ঢাকা ১২:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাত পোহালেই নির্বাচন, কোনদিকে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ?

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ১০:২১:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ৭৯ বার পড়া হয়েছে

টালমাটাল অর্থনীতি, ধরপাকড় ও ঘোলাটে রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি তথা জাতীয় পরিষদের এ নির্বাচনে প্রায় ১৩ কোটি পাকিস্তানি ভোটার নতুন সরকার গঠনে তাদের রায় দেবেন। তবে নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা, রাজনৈতিক উত্তেজনাসহ পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী পাকিস্তানের ভাগ্যে কী ঘটতে চলেছে?

মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে নির্বাচনের সব ধরনের প্রচারণা শেষ হয়েছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, রেঞ্জারর্স এবং পুলিশ ফ্লাগ মার্চ করছে। দেশজুড়ে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রচারণার শেষ দিন মঙ্গলবার লারকানায় নির্বাচনী প্রচারণার ইতি টেনেছেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারপারসন বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। এটি হলো ভুট্টো পরিবারের রাজনৈতিক ঘাঁটি।

অন্যদিকে প্রচারণার শেষ স্থান হিসেবে কাসুরকে বেছে নেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) প্রধান সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। এটি তার ছোটভাই ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সংসদীয় আসন।

পিপিপি এবং পিএমএলএন যখন নির্বাচনী প্রচারণায় মুখিয়ে ছিল, তখন আরেক বড় দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) অবস্থা পুরো আলাদা। একদিকে দলটিকে তাদের ঐতিহাসিক নির্বাচনী প্রতীক ক্রিকেট ব্যাট বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন, অন্যদিকে নানা অভিযোগে জেলে দলটির প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান।

দেশটির নির্বাচন কমিশন এক বিবৃতিতে সব দলকে নির্বাচনী আইনের ১৮২ ধারা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। নির্বাচন শেষ হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত কোনো রকম জনমত জরিপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এই আইনে। তবে ভোট গ্রহণ হয়ে যাওয়ার এক ঘন্টা পরে মিডিয়াকে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সব রাজনৈতিক দল এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদেরকে আচরণবিধির ৪৮ ও ৪৯ ধারা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। এর অধীনে ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রের ৪০০ মিটারের মধ্যে কোনো রকম প্রচারণা চালানো যাবে না। ভোটকেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে কোনো নোটিশ, প্রতীক, ব্যানার বা ফ্লাগ প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বিপাকে রয়েছে ইমরানের খানের পিটিআই। দুই বছর আগে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এখন একের পর এক মামলায় সাজা পেয়ে এখন রয়েছেন কারাগারে। মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ায় নিজে নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। দলের শীর্ষ অনেক নেতাও কারাবন্দি। দলীয় প্রতীক বরাদ্দও পাননি। ফলে দলের ব্যানার থেকে বাকিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না, অংশ নিতে হচ্ছে স্বতন্ত্র হিসেবে।

তবে এখনো আশা ছাড়েননি ইমরান খান ও তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে হাতিয়ার বানিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে পাল্টা জবাব এবং নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। দলের অনেক মাঝারি সারির নেতা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। যদিও তাদের বেশিরভাগই পরীক্ষিত নন এবং দলীয় প্রতীকে নয় বরং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তারা ভোটের ময়দানে নেমেছেন।

ইমরান বর্তমানে তোষাখানা মামলায় কারাগারে রয়েছেন। কারাগারে বিশেষ আদালত বসিয়ে তার বিরুদ্ধে হওয়া আরো বেশ কয়েকটি মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন হয় এবং তিনি বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড পান। এক সপ্তাহের মধ্যেই তার তিনটি মামলার রায় হয়েছে। সেগুলোয় তাকে ১৪ বছর, ১০ বছর ও ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক উইলসন সেন্টার থিংক ট্যাংক এর সাউথ এশিয়া ইন্সটিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘পাকিস্তানে মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩০ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয়। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে পিটিআইয়ের নির্বাচনী প্রচার চালানোয় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আগেও এমনটা দেখা গেছে। বিশেষ করে গত নির্বাচনের সময় যখন নওয়াজ শরীফ কারাগারে ছিলেন। এবারও সম্ভবত একই ঘটনা ঘটবে, কারণ সবই এক; শুধুমাত্র খোলোয়াড় বদলে গেছে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন ইমরান কারাগারে। আর নওয়াজের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ পরিষ্কার। অনেকেই মনে করছেন, এবার নওয়াজই দেশটির সেনাবাহিনীর পছন্দের প্রার্থী।

