ঢাকা ১২:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কমানোর প্রতিশ্রুতি

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ০২:৪২:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ৯৬ বার পড়া হয়েছে

২০২৬ সালের মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের মধ্যে ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ চলছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, ব্যাংক খাতের আর্থিক পরিস্থিতির দুর্বলতা কাটাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত করতে সরকারি খাতের ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগের নীতিমালা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পুরো ব্যাংক খাতের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকব্যবস্থা জোরদারের কথাও জানানো হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এই প্রতিশ্রুতি দেন। বিভিন্ন খাতে নানা রকম শর্ত পূরণের লক্ষ্য ঠিক করে দিয়ে আইএমএফ গত সোমবার ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।

এই ঋণের প্রথম কিস্তি বাংলাদেশ পেয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। প্রথম কিস্তির পরিমাণ ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের তিন দিনের মাথায় সংস্থাটি প্রথম কিস্তি ছাড় করে।

রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক, বিডিবিএল-এই ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের গড় হার ২৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

এদিকে গত জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে ঋণ প্রস্তাব দেওয়ার পর ছয় মাস ধরে খেলাপি ঋণ কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোকে প্রতিবছর খেলাপি ঋণ কমানোর লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছে। আবার বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে সমন্বয়ক ও পর্যবেক্ষক বসিয়েছে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কমাতে নীতিছাড়ও দিয়েছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ না কমিয়ে নগদ আদায় করতে হবে। তাহলেই এই খাতের প্রকৃত উন্নয়ন হবে। নতুন করে যেসব ঋণ দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে দিতে হবে।

এদিকে আইএমএফকে বাংলাদেশ আরও বলেছে, ব্যাংকের পুনঃতফসিল করা ঋণকে খেলাপি ঋণের হিসাবের আওতায় আনা হচ্ছে, যা আগামী জুনের মধ্যে কার্যকর হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে এই তথ্য থাকবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনে ঝুঁকি ও খেলাপি ঋণের তথ্য সঠিকভাবে প্রতিফলিত হবে। যেখানে পুনঃতফসিল করা ঋণের তথ্য থাকবে, যার বিপরীতে যথানিয়মে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে  এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকায়, যা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। গত বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। ফলে গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে অর্থাৎ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা।

গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। খেলাপিতে পরিণত হয়েছে মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। এর বাইরে বিদেশি ব্যাংকের ২ হাজার ৯৭০ কোটি ও বিশেষায়িত ব্যাংকের ৪ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে।

ইতিমধ্যে দুর্বল পাঁচ ব্যাংকে ইতিমধ্যে সমন্বয়ক বসানো হয়েছে। ব্যাংক পাঁচটি হলো এবি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কমানোর প্রতিশ্রুতি

আপডেট সময় : ০২:৪২:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

২০২৬ সালের মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের মধ্যে ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ চলছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, ব্যাংক খাতের আর্থিক পরিস্থিতির দুর্বলতা কাটাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত করতে সরকারি খাতের ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগের নীতিমালা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পুরো ব্যাংক খাতের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকব্যবস্থা জোরদারের কথাও জানানো হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এই প্রতিশ্রুতি দেন। বিভিন্ন খাতে নানা রকম শর্ত পূরণের লক্ষ্য ঠিক করে দিয়ে আইএমএফ গত সোমবার ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।

এই ঋণের প্রথম কিস্তি বাংলাদেশ পেয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। প্রথম কিস্তির পরিমাণ ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের তিন দিনের মাথায় সংস্থাটি প্রথম কিস্তি ছাড় করে।

রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক, বিডিবিএল-এই ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের গড় হার ২৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

এদিকে গত জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে ঋণ প্রস্তাব দেওয়ার পর ছয় মাস ধরে খেলাপি ঋণ কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোকে প্রতিবছর খেলাপি ঋণ কমানোর লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছে। আবার বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে সমন্বয়ক ও পর্যবেক্ষক বসিয়েছে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কমাতে নীতিছাড়ও দিয়েছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ না কমিয়ে নগদ আদায় করতে হবে। তাহলেই এই খাতের প্রকৃত উন্নয়ন হবে। নতুন করে যেসব ঋণ দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে দিতে হবে।

এদিকে আইএমএফকে বাংলাদেশ আরও বলেছে, ব্যাংকের পুনঃতফসিল করা ঋণকে খেলাপি ঋণের হিসাবের আওতায় আনা হচ্ছে, যা আগামী জুনের মধ্যে কার্যকর হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে এই তথ্য থাকবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনে ঝুঁকি ও খেলাপি ঋণের তথ্য সঠিকভাবে প্রতিফলিত হবে। যেখানে পুনঃতফসিল করা ঋণের তথ্য থাকবে, যার বিপরীতে যথানিয়মে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে  এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকায়, যা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। গত বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। ফলে গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে অর্থাৎ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা।

গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। খেলাপিতে পরিণত হয়েছে মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। এর বাইরে বিদেশি ব্যাংকের ২ হাজার ৯৭০ কোটি ও বিশেষায়িত ব্যাংকের ৪ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে।

ইতিমধ্যে দুর্বল পাঁচ ব্যাংকে ইতিমধ্যে সমন্বয়ক বসানো হয়েছে। ব্যাংক পাঁচটি হলো এবি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।