ঢাকা ১০:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বস্তি নেই গ্রাহকের, বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে এলপিজি

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ০৬:১০:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই ২০২৩ ৭৩ বার পড়া হয়েছে

রাজধানীর কমলাপুরের একটি দোকানে বুধবার (৬ জুলাই) তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম জানতে চাইলে বিক্রেতা জানালেন, এলপিজির ১২ কেজি একটি সিলিন্ডারের দাম ১৩০০ টাকা। অথচ তিনদিন আগেই ১২ কেজি একটি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৯৯ টাকা।

এভাবেই সারাদেশে ঠকছেন এলপিজির গ্রাহকরা। অথচ গত চার মাসের মধ্যে তিন মাসেই এলপিজির দাম কমেছে। কিন্তু গ্রাহক এর সুফল তেমন একটা পাচ্ছেন না। দেশের সর্বত্রই গ্রাহককে প্রতিটি এলপিজি সিলিন্ডার সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ২০০-৩০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। কিছু এলাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযান চালালেও তা খুবই সীমিত। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ইচ্ছামতো মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে।

বিক্রেতারা দোকানে সরকার নির্ধারিত দামের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখলেও কেউই সেই দামে বিক্রি করেন না। খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, তারা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে এলপিজি সিলিন্ডার কিনছেন। ফলে তাদের পক্ষে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব না।

অন্যদিকে গ্রাহকরা বলছেন, বেশি দাম নিলেও তাদের কিছু করার নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় ও জরুরি একটি পণ্য, তাই বাধ্য হয়েই বাড়তি দামেই কিনছেন তারা।গত সোমবার (৩ জুলাই) এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ওইদিন ভোক্তা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৭৫ টাকা কমিয়ে ৯৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা এতদিন ছিল ১ হাজার ৭৪ টাকা। সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৪০ টাকা, ১৫ কেজির সিলিন্ডারের ১ হাজার ২৪৮ টাকা, ১৬ কেজির সিলিন্ডার ১ হাজার ৩৩১ টাকা, ১৮ কেজির সিলিন্ডার ১ হাজার ৪৯৮ টাকা, ২০ কেজির সিলিন্ডার ১ হাজার ৬৬৪ টাকা, ২২ কেজির সিলিন্ডার ১ হাজার ৮৩১ টাকা এবং ২৫ কেজির সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৮০ টাকা।

বিইআরসি জানায়, সৌদি সিপি অনুযায়ী জুলাই মাসের জন্য ভোক্তা পর্যায়ে বেসরকারি এলপিজি ও অটোগ্যাসের মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। নতুন মূল্য সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

এর আগে জুন মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১৫৯ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ৭৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তার আগে মে মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৫৭ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ২৩৫ টাকা নির্ধারণ করে বিইআরসি। এপ্রিলে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ২৪৪ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ১৭৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

২০২১ সালের ১২ এপ্রিলের আগ পর্যন্ত এলপিজির দর ছিল কোম্পানিগুলোর ইচ্ছাধীন। তবে ওইদিন প্রথমবারের মতো দর ঘোষণা করে বিইআরসি। এরপর থেকে প্রতি মাসে এলপিজির দর ঘোষণা করে আসছে বিইআরসি।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩ জুলাই এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা হয় এবং ওইদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকেই কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু নতুন দাম ঘোষণার তিনদিন পরও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার।বুধবার রাজধানীর দক্ষিণ কমলাপুরের মেইন রোড সংলগ্ন বন্ধন এন্টারপ্রাইজে মূল্যতালিকায় ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৯৯৯ টাকা লেখা থাকলেও ক্রেতার কাছে দাম চাওয়া হচ্ছে ১৩০০ টাকা। সরকার নির্ধারিত দামের বিষয়ে বলা হলে বিক্রেতা বলেন, এগুলো আগের রেটে কেনা। নতুন দামের সিলিন্ডার এখনও আসেনি। তাই ৯৯৯ টাকায় দেওয়া সম্ভব না।

অথচ আগের দাম অর্থাৎ জুন মাসেও ১২ কেজির একটি সিলিন্ডারের দাম ছিল ১০৭৪ টাকা। অর্থাৎ আগের দামের থেকেও বেশি দামে বিক্রি করছেন তিনি।

একই এলাকার আশা স্যানেটারি অ্যান্ড নিলাভা গ্যাস স্টোরেও প্রতি ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম নেওয়া হচ্ছে ১২৫০ টাকা। সরকার নির্ধারিত দামের বিষয়ে তিনি বলেন, দাম কমানোর পর থেকে তো আর মালই পাইতাছি না। দুইদিন ধরে মাল দিচ্ছে না। ব্যবসা করাই কঠিন হয়ে গেছে।

