স্বপ্নের মেট্রোরেল ছুটবে কাল
- আপডেট সময় : ১০:৩৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ ১২৯ বার পড়া হয়েছে
অনিশ্চয়তা কাটিয়ে গন্তব্যে ছুটতে প্রস্তুত লাল-সবুজের মেট্রোরেল। অপেক্ষা চাকা ঘোরার। দেশের প্রথম সম্পূর্ণ বিদ্যুৎচালিত গণপরিবহন এই স্বপ্নবাহন। একেবারেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলবে ট্রেন। টিকিট ব্যবস্থাও পুরোপুরি কম্পিউটারাইজড। আগামীকাল বুধবার উদ্বোধন শেষে বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রী নিয়ে ছুটবে ট্রেন। উদ্বোধনের সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে চলবে যাত্রী ব্যবস্থাপনা। যাত্রী চলাচলে থাকবে সব ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। এই ট্রেন চালুর মধ্য দিয়ে কমবে পথের ভোগান্তি, বাঁচবে সময়।
উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দিয়াবাড়ী থেকে ট্রেনে উঠে আগারগাঁও আসবেন ২০০ জন। তাদের নামের তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে জানিয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সচিব আবদুর রউফ বলেন, ‘তালিকা অনুযায়ী ব্যক্তিরা ট্রেনে উঠবেন। প্রধানমন্ত্রী যে কামরায় থাকবেন, সেখানে কারা কারা উঠতে পারবেন; তাও ঠিক করা হয়েছে। তবে সেই তালিকা নিজের কাছে না থাকার কথা জানান তিনি।’
এদিকে উদ্বোধন উপলক্ষে মেট্রোরেলের ফাইনাল ট্রায়াল চলছে। স্টেশনসহ মেট্রো পরিচালনায় দায়িত্বরতদের সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাত্রী সহযোগিতায় থাকবে পৃথক লোকজন। স্টেশন থেকে শুরু করে প্ল্যাটফর্মসহ সংযোগ সড়কের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজ শেষ হয়েছে। দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রতিটি স্টেশনে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সসহ (এসএসএফ) আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সাজানো-গোছানোর মধ্য দিয়ে দৃষ্টিনন্দন করে তোলা হয়েছে ট্রেন ও স্টেশন। তবে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এই গণপরিবহনের ভাড়া কমানোর দাবি উঠলেও শেষ পর্যন্ত তা হচ্ছে না।
এদিকে এমআরটি-ছয় এর সার্বিক বিষয় তুলে ধরতে আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় আগারগাঁও স্টেশনে সংবাদ সম্মেলন করবেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এতে সড়ক সচিব, মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধনের মাহেন্দ্রক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে ওই দিন উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের উত্তরা পার্ক মাঠে জনসমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। ওই সমাবেশ থেকেই প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।
সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী উত্তরা স্টেশনে এসে ফ্ল্যাগ উন্মোচন করবেন। তারপর টিকিট কেটে ট্রেনে উঠবেন। প্রধানমন্ত্রী আগারগাঁও এসে নামবেন। প্রথম ট্রেনটি চালাবেন নারী চালক আফিজা।
ভাড়া কমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। যেসব সংগঠন ভাড়া কমানোর দাবি জানিয়েছিল তাদের মধ্যে যাত্রী কল্যাণ সমিতির লোকজন আমার কাছে আসার পর ভাড়া নির্ধারণের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে। তারা সন্তুষ্ট হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টা স্টেশনের এক্সিট, এন্ট্রি, টিকিটিং মেশিনসহ সব ধরনের যন্ত্রপাতি লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে। তবে ছয়টি স্টেশনের কিছু কাজ বাকি থাকায় উদ্বোধনের পর আপাতত তিনটিতে ট্রেন থামবে।
