ঢাকা ০১:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়লে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ০৮:০১:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১০৪ বার পড়া হয়েছে

দেশে ডলার সংকট। অর্থনৈতিক মন্দা। ব্যবসায়ীদের শঙ্কা যেন কমছে না। ইতোমধ্যে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পড়েছে দেশ।

এ অবস্থায় অস্থিরতা আরও বাড়লে অর্থনীতিতে ধস নামার আশঙ্কা করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা।

দেশের স্বার্থে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সব দলের সমন্বয় হয়ে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তা না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। এজন্য দ্রুত রাজনৈতিক সমঝোতা জরুরি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে যেখানে রাজনৈতিক সমঝোতা জরুরি, সেখানে অস্থিরতা বাড়লে অর্থনীতিতে শুধু ধসই নামবে না, আরও অনেক কিছু হতে পারে। এতে দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি বৈদেশিক ও সামাজিক খাতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এদিকে দেশের অর্থনীতির কথা চিন্তা করে আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্রীক সহিংস কর্মসূচি পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা। অর্থনীতি ও রাজনীতি একে অন্যের পরিপূরক। তাই সংহিস কর্মসূচি দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করলে পুরো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যার বোঝা দেশের সব মানুষকে বহন করতে হবে।

উল্লেখ্য, বুধবার রাতে নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। এ তফসিল অনুযায়ী আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে একতরফা তফসিল ঘোষণা করা হলে তারা লাগাতার হরতাল-অবরোধসহ আরও কঠোর কর্মসূচি দেবেন। এ ধরনের কর্মসূচিতে অর্থনীতি আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মনে করেন, করোনার সময়ে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুনরুদ্ধার করার আগেই রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে শুরু হয় বৈশ্বিক সংকট। এর প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়ে যায়।

এদিকে বর্তমানে দেশেও সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে মূল্যস্ফীতির হার। একই সঙ্গে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এতে দেশের প্রায় সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়লে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা সতর্ক করে বলেছেন, এতে পুরো দেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতির অবস্থা এমনিতেই খারাপ। এর মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই সহিংস হয়ে উঠছে। সব ধরনের পরিবহণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে মানুষ ও পণ্যের বিপণন ব্যাহত হচ্ছে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও বাধাগ্রস্ত হবে। ফলে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার আরও হ্রাস পাবে।

তিনি বলেন, করোনা, বৈশ্বিক মন্দা ও ডলার সংকটের কারণে এমনিতেই বিনিয়োগ কমে গেছে। অস্থিরতা চলতে থাকলে বিনিয়োগ আরও কমবে। দেশে বিনিয়োগের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ব্যাংক। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে গেছে। এর মানে হচ্ছে, বিনিয়োগও কম হচ্ছে। বিনিয়োগ বাড়লে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহও বাড়ে। বিনিয়োগ কমার কারণে বেসরকারি খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। এতে কর্মসংস্থানের হার কমবে। সব মিলে প্রবৃদ্ধির হার কমে যাবে।

তিনি আরও বলেন, কোনো দেশে বিনিয়োগ বাড়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, সন্তোষজনক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এসব না থাকলে বিনিয়োগ বাড়বে না। বিনিয়োগ না বাড়লে গতিশীল হবে না অর্থনীতি। আর অর্থনীতি গতিশীল না হলে বেকারদের ভালো কর্মসংস্থান হবে না। উন্নতি হবে না মানুষের জীবনমানের।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, রাজনীতি ও অর্থনীতি একে অন্যের পরিপূরক। তাই তফশিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলোর এমন কোনো কর্মসূচি দেওয়া উচিত হবে না, যাতে রপ্তানিমুখী শিল্প তথা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

এমনিতে বৈশ্বিক কারণে তৈরি পোশাকশিল্প একটি কঠিন সময় পার করছে, মূল্যস্ফীতির কারণে রপ্তানির অর্ডার কমে যাচ্ছে। গত কয়েকদিনের শ্রমিক অসন্তোষের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে অর্ডার হারানোর আশঙ্কা তৈরি হবে। কর্মসূচি দেওয়ার আগে রাজনীতিবিদরা দেশের অর্থনীতির কথা ভাববেন বলে আশা করেন এ ব্যবসায়ী নেতা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়লে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে

