সারা দেশকেই কারাগার বানিয়ে ফেলেছে সরকার: ফখরুল
- আপডেট সময় : ০৬:৩০:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ মার্চ ২০২৩ ১০৩ বার পড়া হয়েছে
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার সারা দেশকেই কারাগার বানিয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (৬ মার্চ) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ কারাগারে থাকা দলের সব নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। কারাগারের নিপীড়ন মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই হীন পরিকল্পনায় দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ও অনেক সিনিয়র নেতাসহ অসংখ্য কর্মীকে গ্রেফতার করেছে এবং কারাগারে অমানবিক নির্যাতন শুরু করেছে। মিথ্যা ও হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় এবং সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বর্তমানে কেরানীগঞ্জ কারাগারে কারান্তরীণ রিজভী ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ায় এবং তাঁকে সুচিকিৎসা প্রদানে সরকার ও কারাকর্তৃপক্ষের অবহেলায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
বিএনপি শীর্ষ এই নেতা বলেন, স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বুকে ও পায়ে গুলিবিদ্ধ রুহুল কবির রিজভী ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ফুসফুসে জটিলতা ও হার্টের অসুখসহ বিভিন্ন মারাত্মক অসুখে শারীরিকভাবে অসুস্থ একজন মানুষ। তিনি সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সময় অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারেন না, তাছাড়া তাকে সবসময় লাঠির ওপর ভর করে চলতে হয়। এমন এক পরিস্থিতিতে কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে পুরান ঢাকার আদালতে আসার দীর্ঘপথ প্রিজন ভ্যানে তাকে আনা-নেওয়া হচ্ছে।
প্রিজন ভ্যানগুলোতে বসার কোনো ব্যবস্থা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমনকি কোনোকিছু ধরে দাঁড়িয়ে থাকারও ব্যবস্থা নেই। যার জন্য অসুস্থ রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে চরম ঝুঁকি নিয়ে প্রায় প্রতিদিনেই আদালতে আনা-নেওয়া করানো হয়। যে কোনো বন্দিকে আদালতে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ প্রবিধান ও জেলকোড বিধির বিধান মতে আরামদায়ক পদ্ধতিতে বিধান থাকা স্বত্বেও কারা কর্তৃপক্ষ ও দায়িত্ব পুলিশ আইন অমান্য করে যাচ্ছে, যা চরম অমানবিকতা ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। শাসকগোষ্ঠীর ইচ্ছারই প্রতিফলন এটি।
‘৩০ ডিসেম্বরের মধ্যরাতের মহাভোট ডাকাতির’ নির্বাচনের পর বর্তমান সরকারের দুঃশাসন আরও তীব্র মাত্রা লাভ করেছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার দেশকে বিএনপিশূন্য করতে এখন বেপরোয়া ভূমিকায় মাঠে নেমেছে। কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে চারদিকে ভীতির বিস্তার ঘটাচ্ছে, যাতে সরকারের বিরুদ্ধে কেউ আওয়াজ করারও সাহস না পায়। বিশ্বের গণধিকৃত সকল স্বৈরাচারকে টেক্কা দিয়ে জনসমর্থনহীন আওয়ামী সরকার এখন মানুষের জান-মালের নিরাপত্তাকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।
ফখরুল বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের ভয়াবহ দুঃশাসনের হিংস্র রূপ দেশের মানুষকে নির্বাক করে ফেলেছে। অজানা আশঙ্কা, আতঙ্ক আর ভয়ের এক বিষাদময় পরিবেশ মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বর্তমান ‘স্বৈরশাহী’ দেশে বিরোধী দলের অস্তিত্ব ধ্বংস করে নিজেদের দুঃশাসনকে প্রলম্বিত করতে চায়। তবে জনগণ তাদের এই মনোবাঞ্ছা কোনোদিনই পূরণ হতে দেবে না। অতীতের সংগ্রামী ঐতিহ্যের ধারায় বাংলাদেশের মানুষ যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে দ্বিধা করবে না।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে সুচিকিৎসা প্রদান ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ মামলা প্রত্যাহারসহ দলের সব কারাবন্দি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের পাশাপাশি সবার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।