পার্শ্ববর্তী মুগদা এলাকাতেও একই চিত্র দেখা গেছে। মুগদা এলাকার আবদুল জলিল স্যানেটারি দোকানেও ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম চাওয়া হয় ১১৫০ টাকা। আশপাশের বেশ কয়েকটি দোকান সবগুলোতেই ১১৫০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার। তাদের কথা একটাই— নতুন দামে এলপিজি পাওয়া যাচ্ছে না।

অবশ্য খুচরা বিক্রেতাদের অনেকেই আরও একটা কৌশল করছেন। বাসায় পৌঁছে দেওয়ার নাম করে নিচ্ছেন অতিরিক্ত দাম। যদিও দোকান থেকে নিতে চাইলেও সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করছেন না।এদিকে সরকার নির্ধারিত দামে এলপিজি সিলিন্ডার না পেয়ে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। মুগদা এলাকার বাসিন্দা আমজাদ বলেন, খবরে শুনছি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম কমছে। কিন্তু আমরা তো সেই কবে থেকেই ১২০০-১৩০০ টাকা দিয়ে সিলিন্ডার কিনছি। শুনলাম এখন নাকি ১২ কেজির সিলিন্ডার ১০০০ টাকা। কিন্তু আমার কাছে আজকেও দাম নিল ১২০০ টাকা। তাহলে দাম কামিয়ে দিয়ে লাভ কি হলো?

আরেক বাসিন্দা বলেন, দোকানদাররা যেই দামে সিলিন্ডার বিক্রি করে ওইটাই ফাইনাল। সরকার দাম কমিয়ে কোনো লাভ হয় না। আমাদেরকে বেশি দাম দিয়েই কিনতে হয়।

এদিকে ডিলাররা বলছেন, কোম্পানিগুলোই বাড়তি দাম নিচ্ছে। এছাড়া পরিবহণ খরচ বেশি পড়ে যাচ্ছে। তাই সরকারি দরে এলপিজি বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে এলপিজি গ্যাস ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির অর্থ সম্পাদক তাহের এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবু তাহের কোরাইশী ঢাকা মেইলকে বলেন, সরকার ডিলার-প্রাইস ঘোষণা করছে এবং আমরা কত টাকা কমিশন পাব সেই টাকাও ঘোষণা করেছে। সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে আমরা এখনও সেই দামে প্রোডাক্ট হাতে পাই নাই। বিইআরসি যে প্রাইসটা ঘোষণা করে ঠিক সেই দামেই কোম্পানিরা আমাদেরকে প্রোডাক্ট আনতে বলে। বরং অনেক সময় তার থেকে আরও বেশি দামে প্রোডাক্ট আনতে বলে। আমাদের কত টাকা কমিশন দেবে সেটা তারা বলে না। টার্গেট না মিললে কোনো কমিশনও দেয় না। এজন্যই মার্কেটে প্রাইসটা ঠিক থাকে না।LPG4তিনি আরও বলেন, এছাড়া মার্কেটে প্রোডাক্ট পাওয়া যায় না ঠিকমতো। আজকে অনেক দামি দামি কোম্পানিতে কোনো প্রোডাক্ট নাই। খুবই সীমিত প্রোডাক্ট। তারা বলছে, ডলার সংকটের কারণে মাল আনতে পারছি না। আমরা যদি একশটা চাই আমাদেরকে দেয় ২৫-৩০টা। যেই গাড়িতে আমি ১০০টা আনব। সেই গাড়িতে যদি আমি ২৫টা মাল নিয়ে আসি তাহলে তো পরিবহণ খরচও বেশি পড়ে যায়। তাহলে সরকারের নির্ধারিত দামে আমি কিভাবে প্রোডাক্ট সেল করব?

অপরদিকে সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও সেই দরে বিক্রি না করাকে ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বিইআরসির যথাযথ তদারকি না থাকার কারণে বেশি দাম নিচ্ছে।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, সরকার নির্ধারিত দরে বিক্রি না করে বিক্রেতারা অপরাধ করছে। তারা রীতিমতো স্বেচ্ছাচারিতা করছে। কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকি না থাকায় এই ধরনের প্রবণতা বাড়ছে। এসব নিয়ন্ত্রণে বিইআরসি ও ভোক্তা অধিকার সবারই তদারকি আরও বাড়ানো উচিত।

এ প্রসঙ্গে বিইআরসির চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, বেশি দর নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা সব জেলা প্রশাসক ও ভোক্তা অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য। কাল-পরশু থেকে আমরাও নামতেছি। দর নির্ধারণ করার সময় মালিকদের প্রতিনিধি থাকেন। তাদের দাম বেশি নেওয়া কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

