ঢাকা ১১:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৯০ ভাগ কার্যকারিতা হারিয়েছে বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিক

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ০২:১০:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০৬ বার পড়া হয়েছে

দেশের প্রধান সংক্রমিত জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিক প্রায় ৯০ ভাগ কার্যকারিতা হারিয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক ডেসিমেশন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগ এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে।

গবেষণায় বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে কয়েকটি ব্যাকটেরিয়াকে ভবিষ্যতের আশঙ্কার কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশে হাসপাতালজনিত সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। জীবানুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিকের সংবেদনশীলতার রিপোর্ট (জানুয়ারি ২০২২ থেকে জুন ২০২৩) করা দেড় বছরের গবেষণার তথ্যে জানানো হয়, দেশের প্রধান সংক্রমিত জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিক প্রায় ৯০ ভাগ অকার্যকর হয়ে গেছে।

গবেষণা প্রবন্ধের অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১৯ সালে ব্যাকটেরিয়াজনিত এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্টেন্সে প্রায় ১৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে কয়েকটি ব্যাকটেরিয়াকে ভবিষ্যতের আশঙ্কা কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে। এগুলো হলো—MDR TB, Quinolone অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী টাইফয়েট, ESBL producing E.coli এবং Klebsiella সংক্রমণ এবং Carbapenam প্রতিরোধী Enterococci সংক্রমণ। এছাড়া বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া জনিত অসুখ, সেপসিস এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী প্রস্রাব সংক্রমণে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে বিশেষ সতর্কতা পালন করা উচিত। এছাড়াও হাসপাতালজনিত সংক্রমণের হার বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে।

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্ট মোকাবিলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের সক্ষমতা ও কার্যক্রম তুলে ধরেন বিএসএমএমইউ’র মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. চন্দন কুমার রায়। তিনি রোগীর নমুনায় ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, মাইক্রোব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের উপস্থিতি নির্ণয় ও শনাক্তকরণের বিভিন্ন ধরনের ল্যাবরেটরি পদ্ধতির বর্ণনা প্রদান করেন। একই সঙ্গে মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবরেটরিতে পরিচালিত সনাতন পদ্ধতির পাশাপাশি আধুনিক ও সয়ংক্রিয় জীবানু শনাক্তকরণ ও জীবানুর এ্যান্টিমাইক্রোরিয়াল রেজিস্ট্যান্ট নির্ণয়ের পদ্ধতিসমূহ তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএসএমএমইউ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কঠিন রোগে মানুষকে সেবা দিতে এবং মানুষকে বিদেশ না যেয়ে দেশেই চিকিৎসা নিতে। তাই ভবিষ্যতেও চিকিৎসা খাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং হবে।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নীরিক্ষা না করে রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, অযাচিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে মানুষ এখন প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৭০ হাজার লোক দেশে মারা যায় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের কারণে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০৫০ সালে গিয়ে দেখা যাবে করোনার থেকেও বেশি রোগী মারা যাবে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের কারণে।

হাসপাতালে দর্শনার্থীদের দ্বারা ও দর্শনার্থীরা রোগীদের দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, হাসপাতালে যাবেন রোগীকে দেখতে, একটু দূরে থেকে দেখতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় রোগীকে দেখতে হাসপাতালে এসে সাধারণ মানুষও রোগী হয়ে যায়। এটাকে ক্রস ইনফেকশন বলে। এজন্য হাসপাতালে আসলেও দ্রুত চলে যেতে হবে দর্শনার্থীদের।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

৯০ ভাগ কার্যকারিতা হারিয়েছে বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিক

আপডেট সময় : ০২:১০:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩

দেশের প্রধান সংক্রমিত জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিক প্রায় ৯০ ভাগ কার্যকারিতা হারিয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক ডেসিমেশন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগ এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে।

গবেষণায় বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে কয়েকটি ব্যাকটেরিয়াকে ভবিষ্যতের আশঙ্কার কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশে হাসপাতালজনিত সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। জীবানুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিকের সংবেদনশীলতার রিপোর্ট (জানুয়ারি ২০২২ থেকে জুন ২০২৩) করা দেড় বছরের গবেষণার তথ্যে জানানো হয়, দেশের প্রধান সংক্রমিত জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিক প্রায় ৯০ ভাগ অকার্যকর হয়ে গেছে।

গবেষণা প্রবন্ধের অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১৯ সালে ব্যাকটেরিয়াজনিত এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্টেন্সে প্রায় ১৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে কয়েকটি ব্যাকটেরিয়াকে ভবিষ্যতের আশঙ্কা কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে। এগুলো হলো—MDR TB, Quinolone অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী টাইফয়েট, ESBL producing E.coli এবং Klebsiella সংক্রমণ এবং Carbapenam প্রতিরোধী Enterococci সংক্রমণ। এছাড়া বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া জনিত অসুখ, সেপসিস এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী প্রস্রাব সংক্রমণে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে বিশেষ সতর্কতা পালন করা উচিত। এছাড়াও হাসপাতালজনিত সংক্রমণের হার বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে।

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্ট মোকাবিলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের সক্ষমতা ও কার্যক্রম তুলে ধরেন বিএসএমএমইউ’র মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. চন্দন কুমার রায়। তিনি রোগীর নমুনায় ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, মাইক্রোব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের উপস্থিতি নির্ণয় ও শনাক্তকরণের বিভিন্ন ধরনের ল্যাবরেটরি পদ্ধতির বর্ণনা প্রদান করেন। একই সঙ্গে মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবরেটরিতে পরিচালিত সনাতন পদ্ধতির পাশাপাশি আধুনিক ও সয়ংক্রিয় জীবানু শনাক্তকরণ ও জীবানুর এ্যান্টিমাইক্রোরিয়াল রেজিস্ট্যান্ট নির্ণয়ের পদ্ধতিসমূহ তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএসএমএমইউ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কঠিন রোগে মানুষকে সেবা দিতে এবং মানুষকে বিদেশ না যেয়ে দেশেই চিকিৎসা নিতে। তাই ভবিষ্যতেও চিকিৎসা খাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং হবে।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নীরিক্ষা না করে রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, অযাচিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে মানুষ এখন প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৭০ হাজার লোক দেশে মারা যায় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের কারণে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০৫০ সালে গিয়ে দেখা যাবে করোনার থেকেও বেশি রোগী মারা যাবে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের কারণে।

হাসপাতালে দর্শনার্থীদের দ্বারা ও দর্শনার্থীরা রোগীদের দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, হাসপাতালে যাবেন রোগীকে দেখতে, একটু দূরে থেকে দেখতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় রোগীকে দেখতে হাসপাতালে এসে সাধারণ মানুষও রোগী হয়ে যায়। এটাকে ক্রস ইনফেকশন বলে। এজন্য হাসপাতালে আসলেও দ্রুত চলে যেতে হবে দর্শনার্থীদের।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।