পাকিস্তানের এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন, বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপিপিসহ ছোট-বড় প্রায় ১৪টি রাজনৈতিক দল। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইমরান খানকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানজুড়ে রাজনৈতিক বিভাজন আরও গভীর হতে চলেছে।

এক নজরে পাকিস্তানে নির্বাচনী ব্যবস্থা
প্রায় ২৫ কোটি জনসংখ্যার দেশ পাকিস্তানে এবার ১২ কোটি ৮০ লাখের মতো ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে বিরতি ছাড়াই ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে ভোটগ্রহণের সময় বাড়াতে পারবেন স্থানীয় নির্বাচনী কর্মকর্তারা।

জাতীয় পরিষদের (এনএ) পাশাপাশি চারটি প্রাদেশিক পরিষদেও বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ হবে। ভোটাররা জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং প্রাদেশিক পরিষদের জন্য মোট দুটি ভোট প্রয়োগ করতে পারবেন। দেশটিতে জাতীয় পরিষদের ভোটে মোট ৫ হাজার ১২১ জন প্রার্থী এবং প্রাদেশিক পরিষদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১২ হাজার ৬৯৫ জন প্রার্থী। এবারের নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)।

জাতীয় পরিষদের ৩৩৬টি আসনের মধ্যে ২৬৬ জন সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। বাকি ৭০টি সংরক্ষিত আসন। তার মধ্যে ৬০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। আর ১০টি অমুসলিমদের জন্য।

জনগণের সরাসরি ভোটে বিজয়ী প্রার্থীরা জাতীয় পরিষদের সদস্য হন। নির্বাচনের পর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেকোনো দলে যোগ দেয়ার সুযোগ রয়েছে। সংসদ সদস্যদের ভোটে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে হলে কমপক্ষে ১৬৯ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন।

কোনপথে পাকিস্তানের ভবিষ্যত?
পাকিস্তানের আসন্ন নির্বাচন শুধু দলগুলো বা তাদের নেতাদের জনপ্রিয়তা মাপার জন্যই গুরুত্বপূর্ন নয়। অর্থনৈতিক সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ইস্যুগুলোতেও এই নির্বাচনের প্রভাব থাকবে।

কিন্তু নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহের ঘাটতিতে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। ইসলামাবাদের স্কুল শিক্ষক সায়রা খান বলেন, ‘কে ক্ষমতায় আসবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেই ক্ষমতায় আসুন না কেন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরানো উচিত, আর তা মানুষের আস্থা অর্জন ছাড়া সম্ভব নয়। কাজেই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। যদিও তা খুব একটা পরিবর্তন আনবে এমন আশাবাদী হতে পারছি না।’

বর্তমান পরিস্থিতিতে ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে নওয়াজ শরীফের জয়ের সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে। পিটিআই ক্ষমতায় ফিরলে পাকিস্তানের রাজনীতি ও অর্থনীতি সেই চাপ নিতে পারবে না বলে দাবি করছে পাকিস্তান মুসলিম লিগ।

দলটির নেতা তারিক ফজল চৌধুরী বলেন, ‘খান ও তার দল তাদের মনোভাব বুঝিয়ে দিয়েছে। তারা পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে চলতে দেবে না।’

গত বছর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী পিটিআই-এর উপর থেকে থেকে তাদের সমর্থন সরিয়ে নিলেও ইমরান খানের জনপ্রিয়তা তারা থামাতে পারেনি। এটি নিশ্চিত যে নির্বাচনে জয়লাভ করে যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন তাকে দেশটির সামরিক বাহিনীর সাথেই হাত মিলিয়ে চলতে হবে। আর সেটি যদি পিটিআই হয় এবং সামরিক বাহিনীর সাথে যদি তারা দ্বন্দ্ব মেটাতে সক্ষম না হয়, তাহলে পাকিস্তান আবারও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়েই এগোবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সূত্র: রয়টার্স, আল জাজিরা ও ডয়চে ভেলে

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

রাত পোহালেই নির্বাচন, কোনদিকে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ?

