকিছু এজেন্ডা নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছে আইএমএফের বিশেষ প্রতিনিধিদল। বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সফরের প্রথম বৈঠক করেছে তারা। এতে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ব্যালেন্স অব পেমেন্ট সূচকের উন্নতি ও পরবর্তী (২০২৪-২৫) অর্থবছরের পূর্বাভাস নিয়ে আলোচনা হয়।

    বুধবারের বৈঠকটি ছাড়াও আইএমএফের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আরও তিনটি বৈঠক হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের। মুদ্রানীতি কমিটি, ব্যাংকিং সুপারভিশন কমিটি এবং সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এসব বৈঠক হয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে মূল্যস্ফীতি, সুদহার, বিনিময় হার নিয়ে আলোচনা হয়।

    সূত্র বলছে— বৈঠকে আর্থিক খাত সংস্কার, খেলাপি ঋণ, সুদের হার বাস্তবায়ন, মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি, বিদেশি বাণিজ্যের ভারসাম্য ও আউটলুক, মুদ্রা বাজার ও তারল্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে সুদের হার বৃদ্ধিসহ গৃহীত পদক্ষেপের তথ্য সংগ্রহ করেছে সংস্থাটি।

    একই সঙ্গে রিজার্ভ পরিস্থিতি, ডলারের বিদ্যমান রেট, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক লেনদেন বিষয়ে হালনাগাদ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ জানতে চেয়েছে।

    এছাড়াও ব্যাংক খাতের সংস্কার, একীভূতকরণের পদক্ষেপ, রাজস্ব সংক্রান্ত পরামর্শের অগ্রগতির বিষয়ে প্রতিবেদন নিয়েছে আইএমএফ। এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও পর্যবেক্ষণে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অংশীজনদের সঙ্গে সংস্থাটি সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি চলমান।

    তবে প্রথমদিনের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য সংস্থার গৃহীত পদক্ষেপকে যথাযথ বলে জানিয়েছেন দাতাসংস্থটির সদস্যরা।

    ঋণ ছাড়ের শর্ত বাস্তবায়ন
    এর আগে ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ ছাড়ের শর্ত হিসেবে ৪৭টি সংস্কার প্রস্তাব করে আইএমএফ। যার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র।

    মূলত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে স্মার্ট পদ্ধতিতে সুদের হার নির্ধারণ, রিজার্ভের লক্ষ্য পূরণ, বাজারভিত্তিক ডলারের রেট করা, ক্রলিং পেগের মাধ্যমে ডলার লেনদেন, জিডিপির তুলনায় রাজস্ব আদায়ের অনুপাত বৃদ্ধি, ব্যাংক খাতের সংস্কার, একীভূতকরণ নীতিমালা এবং বৈদেশিক বাণিজ্যিক লেনদেনসহ সামষ্টিক অর্থনীতির রিভিউ সংক্রান্ত বিষয়াবলির ওপর আলোচনা করেছেন। এরপর প্রথম দিনের আলোচনায় গৃহীত পদক্ষপে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন আইএমসএফের প্রতিনিধিরা।

    এর আগে গেল ১৮ এপ্রিল ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি সেভাবে হয়নি। সময় এসেছে, বাংলাদেশকে এখন মুদ্রার নমনীয় বিনিময় হারের দিকে যেতে হবে।

    কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য কী বলছে?
    বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে— গেল বুধবার গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের পরামর্শে বিপিএম-৬ অনুযায়ী হিসাবে তা ১৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। এটি অবশ্য প্রকৃত রিজার্ভ নয়। আর প্রকৃত ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ বের করতে বিপিএম ম্যানুয়াল থেকে চলতি দায় বাবাদ আকু বিল, বৈদেশিক পাওনা, প্রকল্প বকেয়া বিল এবং বিশেষ পরিপূরক মুদ্রার (এসডিআর) বকেয়া হিসাবে ৫ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। সেই হিসাবে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার।

    বাংরাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে গড় আমদানি ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ৫ দশমিক ২০ বিলিয়ন এবং মার্চে ৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার।

    চলতি ক্যালেন্ডার বর্ষের মার্চ মাসেও প্রকৃত রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ। মার্চ শেষে প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা ১৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু বাস্তবে ছিল প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের জুনে ২৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও নিট রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।