রপ্তানিকারকদের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার নতুন তহবিল গঠন
- আপডেট সময় : ০৯:৩৫:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ জানুয়ারী ২০২৩ ১১৮ বার পড়া হয়েছে
রপ্তানি খাত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি। এ খাতের জন্য পর্যাপ্ত তারল্য নিশ্চিত করতে ১০ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি সহায়ক তহবিল গঠন করা হয়েছে। এই তহবিলের নাম হবে ‘রপ্তানি সহায়ক প্রাক-অর্থায়ন তহবিল’। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল। গ্রাহক পর্যায়ে এ তহবিল থেকে দেওয়া ঋণের সুদ হার হবে ৪ শতাংশ। গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ক্ষেত্রে ভবিষ্যত্ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গতিশীল রাখার লক্ষ্যে রপ্তানি খাতকে সহায়তা প্রদান করা প্রয়োজন। তাছাড়া, কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক অভিঘাত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর রপ্তানি কার্যক্রম বেগবান করার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। বৈশ্বিক বিরূপ অর্থনৈতিক অবস্থার বিপরীতে রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর অভিঘাত সহনশীল করার পাশাপাশি দেশের রপ্তানিমুখী শিল্পের বিকাশ ও প্রসারের চলমান ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে এ খাতের জন্য পর্যাপ্ত তারল্য নিশ্চিত করতে সহজ শর্তে একটি রপ্তানি সহায়ক প্রাক-অর্থায়ন তহবিল (ইএফপিএফ) গঠন করা হলো।
অনুসরণীয় নীতিমালা :তহবিলের আকার ১০ হাজার কোটি টাকা। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল। স্থানীয় রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উত্পাদনের কাঁচামাল আমদানি/স্থানীয় সংগ্রহের বিপরীতে আলোচ্য রপ্তানি সহায়ক তহবিল হতে প্রাক-অর্থায়ন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।
গ্রাহক পর্যায়ে ঋণপ্রাপ্তির যোগ্যতা :যে কোনো প্রত্যক্ষ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান এবং প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারকের অনুকূলে অর্থায়নের নিমিত্তে এ তহবিল উন্মুক্ত থাকবে। এই তহবিলের অর্থ রপ্তানিকারকের ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্রের মাধ্যমে উত্পাদনের কাঁচামাল আমদানির জন্য ব্যবহার করা যাবে। ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্রের বিপরীতে স্থানীয় উত্পাদনকারী সরবরাহকারী কাঁচামাল আমদানির জন্যও এই তহবিল থেকে ঋণসুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। তবে, ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী কোনো খেলাপি গ্রাহক বা গ্রাহক প্রতিষ্ঠানকে এই তহবিলের আওতায় ঋণসুবিধা দেওয়া যাবে না। এই তহবিল থেকে ঋণ সুবিধাগ্রহণকারী কোনো গ্রাহক উক্ত নির্ধারিত রপ্তানির বিপরীতে রপ্তানিমূল্য অপ্রত্যাবাসিত থাকলে সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারক এই তহবিলের আওতায় নতুনভাবে আর কোনো ঋণসুবিধা প্রাপ্য হবেন না। গ্রাহক কর্তৃক রপ্তানি ঋণপত্রের বিপরীতে কাঁচামাল আমদানির নিমিত্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য কোনো তহবিল থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত হলে এ তহবিলের আওতায় কোনো ধরনের ঋণসুবিধা প্রাপ্য হবে না। কোম্পানি/প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি আদেশ ব্যাংকের রপ্তানি ঋণপত্রের বিপরীতে প্রদত্ত ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্রের জন্য এ তহবিলের আওতায় প্রাক-অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া যাবে না।
নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে উক্ত রপ্তানিমূল্য যথাসময়ে প্রত্যাবাসিত না হলে আরো একবার সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা নতুন ঋণসুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। নতুন ঋণ সুবিধা গ্রহণের পূর্বে ইতিপূর্বে ইস্যুকৃত ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্রের বিপরীতে সৃষ্ট দায়ের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ গ্রাহককে নগদে পরিশোধ করতে হবে। তবে, নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণসমূহ বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট সন্তোষজনক মর্মে প্রতীয়মান হতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। গ্রাহক পর্যায়ে সুদ/মুনাফার হার হবে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক হতে ব্যাংকসমূহ কর্তৃক গৃহীত প্রাক-অর্থায়ন তহবিলের বিপরীতে ১ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সুদ বা মুনাফা প্রদান করতে হবে।
ঋণের মেয়াদ :গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের মেয়াদ যাই হোক না কেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সর্বোচ্চ ১৮০ দিন (ছয় মাস) মেয়াদে অংশগ্রহণকারী ব্যাংককে প্রাক-অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া হবে, যা মেয়াদ শেষে সুদসহ এককালীন পরিশোধ করতে হবে। তবে, যৌক্তিক কারণে রপ্তানিমূল্য প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদ/নির্বাহী কমিটির অনুমোদনক্রমে উপরোক্ত মেয়াদ অনধিক ৯০ দিন বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো যাবে। সেক্ষেত্রে কেইস-টু-কেইস ভিত্তিতে বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক অনাপত্তি পত্র দেবে।