মোখার প্রভাব, সেন্টমার্টিনে মুষলধারে বৃষ্টি
- আপডেট সময় : ০৩:৩৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ মে ২০২৩ ১০৬ বার পড়া হয়েছে
ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগের প্রভাবে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে ঝড়ো বাতাস বইতে শুরু করেছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়ায় সেন্টমার্টিনে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।
রোববার (১৪ মে) ভোর থেকে সেন্টমার্টিনের দ্বীপে বাতাসের গতিবেগ বেড়েছে। সঙ্গে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ও পানির উচ্চতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সেন্টমার্টিনের একজন বাসিন্দা জানান, মহাবিপদ সংকেত ১০ থেকে এখন ১১! বাতাস বেড়েই চলেছে। জোয়ার আসা শুরু করেছে। সাগর খুবই উত্তাল। হালকা হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। বাতাসের গতি উত্তর-পূর্ব দিক। মাঝেমাঝে দিক পরিবর্তন হচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে আছে দ্বীপের প্রতিটি মানুষ। দ্বীপের অধিকাংশ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে অনেকের মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে গেছে। সবকিছুরই ফয়সালা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুক। আমিন।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান এ মুহূর্তে সেন্টমার্টিন দ্বীপে স্বাভাবিক দিনের চেয়ে পানির উচ্চতা দুই থেকে তিন ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। নৌবাহিনী প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ভোর থেকে সেখানে বৃষ্টি হচ্ছে। সকালে ঘূর্ণিঝড়ের তেমন প্রভাব না থাকায় অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বের হয়েছেন। কেউ কেউ নিজ বাড়ি যাচ্ছেন আবার অনেকেই বাইরের পরিস্থিতি দেখছেন।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের উল্টো দিকে অবস্থিত এ আশ্রয়কেন্দ্রে এক হাজারের বেশি মানুষ রাতে অবস্থান করেছেন বলে ভিডিওতে জানানো হয়।
ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, রাতে সবার মধ্যে যে ধরনের ভয় আতঙ্ক কাজ করেছিল দিনের আলোতে সেটা অনেকটা কমে গেছে।
ভিডিওতে বেশ কয়েকজনকে মালামালসহ ফিরে যেতে দেখা গেছে। তবে, অনেকেই পানি আনতে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বের হয়েছেন। অনেকেই বিশ্বাস করছেন না যে বড় ধরনের কোনো ঘূর্ণিঝড় সেন্টমার্টিনে আঘাত হানতে যাচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১৭ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। তাছাড়া চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হয়েছে।
শনিবার (১৩ মে) রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১৭ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও আরও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
এটি গত মধ্যরাতে (১৩ মে) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ১৪ মে ২০২৩ সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হয়েছে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ২১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং তার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারি (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি (২৮৯ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারি বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।