উদ্বোধনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত
বিভিন্ন স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, কোনো স্টেশনের সিঁড়ির নিরাপত্তা বেষ্টনী লাগানো হচ্ছে। কোনো স্টেশনে ফুটপাতের টাইলস লাগানো চলছে। চলছে ধোয়ামোছার কাজ।
উত্তরা স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, নিচ থেকে স্টেশনের দুই পাশ দিয়ে ‘কনকোর্স’ (মেট্রোরেল স্টেশনে ঢোকার আগের স্থান যেখানে টিকিট কাউন্টার, টিকিট ও নিরাপত্তা যাচাই করা হয়) লেভেলে ওঠানামার জন্য সিঁড়ি, লিফট ও এক্সেলেটর রয়েছে। এসব সিঁড়ি, লিফট ও এক্সেলেটর ব্যবহার করে ট্রেন চলাকালীন সময়ে কনকোর্স লেভেল দিয়ে রাস্তার এপার থেকে ওপারে যাওয়া যাবে।
দোতলায় বা কনকোর্স লেভেলে উঠে দেখা যায়, ১৮০ মিটার প্রশস্ত কনকোর্স লেভেলে যাত্রীর টিকিট সংগ্রহের জন্য রয়েছে এক পাশে দুটো করে মোট চারটি টিকিট কাউন্টার এবং দুটি টিকিট ভেন্ডিং মেশিন অফিস। সুপরিসর এ জায়গার মাঝখানে বসানো হয়েছে প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা টিকিট কাউন্টার। এর পাশে রয়েছে অনিয়ম বা বিনা টিকিটে ভ্রমণকারীদের জরিমানা আদায়ের আলাদা কক্ষ।
স্টেশনের দুই পাশে নারী ও পুরুষের জন্য চার কোনায় চারটি আলাদা টয়লেট জোন। রয়েছে আলাদা নামাজের কক্ষ। উত্তরার এ স্টেশনে রয়েছে রেলচালকদের জন্য আলাদা বিশ্রামাগার এবং প্রকৌশলীদের জন্য আলাদা কক্ষ। প্রথম ধাপে চলবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথ। এই পথে একবার চলতে মেট্রোরেল সময় নেবে ২০ মিনিট। তবে পূর্ণমাত্রায় চালু হলে এই সময় কমে আসবে ১৬-১৭ মিনিটে। অফিসগামী যাত্রীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রতিদিন সকাল ৮টায় ট্রেন চলাচল শুরু হবে। মোট চার ঘণ্টা ট্রেন চলাচল করার কথা জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
শেষ মুহূর্তে অনেক স্টেশনে নির্দেশনা থাকা ডিজিটাল স্ক্রিনগুলো পরীক্ষা করতে দেখা যায়। স্টেশনের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা সাইনেজগুলো লাগানোর কাজ চলছে। টিকিট বিক্রির মেশিনসহ যাবতীয় বিষয় শেষ মুহূর্তের জন্য দেখে নেওয়া হচ্ছে। সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে মেট্রোরেলের নির্মাণসামগ্রী।
টিকিট ব্যবস্থা
স্টেশনের টিকিট অফিস মেশিন (টিওএম) থেকে বিক্রয়কর্মীর সহায়তায় প্রতিবার ভ্রমণের পাশাপাশি মাসভিত্তিক বা বার্ষিক টিকিট বা পাস সংগ্রহ করা যাবে। এর পাশাপাশি রয়েছে টিকিট ভেন্ডিং মেশিন, যেটি থেকে যাত্রী স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাহিদা অনুযায়ী টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। কর্মকর্তারা জানান, টিকিট সংগ্রহের আগে পর্যন্ত যাত্রী যেখানে থাকবেন, সেটা হবে স্টেশনের ‘নন পেইড’ এলাকা। যাত্রী মেশিনে টিকিট পাঞ্চ করে চলে যাবেন ‘পেইড’ এলাকায়। নির্ধারিত মেশিনে টিকিট পাঞ্চ ছাড়া কেউ পেইড জোনে যেতে পারবেন না।
এরপর যাত্রী পেইড জোন থেকে সরাসরি তিনতলায় অবস্থিত প্ল্যাটফর্মে যাবেন। এজন্য সেখানে দুটি সিঁড়ি, দুটি এক্সেলেটর ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য দুটি লিফট বসানো হয়েছে। নির্মাণাধীন সব স্টেশনেই থাকছে প্রায় এমন ব্যবস্থা।