আপডেট সময় : ১০:২১:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

টালমাটাল অর্থনীতি, ধরপাকড় ও ঘোলাটে রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি তথা জাতীয় পরিষদের এ নির্বাচনে প্রায় ১৩ কোটি পাকিস্তানি ভোটার নতুন সরকার গঠনে তাদের রায় দেবেন। তবে নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা, রাজনৈতিক উত্তেজনাসহ পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী পাকিস্তানের ভাগ্যে কী ঘটতে চলেছে?

মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে নির্বাচনের সব ধরনের প্রচারণা শেষ হয়েছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, রেঞ্জারর্স এবং পুলিশ ফ্লাগ মার্চ করছে। দেশজুড়ে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রচারণার শেষ দিন মঙ্গলবার লারকানায় নির্বাচনী প্রচারণার ইতি টেনেছেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারপারসন বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। এটি হলো ভুট্টো পরিবারের রাজনৈতিক ঘাঁটি।

অন্যদিকে প্রচারণার শেষ স্থান হিসেবে কাসুরকে বেছে নেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) প্রধান সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। এটি তার ছোটভাই ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সংসদীয় আসন।

পিপিপি এবং পিএমএলএন যখন নির্বাচনী প্রচারণায় মুখিয়ে ছিল, তখন আরেক বড় দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) অবস্থা পুরো আলাদা। একদিকে দলটিকে তাদের ঐতিহাসিক নির্বাচনী প্রতীক ক্রিকেট ব্যাট বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন, অন্যদিকে নানা অভিযোগে জেলে দলটির প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান।

দেশটির নির্বাচন কমিশন এক বিবৃতিতে সব দলকে নির্বাচনী আইনের ১৮২ ধারা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। নির্বাচন শেষ হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত কোনো রকম জনমত জরিপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এই আইনে। তবে ভোট গ্রহণ হয়ে যাওয়ার এক ঘন্টা পরে মিডিয়াকে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সব রাজনৈতিক দল এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদেরকে আচরণবিধির ৪৮ ও ৪৯ ধারা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। এর অধীনে ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রের ৪০০ মিটারের মধ্যে কোনো রকম প্রচারণা চালানো যাবে না। ভোটকেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে কোনো নোটিশ, প্রতীক, ব্যানার বা ফ্লাগ প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বিপাকে রয়েছে ইমরানের খানের পিটিআই। দুই বছর আগে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এখন একের পর এক মামলায় সাজা পেয়ে এখন রয়েছেন কারাগারে। মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ায় নিজে নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। দলের শীর্ষ অনেক নেতাও কারাবন্দি। দলীয় প্রতীক বরাদ্দও পাননি। ফলে দলের ব্যানার থেকে বাকিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না, অংশ নিতে হচ্ছে স্বতন্ত্র হিসেবে।

তবে এখনো আশা ছাড়েননি ইমরান খান ও তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে হাতিয়ার বানিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে পাল্টা জবাব এবং নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। দলের অনেক মাঝারি সারির নেতা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। যদিও তাদের বেশিরভাগই পরীক্ষিত নন এবং দলীয় প্রতীকে নয় বরং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তারা ভোটের ময়দানে নেমেছেন।

ইমরান বর্তমানে তোষাখানা মামলায় কারাগারে রয়েছেন। কারাগারে বিশেষ আদালত বসিয়ে তার বিরুদ্ধে হওয়া আরো বেশ কয়েকটি মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন হয় এবং তিনি বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড পান। এক সপ্তাহের মধ্যেই তার তিনটি মামলার রায় হয়েছে। সেগুলোয় তাকে ১৪ বছর, ১০ বছর ও ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক উইলসন সেন্টার থিংক ট্যাংক এর সাউথ এশিয়া ইন্সটিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘পাকিস্তানে মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩০ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয়। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে পিটিআইয়ের নির্বাচনী প্রচার চালানোয় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আগেও এমনটা দেখা গেছে। বিশেষ করে গত নির্বাচনের সময় যখন নওয়াজ শরীফ কারাগারে ছিলেন। এবারও সম্ভবত একই ঘটনা ঘটবে, কারণ সবই এক; শুধুমাত্র খোলোয়াড় বদলে গেছে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন ইমরান কারাগারে। আর নওয়াজের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ পরিষ্কার। অনেকেই মনে করছেন, এবার নওয়াজই দেশটির সেনাবাহিনীর পছন্দের প্রার্থী।

