সালাউদ্দিনের বক্তব্যে ফুঁসে উঠছেন সাংবাদিকরা
![](https://desherawaj.com/wp-content/themes/newspaper-pro/assets/images/reporter.jpg)
- আপডেট সময় : ০৬:৫০:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ মে ২০২৩ ৮৭ বার পড়া হয়েছে
সাংবাদিকদের বাপের জুতা পরা ছবি নিয়ে ফুটবল ফেডারেশনে আসতে হবে- বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের এমন বক্তব্যে ফুঁসে উঠেছে সাংবাদিক সমাজ। সাংবাদিকের প্রতিনিধিত্বশীল বেশিরভাগ সংগঠন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
বুধবার (৩ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি- ডিআরইউ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন- বিএফউজে, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে এবং ক্রীড়া সাংবাদিক সমিতি পৃথক বিবৃতি দিয়েছে। তারা সালাউদ্দিনের পদত্যাগ দাবি করেছে এবং তার মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
ডিআরইউর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সাংবাদিকদের বাপের জুতা পরা ছবি নিয়ে ফুটবল ফেডারেশনে আসতে হবে’ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের এমন কুরুচিপূর্ণ, বিদ্বেষপ্রসূত ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)।
অবিলম্বে তার পদত্যাগের দাবি জানিয়ে ডিআরইউ নেতারা বলেন, বাফুফের সভাপতির মতো শীর্ষ পদে থেকে এ ধরনের বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শুধু সাংবাদিক সমাজ নয়, তাদের পরিবারকে জড়িয়ে এই বক্তব্য দেওয়ার পর বাফুফে সভাপতির মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষ আজ সন্দিহান হয়ে পড়েছে। আমাদের সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছে, সকল পেশার মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব। কাজী সালাউদ্দিন যে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় কথা বলেছেন, সে ভাষায় সাংবাদিকরা কথা বলতে মোটেও অভ্যস্থ নন। আমরা অবিলম্বে কাজী সালাহউদ্দিনকে জাতির সামনে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান করছি।
ডিআরইউ নেতারা আরও বলেন, কাজী সালাউদ্দিনের দায়িত্ব পালনকালে দেশের জনপ্রিয় এই খেলার মান প্রতিনিয়ত নিম্নগামী। র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থা প্রায় সবার নিচের দিকে। বাফুফে অনিয়ম দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলেও বিভিন্ন সূত্রের খবর। যার সাম্প্রতিক প্রমাণ ফিফার নিষেধাজ্ঞা। বিভিন্ন সময়ে এসব খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় তিনি সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তার সবশেষ মন্তব্যে। দেশে ও দেশের বাইরে ফুটবলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার পর বাফুফের সভাপতি পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন বলে মনে করে ডিআরইউ।
বিবৃতিতে ডিআরইউ নিঃশর্ত ক্ষমা না চাইলে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে মাঠে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে দেশের সব গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে সাংবাদিকদের ভূমিকা রয়েছে। সাংবাদিকদের পারিবারিক পরিচয় নিয়ে সরকারের একটি সংস্থার সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন যে মন্তব্য করেছেন তা কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন। এমন মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের সংখ্যগরিষ্ঠ মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থান নিয়ে উপহাস করেছেন। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, সাংবাদিকদের নিয়ে এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্যের মাধ্যমে কাজী সালাউদ্দিন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো বাংলাদেশ ফুডবল ফেডারেশনের (বাফুফে) দুর্বলতা আড়াল করতে চেয়েছেন কী না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। সাংবাদিকদের নিয়ে এ ধরণের অসম্মানজনক মন্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহারসহ আনুষ্ঠানিকভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। নতুবা ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন তাঁর বিরুদ্ধে মাঠে নামতে বাধ্য হবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদ উল আলম ও মহাসচিব দীপ আজাদ ‘অবিলম্বে কাজী সালাউদ্দিনকে পদত্যাগের’ দাবি জানান। অন্যথায় সারাদেশের ফুটবল সংগঠকদের তাকে অপসারণে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানায় সাংবাদিকদের এই শীর্ষ সংগঠনটি।
এদিকে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে সাংবাদিক ও তাদের পরিবার নিয়ে কুৎসিত মন্তব্য করে কাজী সালাউদ্দিন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) মতো সংস্থার সভাপতি পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নিঃশর্ত ক্ষমা না চাইলে তার বিরুদ্ধে মাঠে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
এর আগে মঙ্গলবার বাফুফের নির্বাহী কমিটির দীর্ঘ সভার পর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের আগে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় মাইক্রোফোনের সামনে কাজী সালাউদ্দিনকে বলতে শোনা যায়, ‘জার্নালিস্ট এখানে ঢুকতে গেলে তাদের বাপের ছবি দিতে হবে। কন্ডিশন হলো, বাপের একটা ফটো পাঠাবে জুতা পরা। ঠিক আছে? এটা ম্যান্ডেটরি। আমার তো এখানে বাপের জুতা পরা ছবি থাকতে হবে।’
এই বক্তব্য নিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করলে তিনি তাৎক্ষণিক দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষমা চান।