স্বস্তি নেই গ্রাহকের, বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে এলপিজি

আপডেট সময় : ০৬:১০:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই ২০২৩

রাজধানীর কমলাপুরের একটি দোকানে বুধবার (৬ জুলাই) তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম জানতে চাইলে বিক্রেতা জানালেন, এলপিজির ১২ কেজি একটি সিলিন্ডারের দাম ১৩০০ টাকা। অথচ তিনদিন আগেই ১২ কেজি একটি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৯৯ টাকা।

এভাবেই সারাদেশে ঠকছেন এলপিজির গ্রাহকরা। অথচ গত চার মাসের মধ্যে তিন মাসেই এলপিজির দাম কমেছে। কিন্তু গ্রাহক এর সুফল তেমন একটা পাচ্ছেন না। দেশের সর্বত্রই গ্রাহককে প্রতিটি এলপিজি সিলিন্ডার সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ২০০-৩০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। কিছু এলাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযান চালালেও তা খুবই সীমিত। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ইচ্ছামতো মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে।

বিক্রেতারা দোকানে সরকার নির্ধারিত দামের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখলেও কেউই সেই দামে বিক্রি করেন না। খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, তারা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে এলপিজি সিলিন্ডার কিনছেন। ফলে তাদের পক্ষে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব না।

অন্যদিকে গ্রাহকরা বলছেন, বেশি দাম নিলেও তাদের কিছু করার নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় ও জরুরি একটি পণ্য, তাই বাধ্য হয়েই বাড়তি দামেই কিনছেন তারা।গত সোমবার (৩ জুলাই) এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ওইদিন ভোক্তা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৭৫ টাকা কমিয়ে ৯৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা এতদিন ছিল ১ হাজার ৭৪ টাকা। সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৪০ টাকা, ১৫ কেজির সিলিন্ডারের ১ হাজার ২৪৮ টাকা, ১৬ কেজির সিলিন্ডার ১ হাজার ৩৩১ টাকা, ১৮ কেজির সিলিন্ডার ১ হাজার ৪৯৮ টাকা, ২০ কেজির সিলিন্ডার ১ হাজার ৬৬৪ টাকা, ২২ কেজির সিলিন্ডার ১ হাজার ৮৩১ টাকা এবং ২৫ কেজির সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৮০ টাকা।

বিইআরসি জানায়, সৌদি সিপি অনুযায়ী জুলাই মাসের জন্য ভোক্তা পর্যায়ে বেসরকারি এলপিজি ও অটোগ্যাসের মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। নতুন মূল্য সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

এর আগে জুন মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১৫৯ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ৭৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তার আগে মে মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৫৭ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ২৩৫ টাকা নির্ধারণ করে বিইআরসি। এপ্রিলে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ২৪৪ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ১৭৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

২০২১ সালের ১২ এপ্রিলের আগ পর্যন্ত এলপিজির দর ছিল কোম্পানিগুলোর ইচ্ছাধীন। তবে ওইদিন প্রথমবারের মতো দর ঘোষণা করে বিইআরসি। এরপর থেকে প্রতি মাসে এলপিজির দর ঘোষণা করে আসছে বিইআরসি।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩ জুলাই এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা হয় এবং ওইদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকেই কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু নতুন দাম ঘোষণার তিনদিন পরও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার।বুধবার রাজধানীর দক্ষিণ কমলাপুরের মেইন রোড সংলগ্ন বন্ধন এন্টারপ্রাইজে মূল্যতালিকায় ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৯৯৯ টাকা লেখা থাকলেও ক্রেতার কাছে দাম চাওয়া হচ্ছে ১৩০০ টাকা। সরকার নির্ধারিত দামের বিষয়ে বলা হলে বিক্রেতা বলেন, এগুলো আগের রেটে কেনা। নতুন দামের সিলিন্ডার এখনও আসেনি। তাই ৯৯৯ টাকায় দেওয়া সম্ভব না।

অথচ আগের দাম অর্থাৎ জুন মাসেও ১২ কেজির একটি সিলিন্ডারের দাম ছিল ১০৭৪ টাকা। অর্থাৎ আগের দামের থেকেও বেশি দামে বিক্রি করছেন তিনি।

একই এলাকার আশা স্যানেটারি অ্যান্ড নিলাভা গ্যাস স্টোরেও প্রতি ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম নেওয়া হচ্ছে ১২৫০ টাকা। সরকার নির্ধারিত দামের বিষয়ে তিনি বলেন, দাম কমানোর পর থেকে তো আর মালই পাইতাছি না। দুইদিন ধরে মাল দিচ্ছে না। ব্যবসা করাই কঠিন হয়ে গেছে।