আপডেট সময় : ০৮:০১:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৩

দেশে ডলার সংকট। অর্থনৈতিক মন্দা। ব্যবসায়ীদের শঙ্কা যেন কমছে না। ইতোমধ্যে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পড়েছে দেশ।

এ অবস্থায় অস্থিরতা আরও বাড়লে অর্থনীতিতে ধস নামার আশঙ্কা করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা।

দেশের স্বার্থে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সব দলের সমন্বয় হয়ে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তা না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। এজন্য দ্রুত রাজনৈতিক সমঝোতা জরুরি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে যেখানে রাজনৈতিক সমঝোতা জরুরি, সেখানে অস্থিরতা বাড়লে অর্থনীতিতে শুধু ধসই নামবে না, আরও অনেক কিছু হতে পারে। এতে দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি বৈদেশিক ও সামাজিক খাতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এদিকে দেশের অর্থনীতির কথা চিন্তা করে আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্রীক সহিংস কর্মসূচি পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা। অর্থনীতি ও রাজনীতি একে অন্যের পরিপূরক। তাই সংহিস কর্মসূচি দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করলে পুরো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যার বোঝা দেশের সব মানুষকে বহন করতে হবে।

উল্লেখ্য, বুধবার রাতে নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। এ তফসিল অনুযায়ী আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে একতরফা তফসিল ঘোষণা করা হলে তারা লাগাতার হরতাল-অবরোধসহ আরও কঠোর কর্মসূচি দেবেন। এ ধরনের কর্মসূচিতে অর্থনীতি আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মনে করেন, করোনার সময়ে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুনরুদ্ধার করার আগেই রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে শুরু হয় বৈশ্বিক সংকট। এর প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়ে যায়।

এদিকে বর্তমানে দেশেও সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে মূল্যস্ফীতির হার। একই সঙ্গে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এতে দেশের প্রায় সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়লে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা সতর্ক করে বলেছেন, এতে পুরো দেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতির অবস্থা এমনিতেই খারাপ। এর মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই সহিংস হয়ে উঠছে। সব ধরনের পরিবহণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে মানুষ ও পণ্যের বিপণন ব্যাহত হচ্ছে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও বাধাগ্রস্ত হবে। ফলে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার আরও হ্রাস পাবে।

তিনি বলেন, করোনা, বৈশ্বিক মন্দা ও ডলার সংকটের কারণে এমনিতেই বিনিয়োগ কমে গেছে। অস্থিরতা চলতে থাকলে বিনিয়োগ আরও কমবে। দেশে বিনিয়োগের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ব্যাংক। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে গেছে। এর মানে হচ্ছে, বিনিয়োগও কম হচ্ছে। বিনিয়োগ বাড়লে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহও বাড়ে। বিনিয়োগ কমার কারণে বেসরকারি খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। এতে কর্মসংস্থানের হার কমবে। সব মিলে প্রবৃদ্ধির হার কমে যাবে।

তিনি আরও বলেন, কোনো দেশে বিনিয়োগ বাড়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, সন্তোষজনক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এসব না থাকলে বিনিয়োগ বাড়বে না। বিনিয়োগ না বাড়লে গতিশীল হবে না অর্থনীতি। আর অর্থনীতি গতিশীল না হলে বেকারদের ভালো কর্মসংস্থান হবে না। উন্নতি হবে না মানুষের জীবনমানের।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, রাজনীতি ও অর্থনীতি একে অন্যের পরিপূরক। তাই তফশিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলোর এমন কোনো কর্মসূচি দেওয়া উচিত হবে না, যাতে রপ্তানিমুখী শিল্প তথা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

এমনিতে বৈশ্বিক কারণে তৈরি পোশাকশিল্প একটি কঠিন সময় পার করছে, মূল্যস্ফীতির কারণে রপ্তানির অর্ডার কমে যাচ্ছে। গত কয়েকদিনের শ্রমিক অসন্তোষের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে অর্ডার হারানোর আশঙ্কা তৈরি হবে। কর্মসূচি দেওয়ার আগে রাজনীতিবিদরা দেশের অর্থনীতির কথা ভাববেন বলে আশা করেন এ ব্যবসায়ী নেতা।