গোদাগাড়ীতে সেচের পানির জন্য আবারো কৃষকের বিষপান
- আপডেট সময় : ০৯:০৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩ ১১২ বার পড়া হয়েছে
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে আলোচিত সেই বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের আওতায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের খেতে সেচের পানি না পেয়ে আবারও মুকুল সরেন (৩৫) নামের সাঁওতাল কৃষক বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। ওই কৃষক গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের বর্ষাপাড়া গ্রামের গোপাল সরেন এর ছেলে। বিষপানের পর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে চিকিৎসক জানিয়েছেন তিনি এখন শঙ্কামুক্ত।
রোববার (৯ এপ্রিল) দুপুরে আবারো এ বিষ পানের ঘটনা ঘটে। মুকুলের সরেনের বাড়ির পাশের গ্রামের নাম নিমঘটু। এই নিমঘুটু গ্রামে গত বছর মার্চ মাসে দুই সাঁওতাল কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তাঁর চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি গভীর নলকূপ থেকে বোরো ধানের ক্ষেতে সেচের পাানি না পেয়ে বিষপান করেছিলেন। এতে দুজনেরই মৃত্যু হয়। এ নিয়ে দেশ জুড়ে আলোড়নের সৃষ্টি হলেও আর যেন এঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই বিষয়ে বিএমডিএ অবহেলা থেকে যায়। তারই সাক্ষি আবারো সেচের পানি না পেয়ে কৃষকের বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুকুল সরেন জানান, চলতি মৌসুমে ওই গভীর নলকূপের আওতায় কৃষক সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। বোরো ধানের ক্ষেতে সেচের পানির জন্য তিনি এক সপ্তাহ ধরে গভীর নলকূপে অপারেটর হাসেম আলী বাবুর কাছে ঘুরছিলেন। কিন্তু নলকূপ অপারেটর হাসেম আলী বাবু তাকে পানি দিচ্ছিলেন না। রোববার দুপুরে তিনি আবার পানির জন্য যান। তখন বাবু তাকে এক বোতল বিষ দেন এবং এটা বাবুর জমিতেই দিয়ে আসতে বলেন। এ সময় মুকুল বলেন, পানি না দিলে তিনি এই বিষই খেয়ে নিবেন। তারপরও তার জমিতে পানি দেয়নি। তখন তিনি এই বিষ পান করেন। মুকুল বলেন, সম্প্রতি বৃষ্টির পর অন্য সব কৃষকের একাধিকবার পানি নেওয়া হয়েছে গভীর নলকূপ থেকে। কিন্তু ডিপ অপারেটর হাসেম আলী তাঁকেই শুধু পানি দিচ্ছিলেন না।
এ ঘটনার পর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিএমডিএর গভীর নলকুপের আওতা ভুক্ত কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, শুধু ওই ডিপে নয় প্রায় ডিপে ডিপ অপারেটর সেচের পানি নিয়ে কৃষকদের সাতে নানা রকম খারাপ আচারনসহ পানি না দিলেও বিএমডিএর কাছে অভিযোগ করে কোন ফল পাওয়া যায় না। তাই সাধারন কৃষকদের ডিপ অপারেটারদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হয়।
মুকুলের বিষপানের বিষয়ে জানতে চাইলে গভীর নলকূপের অপারেটর হাসেম আলী বাবু বলেন, ‘কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হয়েছে। তখন কেউ পানি নিতে আসেনি। এখন সবাই এসেছে একসাথে। আমার ডিপের মুখ একটা, সবাইকে তো একসাথে দিতে পারব না। গতকাল মুকুল মনে হয় চুয়ানি আর গাঁজা খেয়ে এসেছিল। এসে বলছে, পানি দিবি না তোকে সাখাওয়াতের মতো (আগের নলকূপ অপারেটর) জেল খাটাবো। তখন তার হাত থেকে একজন বিষের বোতল কেড়ে নিল। আমি বললাম, পানি দিচ্ছি, তুই জমিতে যা। কিন্তু সে বলছে, তুই আমার জমিতে গিয়ে দে। তারপর সে চলে গেল। বিষ খেয়েছে কি না জানি না।’
গত বছর মার্চ মাসে এই গভীর নলকূপ থেকে পানি না পেয়ে বিষপান করে দুই কৃষক আত্মহত্যা করলে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে তৎকালীন গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করা হয়। এরপর সাখাওয়াত গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এখন তিনি জামিনে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দুটির অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। ওই ঘটনার পর কৃষক লীগ নেতা সাখাওয়াতকে বাদ দিয়ে নতুন করে হাসেম আলীকে অপারেটর নিয়োগ দেয় বিএমডিএ।
এবারও কৃষকের বিষপানের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, ‘আবার বিষ খেয়েছে কেন? গতবছরের ঘটনার পর তো ওই ডিপের অপারেটরকে বাদ দিলাম। নতুন অপারেটর নিয়োগ দিলাম। আবার কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটলো? আমি হাসপাতালে গিয়ে এ ব্যাপারে কৃষক মুকুল সরেনের সাথে কথা বলব।’