পার্শ্ববর্তী মুগদা এলাকাতেও একই চিত্র দেখা গেছে। মুগদা এলাকার আবদুল জলিল স্যানেটারি দোকানেও ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম চাওয়া হয় ১১৫০ টাকা। আশপাশের বেশ কয়েকটি দোকান সবগুলোতেই ১১৫০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার। তাদের কথা একটাই— নতুন দামে এলপিজি পাওয়া যাচ্ছে না।

অবশ্য খুচরা বিক্রেতাদের অনেকেই আরও একটা কৌশল করছেন। বাসায় পৌঁছে দেওয়ার নাম করে নিচ্ছেন অতিরিক্ত দাম। যদিও দোকান থেকে নিতে চাইলেও সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করছেন না।এদিকে সরকার নির্ধারিত দামে এলপিজি সিলিন্ডার না পেয়ে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। মুগদা এলাকার বাসিন্দা আমজাদ বলেন, খবরে শুনছি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম কমছে। কিন্তু আমরা তো সেই কবে থেকেই ১২০০-১৩০০ টাকা দিয়ে সিলিন্ডার কিনছি। শুনলাম এখন নাকি ১২ কেজির সিলিন্ডার ১০০০ টাকা। কিন্তু আমার কাছে আজকেও দাম নিল ১২০০ টাকা। তাহলে দাম কামিয়ে দিয়ে লাভ কি হলো?

আরেক বাসিন্দা বলেন, দোকানদাররা যেই দামে সিলিন্ডার বিক্রি করে ওইটাই ফাইনাল। সরকার দাম কমিয়ে কোনো লাভ হয় না। আমাদেরকে বেশি দাম দিয়েই কিনতে হয়।

এদিকে ডিলাররা বলছেন, কোম্পানিগুলোই বাড়তি দাম নিচ্ছে। এছাড়া পরিবহণ খরচ বেশি পড়ে যাচ্ছে। তাই সরকারি দরে এলপিজি বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে এলপিজি গ্যাস ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির অর্থ সম্পাদক তাহের এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবু তাহের কোরাইশী ঢাকা মেইলকে বলেন, সরকার ডিলার-প্রাইস ঘোষণা করছে এবং আমরা কত টাকা কমিশন পাব সেই টাকাও ঘোষণা করেছে। সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে আমরা এখনও সেই দামে প্রোডাক্ট হাতে পাই নাই। বিইআরসি যে প্রাইসটা ঘোষণা করে ঠিক সেই দামেই কোম্পানিরা আমাদেরকে প্রোডাক্ট আনতে বলে। বরং অনেক সময় তার থেকে আরও বেশি দামে প্রোডাক্ট আনতে বলে। আমাদের কত টাকা কমিশন দেবে সেটা তারা বলে না। টার্গেট না মিললে কোনো কমিশনও দেয় না। এজন্যই মার্কেটে প্রাইসটা ঠিক থাকে না।LPG4তিনি আরও বলেন, এছাড়া মার্কেটে প্রোডাক্ট পাওয়া যায় না ঠিকমতো। আজকে অনেক দামি দামি কোম্পানিতে কোনো প্রোডাক্ট নাই। খুবই সীমিত প্রোডাক্ট। তারা বলছে, ডলার সংকটের কারণে মাল আনতে পারছি না। আমরা যদি একশটা চাই আমাদেরকে দেয় ২৫-৩০টা। যেই গাড়িতে আমি ১০০টা আনব। সেই গাড়িতে যদি আমি ২৫টা মাল নিয়ে আসি তাহলে তো পরিবহণ খরচও বেশি পড়ে যায়। তাহলে সরকারের নির্ধারিত দামে আমি কিভাবে প্রোডাক্ট সেল করব?

অপরদিকে সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও সেই দরে বিক্রি না করাকে ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বিইআরসির যথাযথ তদারকি না থাকার কারণে বেশি দাম নিচ্ছে।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, সরকার নির্ধারিত দরে বিক্রি না করে বিক্রেতারা অপরাধ করছে। তারা রীতিমতো স্বেচ্ছাচারিতা করছে। কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকি না থাকায় এই ধরনের প্রবণতা বাড়ছে। এসব নিয়ন্ত্রণে বিইআরসি ও ভোক্তা অধিকার সবারই তদারকি আরও বাড়ানো উচিত।

এ প্রসঙ্গে বিইআরসির চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, বেশি দর নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা সব জেলা প্রশাসক ও ভোক্তা অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য। কাল-পরশু থেকে আমরাও নামতেছি। দর নির্ধারণ করার সময় মালিকদের প্রতিনিধি থাকেন। তাদের দাম বেশি নেওয়া কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।