দিয়াবাড়ীতে থাকছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উত্তরার দিয়াবাড়ীতে ডিপোয় একটি অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টার (ওসিসি) স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে ট্রেন কোথায় কোথায় থামবে, কত সময় থামবে, কত গতিতে চলবে; এর সবই আগে থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এর বাইরে রেললাইনের প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ মিটার পরপর রেডিও অ্যান্টেনা স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ট্রেনে আছে চারটি করে অ্যান্টেনা। প্রতিটি অ্যান্টেনা ট্রেন ও কন্ট্রোল সেন্টারের (নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র) সঙ্গে যোগাযোগ করবে। যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে থামার আগে স্টেশনের নাম ঘোষণা হবে। ছাড়ার সময় পরবর্তী স্টেশনের নাম ঘোষণা হবে। এ ছাড়া প্রতিটি কামরায় স্থাপন করা ডিজিটাল স্ক্রিনেও স্টেশনের নাম ভেসে উঠবে। ট্রেন পরিচালনার জন্য একজন চালক (অপারেটর) এবং স্টেশনে একজন নিয়ন্ত্রক (কন্ট্রোলার) থাকবেন।
গ্রিড বিপর্যয় হলেও ট্রেন বন্ধ হবে না
মেট্রোরেল উত্তরা থেকে আগারগাঁও যাতায়াতে দিনে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগবে বলে হিসাব করেছে কর্তৃপক্ষ। এই ট্রেন চলাচলের জন্য নিজস্ব বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। উত্তরার ডিপোয় সাব-স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। মতিঝিলে আরেকটি স্থাপনের কাজ চলছে। পুরোদমে চালু হলে খরচ হবে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিটি সাব-স্টেশনে দুটি ট্রান্সফরমার থাকবে। একটি বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে এবং অন্যটি জরুরি প্রয়োজনে চালু হবে। অর্থাৎ কোথাও বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলেও ট্রেন চলাচল বন্ধ হবে না। জাতীয় গ্রিড বিপর্যয় হলেও ব্যাটারির মাধ্যমে চলমান ট্রেনগুলো নিকটবর্তী স্টেশনে পৌঁছাতে পারবে।
ট্রেনে যা যা থাকছে
মেট্রোরেলের প্রতি ট্রেনে ছয়টি কোচ বা বগি থাকছে। দুই প্রান্তের দুটি কোচকে বলা হচ্ছে ট্রেইলর কার। এতে চালক থাকবেন। এসব কোচে ৪৮ জন করে যাত্রীও বসতে পারবেন। মাঝখানে চারটি কোচ হচ্ছে মোটরকার। এর প্রতিটিতে বসার ব্যবস্থা আছে ৫৪ জনের। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবেন ৩০৬ জন। প্রতিটি কোচ সাড়ে নয় ফুট চওড়া। মাঝখানের প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবেন। দাঁড়ানো যাত্রীদের ধরার জন্য ওপরে হাতল এবং স্থানে স্থানে খুঁটি আছে। একটি ট্রেনে বসে ও দাঁড়িয়ে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০৮ যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেন। সম্পূর্ণ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) এই ট্রেনের দুই পাশে সবুজ রঙের দুই সারি লম্বা আসন পাতা হয়েছে। প্রতিটি কোচের দুই পাশে চারটি করে আটটি দরজা আছে। অর্থাৎ ট্রেন স্টেশনে থামলে চারটি দরজা একসঙ্গে খুলে যাবে। বাকি চারটি বন্ধ থাকবে। দুই প্রান্তের দুটি কোচে দুটি করে চারটি হুইলচেয়ার বসানোর ব্যবস্থা আছে। প্রতিটি ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। ট্রেনের নকশা প্রণয়ন ও তৈরির কাজ করছে জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়াম।
১৪ বিধিনিষেধ