পাকিস্তানের এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন, বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপিপিসহ ছোট-বড় প্রায় ১৪টি রাজনৈতিক দল। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইমরান খানকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানজুড়ে রাজনৈতিক বিভাজন আরও গভীর হতে চলেছে।

এক নজরে পাকিস্তানে নির্বাচনী ব্যবস্থা
প্রায় ২৫ কোটি জনসংখ্যার দেশ পাকিস্তানে এবার ১২ কোটি ৮০ লাখের মতো ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে বিরতি ছাড়াই ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে ভোটগ্রহণের সময় বাড়াতে পারবেন স্থানীয় নির্বাচনী কর্মকর্তারা।

জাতীয় পরিষদের (এনএ) পাশাপাশি চারটি প্রাদেশিক পরিষদেও বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ হবে। ভোটাররা জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং প্রাদেশিক পরিষদের জন্য মোট দুটি ভোট প্রয়োগ করতে পারবেন। দেশটিতে জাতীয় পরিষদের ভোটে মোট ৫ হাজার ১২১ জন প্রার্থী এবং প্রাদেশিক পরিষদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১২ হাজার ৬৯৫ জন প্রার্থী। এবারের নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)।

জাতীয় পরিষদের ৩৩৬টি আসনের মধ্যে ২৬৬ জন সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। বাকি ৭০টি সংরক্ষিত আসন। তার মধ্যে ৬০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। আর ১০টি অমুসলিমদের জন্য।

জনগণের সরাসরি ভোটে বিজয়ী প্রার্থীরা জাতীয় পরিষদের সদস্য হন। নির্বাচনের পর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেকোনো দলে যোগ দেয়ার সুযোগ রয়েছে। সংসদ সদস্যদের ভোটে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে হলে কমপক্ষে ১৬৯ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন।

কোনপথে পাকিস্তানের ভবিষ্যত?
পাকিস্তানের আসন্ন নির্বাচন শুধু দলগুলো বা তাদের নেতাদের জনপ্রিয়তা মাপার জন্যই গুরুত্বপূর্ন নয়। অর্থনৈতিক সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ইস্যুগুলোতেও এই নির্বাচনের প্রভাব থাকবে।

কিন্তু নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহের ঘাটতিতে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। ইসলামাবাদের স্কুল শিক্ষক সায়রা খান বলেন, ‘কে ক্ষমতায় আসবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেই ক্ষমতায় আসুন না কেন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরানো উচিত, আর তা মানুষের আস্থা অর্জন ছাড়া সম্ভব নয়। কাজেই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। যদিও তা খুব একটা পরিবর্তন আনবে এমন আশাবাদী হতে পারছি না।’

বর্তমান পরিস্থিতিতে ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে নওয়াজ শরীফের জয়ের সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে। পিটিআই ক্ষমতায় ফিরলে পাকিস্তানের রাজনীতি ও অর্থনীতি সেই চাপ নিতে পারবে না বলে দাবি করছে পাকিস্তান মুসলিম লিগ।

দলটির নেতা তারিক ফজল চৌধুরী বলেন, ‘খান ও তার দল তাদের মনোভাব বুঝিয়ে দিয়েছে। তারা পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে চলতে দেবে না।’

গত বছর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী পিটিআই-এর উপর থেকে থেকে তাদের সমর্থন সরিয়ে নিলেও ইমরান খানের জনপ্রিয়তা তারা থামাতে পারেনি। এটি নিশ্চিত যে নির্বাচনে জয়লাভ করে যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন তাকে দেশটির সামরিক বাহিনীর সাথেই হাত মিলিয়ে চলতে হবে। আর সেটি যদি পিটিআই হয় এবং সামরিক বাহিনীর সাথে যদি তারা দ্বন্দ্ব মেটাতে সক্ষম না হয়, তাহলে পাকিস্তান আবারও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়েই এগোবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সূত্র: রয়টার্স, আল জাজিরা ও ডয়চে ভেলে