যশোরে ড্রামে উদ্ধার কঙ্কাল ৬ বছর আগে খুন হওয়া রাজিবের
- আপডেট সময় : ০৫:২৭:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৩ ১০১ বার পড়া হয়েছে
যশোরের পুরাতন কসবার নিরিবিলি এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া ড্রামে যে কঙ্কাল পাওয়া গেছে তা খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার চন্দনীমহল গ্রামের ফারুক হোসেনের ছেলে রাজিব হোসেন কাজীর (৩২)। ডিএনএ থেকে শনাক্ত করা হয়েছে কঙ্কালটি এবং প্রমাণ হয় এটি একটি হত্যাকাণ্ড ছিল। এ ঘটনার সাথে জড়িত নড়াইল জেলার লোহাগড়ার মঙ্গলহাটা গ্রামের মৃত নুর মিয়ার ছেলে রিকশা চালক সালাম হোসেনকে (৫৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
খুলনায় রাজিব হোসেন তার চাচা হাসমতের বাসায় থেকে শেখ সজিবুর রহমানের (৩৪) বাসায় ও অফিসে কাজ করতেন। ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে রাজিব তার বাবাকে ফোন করে তাদের খুলনার বাড়িতে আসছেন বলে জানান। কিন্তু রাজিব খুলনায় তাদের না যাওয়ায় তার বাবা মোবাইলে কল করে ফোন বন্ধ পেলে তার ভাই হাসমতের সাথে যোগাযোগ করেন।
হাসমত জানান, তারাও ২৯ মার্চ রাত থেকে রাজিবকে পাচ্ছেন না। কয়েকদিন পর রাজিবের মা রাজিবের খোঁজে যশোরে আসেন। রাজিবের মা ও চাচা সজিবুর রহমানের বাসায় গিয়ে রাজিবের খোঁজ করলে সজিব জানান রাজিব কোথায় গেছে সে তিনি জানেন না। রাজিবের মা ও চাচা যশোর শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাজিবের খোঁজ করেন। সজিবুরের অফিস-বাড়ি ও সম্ভাব্য সকল জায়গায় খুঁজাখুঁজি করে কোনো সন্ধান না পেয়ে তারা বাড়িতে ফিরে যান।
এ ঘটনার প্রায় ছয় বছর পর গত বছরের ৩০ মে রাত ৮টার দিকে রাজিবের চাচা হাসমত তার ভাইকে ফোন করে জানান, যশোরের পুরাতন কসবার নিরিবিলি এলাকায় এক বজলুর রহমানের জায়গায় ভবন নির্মাণের জন্য খোড়ার সময় পরিত্যক্ত পুরাতন টয়লেটের রিং স্লাবের কুয়ার মধ্যে একটি নিল রঙ্গের প্লাস্টিকের ড্রামের মধ্যে মানুষের হাড়গোড় ও মাথার খুলি পাওয়া গেছে।
হাসমত আরও জানান, রাজিব যেখানে কাজ করত সেখানের টয়লেটের রিং স্লাবের ভেতরে থাকা ড্রামটি মাটি চাপা দেওয়া ছিল। অর্থাৎ যশোরে সজিবুরের যেখানে অফিস ছিল সেখান থেকেই মানুষের কঙ্কাল পাওয়া গেছে। রাজিব নিখোঁজ হওয়ার কিছুদিন পর সজিব তার অফিস ভেঙ্গে ফেলেছিলেন। ফারুক হোসেন তার ভাই হাসমতের এসব কথা জেনে যশোরে আসেন।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ছায়া তদন্তের সময়ে ফারুক হোসেন পিবিআই যশোর অফিসের পুলিশ সুপারকে তার ছেলেকে শনাক্তকরণের জন্য অনুরোধ করেন এবং এই বিষয়ে পিবিআই যশোর কার্যালয়ে একটি জিডি করা হয় তখন। এ জিডির সূত্র ধরেই রাজিবের মা-বাবাকে কঙ্কাল শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য মালিবাগ সিআইডি অফিসে পাঠানো হয়। ডিএনএ পরীক্ষায় ড্রামের মধ্যে পাওয়া কঙ্কালের সাথে রাজিবের বাবা এবং মায়ের ডিএনএর মিল পাওয়া যায়। অর্থাৎ ড্রামের ভেতরে পাওয়া কঙ্কাল বাদির ছেলের তা ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়।
ড্রামের মধ্যে পাওয়া কঙ্কালের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তা হত্যাকাণ্ড বলে প্রমাণ হয়। এরপর রাজিবের বাবা যশোর কোতয়ালী থানায় এ বছরের ১৭ জানুয়ারি তার ছেলের হত্যাকাণ্ড তদন্তে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পিবিআই গ্রহণ করে। গত ১৬ জানুয়ারি যশোর জেলার চৌকস দল এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত আসামি মোঃ সালামকে (৫৫) নড়াইলে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, অন্যান্য অসামিরা রাজিবকে হত্যা করে আসামি সালামের সহযোগিতায় মৃতদেহ গোপন করার জন্য ড্রামে ভরে তার ব্যবহৃত রিকশায় করে পুরাতন কসবা নিরিবিলি পাড়ার শেখ সজিবুর রহমানের অফিসের টয়লেটের কুয়ার মধ্যে ফেলে দেয়।
আরও জানা যায়, আসামি সালামকে গতকাল মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) যশোর আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মৃতদেহ বহনের কাজে ব্যবহৃত রিকশা জব্দ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্য অসামিদের গ্রেপ্তার অভিযানসহ মামলার তদন্ত অব্যহত রয়েছে।