মেট্রো রেলে চলাচলে ১৪টি বিধিনিষেধ মানতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, ধূমপান করা যাবে না। পান খাওয়া যাবে না এবং যেখানে সেখানে পানের পিক ফেলা যাবে না। নির্দিষ্ট স্থানে থুথু ও ময়লা ফেলতে হবে। ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ। স্টেশন বা ট্রেনে কোনো ধরনের পণ্য ফেরি করা যাবে না। অগ্নেয়াস্ত্র, বিপজ্জনক পণ্য পরিবহন নিষিদ্ধ। পোষা প্রাণী বহন করা যাবে না। পোস্টার, ব্যানার ও দেয়াল লিখন নয়। ভারী ও বড় আকারের মালামাল পরিবহন নয়। একাধিক আসন দখল করে বসা যাবে না। কোনো অবস্থাতেই ড্রাইভিং ক্যাবে প্রবেশ নয়। মাঝখানের চলাচলের পথে দাঁড়িয়ে অন্যদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। মহিলাদের কোচে পুরুষ যাত্রীদের ওঠা যাবে না, তবে নারী যাত্রীরা পুরুষদের কোচে ওঠার সুযোগ পাবেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো প্রতিটি কোচে থাকা বয়স্ক এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সিটে অন্যরা বসতে পারবেন না।
নারীদের জন্য থাকছে আলাদা কোচ
দেশের প্রথম মেট্রোরেলে নারীদের নির্বিঘ্ন চলাচলে প্রতিটি ট্রেনে থাকছে আলাদা কোচ, তবে চাইলে তারা অন্য কোচেও যাতায়াত করতে পারবেন। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক জানান, শুরুতে ছয় বগির ১০টি ট্রেন প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। ব্যাকআপ হিসাবে থাকছে আরও দুটি ট্রেন। এসব ট্রেনের একটি কোচ কেবল নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এই কোচের সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ৩৯০ জন। চাইলে বাকি পাঁচ বগিতেও নারীরা উঠতে পারবেন।
প্রস্তুত ৫০ দ্বিতল বাস
মেট্রোরেলে চেপে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকা যাওয়া যাবে নির্বিঘ্নেই। তবে খানিক দূরের স্টেশনে পৌঁছানো কিংবা সেখান থেকে গন্তব্যে যেতে শুরু ও শেষের স্টেশনে থাকছে বিআরটিসির ৫০টি দ্বিতল বাস। ডিএমটিসিএল সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে ট্রেন চালুর আগেই বাসগুলো চলাচাল শুরু করেছে। যাত্রী পরিবহনে গত ১৭ নভেম্বর বিআরটিসির সঙ্গে চুক্তি করে ডিএমটিসিএল।
মেট্রোর যাত্রীদের শাটল সেবার জন্য দুটি রুট নির্ধারণ করেছে বিআরটিসি। একটি রুটে আগারগাঁও থেকে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, গুলিস্তান হয়ে মতিঝিল যাবে। একইভাবে মতিঝিল থেকে গুলিস্তান, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট হয়ে আগারগাঁও পর্যন্ত আসা যাবে। আর দিয়াবাড়ি থেকে উত্তরার হাউস বিল্ডিং বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত আসা-যাওয়া করবে বিআরটিসির বাস।
নিরাপত্তা জোরদার
উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোতে নিরাপত্তার দায়িত্বভার নিয়েছে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা এসএসএফ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত নয়টি স্টেশনের কনকোর্স ছাদ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এসএসএফ এবং সিঁড়ি থেকে নিচের অংশে পুলিশের পাহারা বসিয়েছে কর্তৃপক্ষ। স্টেশনের ভেতরে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত পথটি লাইন-৬ নামে পরিচিত। এ পথের দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৭টি স্টেশন থাকছে। লাইন-৬-এর দুটি ভাগ: উত্তরা থেকে আগারগাঁও এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল-কমলাপুর। এর মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হবে ২৮ ডিসেম্বর। এ পথে স্টেশন আছে ৯টি। ২০২৫ সালে কমলাপুর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে। তখন ঘন্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন সম্ভব। প্রায় ৩৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকার মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা।
সুত্রঃ সোনালীনিউজ