ঢাকা ০১:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাগেরহাটের চিতলমারীতে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে তলাশূণ্য হচ্ছে

এস এম সাইফুল ইসলাম কবির. বাগেরহাট:
  • আপডেট সময় : ০৯:২৪:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ নভেম্বর ২০২৩ ১২৩ বার পড়া হয়েছে

বাগেরহাটের চিতলমারীতে ভূগর্ভস্থ থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। প্রশাসনের জরিমানার পরও উপজেলার ৭-৮ জন চিহ্নিত ড্রেজার (বালু উত্তোলনের মেশিন) মালিক ভূগর্ভ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন করছেন। ফলে চিতলমারী তলাশূণ্য হচ্ছে। পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। স্থানীয় পরিবেশবাদীরা অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী করেছেন। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করছে বলে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আসমত হোসেন জানিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে, দুটি পাইপ বালু তুলতে মাটির নিচে যায়। একটি পাইপ তলদেশের শুকনো বেলেমাটি পানি দিয়ে ভেজাতে থাকে এবং অন্য পাইপটি ভেজা মাটি চুষতে থাকে। ভূগর্ভস্থ এই চুষে নেওয়া পানি মেশানো মাটি পাইপের মাধ্যমে তোলা হয়। এই একটি যন্ত্র দিনে কয়েক হাজার ফুট ভূগর্ভস্থ মাটি তোলে। এ কারণে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ড্রেজারকে স্থানীয়রা ‘আত্মঘাতী’ বলে। এ রকম প্রায় অর্ধশত ড্রেজার মেশিন এ উপজেলায় রয়েছে। এ মেশিন দিয়ে উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নে ও টেকেরবাজার, চরডাকাতিয়া, খাসেরহাটসহ বিভিন্ন গ্রামে বেপরোয়া ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে সরকারী রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্টান, বাজার, ধর্মীয় উপসানালয় ও পরিবেশ হুমকীর মুখে পড়ছে। যত্রতত্র এই বালু উত্তোলন প্রতিরোধ করতে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলে পরিবেশবাদীরা মনে করেন।

স্থানীয় পরিবেশবাদী স্কুল শিক্ষক সাফায়েত হোসেন ও সাংবাদিক পংকজ মন্ডল জানান, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ৫-এর ১ উপধারা অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারী দুই বছরের কারাদন্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। চিতলমারীতে এ ধরণের কঠোর ব্যবস্থা নিলে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হবে।

উপকূলীয় এ অঞ্চলের বিশিষ্ট উন্নয়নকর্মী শাহাদত হোসেন বাচ্চু জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা ‘স্যান্ড মাফিয়া‘ নামে পরিচিত। এটা একই সঙ্গে পরিবেশ, সামাজিক ও বাস্তুসংস্থানজনিত সমস্যার সৃষ্টি করছে। নদীর তলদেশ ও পাড়ের কার্যক্ষমতা এবং স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ কমিয়ে দিচ্ছে।

চিতলমারী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন জানান, এভাবে ভূগর্ভস্থ থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনে চিতলমারী তলাশূণ্য হচ্ছে। চরম হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ।

চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসমত হোসেন বলেন, ভূগর্ভের বালি বা মাটি উত্তোলন করা নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বাগেরহাটের চিতলমারীতে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে তলাশূণ্য হচ্ছে

আপডেট সময় : ০৯:২৪:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ নভেম্বর ২০২৩

বাগেরহাটের চিতলমারীতে ভূগর্ভস্থ থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। প্রশাসনের জরিমানার পরও উপজেলার ৭-৮ জন চিহ্নিত ড্রেজার (বালু উত্তোলনের মেশিন) মালিক ভূগর্ভ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন করছেন। ফলে চিতলমারী তলাশূণ্য হচ্ছে। পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। স্থানীয় পরিবেশবাদীরা অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী করেছেন। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করছে বলে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আসমত হোসেন জানিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে, দুটি পাইপ বালু তুলতে মাটির নিচে যায়। একটি পাইপ তলদেশের শুকনো বেলেমাটি পানি দিয়ে ভেজাতে থাকে এবং অন্য পাইপটি ভেজা মাটি চুষতে থাকে। ভূগর্ভস্থ এই চুষে নেওয়া পানি মেশানো মাটি পাইপের মাধ্যমে তোলা হয়। এই একটি যন্ত্র দিনে কয়েক হাজার ফুট ভূগর্ভস্থ মাটি তোলে। এ কারণে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ড্রেজারকে স্থানীয়রা ‘আত্মঘাতী’ বলে। এ রকম প্রায় অর্ধশত ড্রেজার মেশিন এ উপজেলায় রয়েছে। এ মেশিন দিয়ে উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নে ও টেকেরবাজার, চরডাকাতিয়া, খাসেরহাটসহ বিভিন্ন গ্রামে বেপরোয়া ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে সরকারী রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্টান, বাজার, ধর্মীয় উপসানালয় ও পরিবেশ হুমকীর মুখে পড়ছে। যত্রতত্র এই বালু উত্তোলন প্রতিরোধ করতে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলে পরিবেশবাদীরা মনে করেন।

স্থানীয় পরিবেশবাদী স্কুল শিক্ষক সাফায়েত হোসেন ও সাংবাদিক পংকজ মন্ডল জানান, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ৫-এর ১ উপধারা অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারী দুই বছরের কারাদন্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। চিতলমারীতে এ ধরণের কঠোর ব্যবস্থা নিলে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হবে।

উপকূলীয় এ অঞ্চলের বিশিষ্ট উন্নয়নকর্মী শাহাদত হোসেন বাচ্চু জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা ‘স্যান্ড মাফিয়া‘ নামে পরিচিত। এটা একই সঙ্গে পরিবেশ, সামাজিক ও বাস্তুসংস্থানজনিত সমস্যার সৃষ্টি করছে। নদীর তলদেশ ও পাড়ের কার্যক্ষমতা এবং স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ কমিয়ে দিচ্ছে।

চিতলমারী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন জানান, এভাবে ভূগর্ভস্থ থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনে চিতলমারী তলাশূণ্য হচ্ছে। চরম হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ।

চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসমত হোসেন বলেন, ভূগর্ভের বালি বা মাটি উত্তোলন করা নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি।