ঢাকা ০৯:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্ট্রোকের চিকিৎসা ও প্রতিরোধে করণীয়

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ১০:৪২:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ৭৮ বার পড়া হয়েছে

আধুনিক বিশ্বে অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্যঝুঁকি স্ট্রোক। এতে মৃত্যুর পাশাপাশি ক্রমেই বাড়ছে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার ঘটনা। তবে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় মৃত্যু ও পঙ্গুত্ববরণ অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব।

স্ট্রোকের চিকিৎসা

১. স্ট্রোক লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর থেকে প্রথম তিন থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা সময় খুবই ক্রিটিক্যাল। এই সময়ের মধ্যে বা তার আগে রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হলে মৃত্যুঝুঁকি অনেকটাই ঠেকানো সম্ভব। তবে এই সময়কাল একেকজন রোগীর স্বাস্থ্য পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। অনেকের তিন ঘণ্টায় যে ক্ষতি হয়, সেটা হয়ত আরেকজনের ক্ষেত্রে আরও পরে গিয়ে হতে পারে।

২. স্ট্রোক হয়ে গেলে চিকিৎসা অত্যন্ত জটিল। রোগীর উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। যদি খেতে না পারেন তবে নাকে নল দিয়ে খাবার ব্যবস্থা করা হয়। প্রস্রাব ও পায়খানা যাতে নিয়মিত হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে, প্রয়োজনে প্রস্রাবের রাস্তায় ক্যাথেটার দিতে হবে। চোখ, মুখ ও ত্বকের যত্ন নিতে হবে। বেডছোর প্রতিরোধ করার জন্য নিয়মিত পাশ ফেরাতে হবে।

৩. উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

৪. পাশাপাশি অনেক স্ট্রোক রোগীর হার্টের রোগ থাকে। এসব ক্ষেত্রে কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শের প্রয়োজন হয়।

৫. অন্যান্য চিকিৎসা স্ট্রোকের ধরন অনুযায়ী করা হয়। যেমন- ইশকেমিক স্ট্রোকের বেলায় এসপিরিন, ক্লোপিডগ্রিল জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। রক্তক্ষরণের কারণে স্ট্রোক হলে অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে।

৬. সব হাসপাতালেই থাকা উচিত একটি স্ট্রোক কেয়ার ইউনিট, যেখানে ডাক্তার, নার্স, থেরাপিস্ট এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞ সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে স্ট্রোক রোগীর চিকিৎসা দেবেন।

৭. একজন স্ট্রোক রোগীর প্রয়োজন হয় নিউরোলজিস্ট এবং নিউরোসার্জনের। অনেক স্ট্রোক রোগীর অপারেশন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

৮. অনেক রোগীর শ্বাসকষ্ট, বেডসোর সমস্যা দেখা দেয়। সুতরাং রেসপিরেটরি মেডিসিন স্পেশালিস্ট, প্লাস্টিক সার্জনসহ সবার সহযোগিতার প্রয়োজন হতে পারে।

৯. রোগীর অঙ্গ সঞ্চালন করে জড়তা কাটিয়ে তুলতে রিহ্যাবিলিটেশন বা পুনর্বাসনের জন্য ফিজিওথেরাপিস্ট প্রয়োজন হয়।

রোগী কথা বলতে না পারলে প্রয়োজন স্পিচ থেরাপিস্টের কাছে যেতে হবে।

১০. স্ট্রোক কেয়ার ইউনিট, সমন্বিত স্ট্রোক কেয়ার টিমের ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসায় আসবে সুফল, রোগী ও রোগীর স্বজন হবেন চিন্তামুক্ত, রোগী লাভ করবে আরোগ্য।

প্রতিরোধে করণীয়

১. স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য রোগ। স্ট্রোক ব্রেন বা মস্তিষ্কের কঠিন রোগ। ব্রেনের কোষগুলো একবার নষ্ট হলে পুনরায় পুরোপুরিভাবে কার্যকরী হয় না অথবা জন্মায় না। তাই চিকিৎসার চেয়ে এই রোগ প্রতিরোধই উত্তম।

২. স্ট্রোক হলে সুনির্দিষ্ট ও জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। গ্রামাঞ্চলে কিংবা শহরে যেকোনো হাসপাতালে এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব।

নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

৩. হৃৎপিণ্ডের রোগের চিকিৎসা, রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

৪. ধূমপান, মদ্যপান, মাদকদ্রব্য, তামাক পাতা ও জর্দা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৫. চর্বি ও শর্করাযুক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ফাস্টফুড, বাদাম, সন্দেশ-রসগোল্লা, দুধ-ঘি-পোলাও-বিরিয়ানি, পাঙ্গাশ-চিংড়ি-কাঁকড়া, গরু বা খাসির মাংস, নারিকেল বা নারিকেলযুক্ত খাবার ইত্যাদি কম খাওয়া উচিত।

৬. ফলমূল, শাকসবজি, অল্প ভাত, পাঙ্গাস-চিংড়ি-কাঁকড়া বাদে যেকোনো মাছ, মুরগি ও ডিম খেলে কোনো ক্ষতি হয় না।

৭. নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিন ৩০–৪০ মিনিট ঘাম ঝরিয়ে হাঁটতে হবে। বাড়তি ওজন কমাতে হবে।

সূত্র: অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও এমিরেটাস অধ্যাপক

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

স্ট্রোকের চিকিৎসা ও প্রতিরোধে করণীয়

আপডেট সময় : ১০:৪২:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩

আধুনিক বিশ্বে অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্যঝুঁকি স্ট্রোক। এতে মৃত্যুর পাশাপাশি ক্রমেই বাড়ছে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার ঘটনা। তবে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় মৃত্যু ও পঙ্গুত্ববরণ অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব।

স্ট্রোকের চিকিৎসা

১. স্ট্রোক লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর থেকে প্রথম তিন থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা সময় খুবই ক্রিটিক্যাল। এই সময়ের মধ্যে বা তার আগে রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হলে মৃত্যুঝুঁকি অনেকটাই ঠেকানো সম্ভব। তবে এই সময়কাল একেকজন রোগীর স্বাস্থ্য পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। অনেকের তিন ঘণ্টায় যে ক্ষতি হয়, সেটা হয়ত আরেকজনের ক্ষেত্রে আরও পরে গিয়ে হতে পারে।

২. স্ট্রোক হয়ে গেলে চিকিৎসা অত্যন্ত জটিল। রোগীর উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। যদি খেতে না পারেন তবে নাকে নল দিয়ে খাবার ব্যবস্থা করা হয়। প্রস্রাব ও পায়খানা যাতে নিয়মিত হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে, প্রয়োজনে প্রস্রাবের রাস্তায় ক্যাথেটার দিতে হবে। চোখ, মুখ ও ত্বকের যত্ন নিতে হবে। বেডছোর প্রতিরোধ করার জন্য নিয়মিত পাশ ফেরাতে হবে।

৩. উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

৪. পাশাপাশি অনেক স্ট্রোক রোগীর হার্টের রোগ থাকে। এসব ক্ষেত্রে কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শের প্রয়োজন হয়।

৫. অন্যান্য চিকিৎসা স্ট্রোকের ধরন অনুযায়ী করা হয়। যেমন- ইশকেমিক স্ট্রোকের বেলায় এসপিরিন, ক্লোপিডগ্রিল জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। রক্তক্ষরণের কারণে স্ট্রোক হলে অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে।

৬. সব হাসপাতালেই থাকা উচিত একটি স্ট্রোক কেয়ার ইউনিট, যেখানে ডাক্তার, নার্স, থেরাপিস্ট এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞ সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে স্ট্রোক রোগীর চিকিৎসা দেবেন।

৭. একজন স্ট্রোক রোগীর প্রয়োজন হয় নিউরোলজিস্ট এবং নিউরোসার্জনের। অনেক স্ট্রোক রোগীর অপারেশন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

৮. অনেক রোগীর শ্বাসকষ্ট, বেডসোর সমস্যা দেখা দেয়। সুতরাং রেসপিরেটরি মেডিসিন স্পেশালিস্ট, প্লাস্টিক সার্জনসহ সবার সহযোগিতার প্রয়োজন হতে পারে।

৯. রোগীর অঙ্গ সঞ্চালন করে জড়তা কাটিয়ে তুলতে রিহ্যাবিলিটেশন বা পুনর্বাসনের জন্য ফিজিওথেরাপিস্ট প্রয়োজন হয়।

রোগী কথা বলতে না পারলে প্রয়োজন স্পিচ থেরাপিস্টের কাছে যেতে হবে।

১০. স্ট্রোক কেয়ার ইউনিট, সমন্বিত স্ট্রোক কেয়ার টিমের ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসায় আসবে সুফল, রোগী ও রোগীর স্বজন হবেন চিন্তামুক্ত, রোগী লাভ করবে আরোগ্য।

প্রতিরোধে করণীয়

১. স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য রোগ। স্ট্রোক ব্রেন বা মস্তিষ্কের কঠিন রোগ। ব্রেনের কোষগুলো একবার নষ্ট হলে পুনরায় পুরোপুরিভাবে কার্যকরী হয় না অথবা জন্মায় না। তাই চিকিৎসার চেয়ে এই রোগ প্রতিরোধই উত্তম।

২. স্ট্রোক হলে সুনির্দিষ্ট ও জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। গ্রামাঞ্চলে কিংবা শহরে যেকোনো হাসপাতালে এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব।

নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

৩. হৃৎপিণ্ডের রোগের চিকিৎসা, রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

৪. ধূমপান, মদ্যপান, মাদকদ্রব্য, তামাক পাতা ও জর্দা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৫. চর্বি ও শর্করাযুক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ফাস্টফুড, বাদাম, সন্দেশ-রসগোল্লা, দুধ-ঘি-পোলাও-বিরিয়ানি, পাঙ্গাশ-চিংড়ি-কাঁকড়া, গরু বা খাসির মাংস, নারিকেল বা নারিকেলযুক্ত খাবার ইত্যাদি কম খাওয়া উচিত।

৬. ফলমূল, শাকসবজি, অল্প ভাত, পাঙ্গাস-চিংড়ি-কাঁকড়া বাদে যেকোনো মাছ, মুরগি ও ডিম খেলে কোনো ক্ষতি হয় না।

৭. নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিন ৩০–৪০ মিনিট ঘাম ঝরিয়ে হাঁটতে হবে। বাড়তি ওজন কমাতে হবে।

সূত্র: অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও এমিরেটাস অধ্যাপক