ঢাকা ১০:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪, ৯ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারত বাংলাদেশ চুক্তির বাস্তবতা নেই

মরণফাঁদ ফারাক্কার কারনে রাজশাহীর পদ্মা এখন মরুভুমি

নাজিম হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
  • আপডেট সময় : ০৫:৩৯:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪ ৫৩ বার পড়া হয়েছে

ভারতের মরণফাঁদ ফারাক্কার কারনে রাজশাহীর পদ্মা নদির পানি শুকিয়ে শুধু ধু ধু বালুচরের মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। এক সময়ের খরস্রোতা পদ্মার প্রবেশদ্বার রাজশাহীর বাংলাদেশী ভূখণ্ডে পদ্মায় পানি নেই বললেই চলে। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে পদ্মা চলে গেছে ফের ভারতীয় ভু-খন্ডের গঙ্গার মধ্যে। তবে বাংলাদেশের অংশে কিছু কিছু এলাকায় পায়ের গোড়ালি পানিতে পায়ে হেঁটেই নদী পার হচ্ছেন চরাঞ্চলের মানুষরা। এছাড়া বেশিরভাগ ধু ধু বালুচরে চলছে গরুর গাড়ি। আর পানি না থাকায় নদীতে মাছ ধরতে না পেরে মাতবেতর জীবনযাপন করছে পদ্মা পাড়ের জেলে পরিবারগুলো।গতকাল রবিবার সকালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় পদ্মা এখন ধু ধু বালুচর বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে ভারতের মনোহরপুরে ১৯৭৫ সালে মরণফাঁদ ফারাক্কা বাঁধ গড়ে তোলা হয়। এর প্রভাবেই পদ্মা এখন ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। ভারতের গঙ্গা বাংলাদেশের রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কিছু অংশ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে পদ্মা নাম ধারণ করেছে। এক সময়ের খরস্রোতা এ পদ্মা রাজা রাজবল্লভের কীর্তি ধ্বংস করেছিল বলে এটি কীর্তিনাশা নদী নামেও ব্যপক পরিচিতি পেয়েছিল। কিন্তু সেসব কথা পদ্মা ও পদ্মা পাড়ের মানুষের কাছে শুধুই স্মৃতিকথা। পদ্মা এখন আর কারও কীর্তি ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে না। মরণ ফাঁদ ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে বছরের অধিকাংশ সময় এখন পদ্মার বুকে থাকে না বিস্তৃত সেই জলধারা, পালতোলা নৌকা আর মাঝিমাল্লাদের গান। পদ্মার প্রবেশদ্বারেই যতদূর চোখ যায়, চোখে পড়ে কেবলই ধু ধু বালুচর। শুষ্ক মওসুমের আগেই পদ্মায় নৌকা চলাচলের পথ রুদ্ধ হওয়ায় মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে বালিচর পাড়ি দিয়ে গন্তব্য পৌঁছতে হচ্ছে গোদাগাড়ীর সভ্যতা বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের মানুষকে। আর মালামাল পরিবহনে দরকার পড়ছে গরুর গাড়ি। উজান থেকে আসছেনা পানি। ঐতিহাসিক ফারাক্কা চুক্তি অনুযায়ী প্রতিবছর পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশকে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি দেয়ার কথা। শুষ্ক মওসুমের এই সময়টিতে ভারত বাংলাদেশকে চুক্তি অনুযায়ী পানি প্রদান করলে পদ্মায় অন্তত পানিপ্রবাহ থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন। যা পদ্মার বর্তমান পরিণতি প্রমাণ করে চলে। গত ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পদ্মায় সর্বোচ্চ পানির গভীরতা রেকর্ড করা হয় ২৪ দশমিক ১৪ মিটার। গত কয়েক বছর থেকে পদ্মায় পানির গভীরতা ১৩ থেকে ১৪ মিটারে ওঠানামা করে। তবে এক দশক পর গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহী অঞ্চলে পদ্মার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপরে ১৮ দশমিক ৬২ মিটারে। ওই দিন বিকেলে পানি কিছুটা কমে এসে হয় ১৮ দশমিক ৫৮ মিটার। তবে পরদিন সকালে পদ্মার পানি ১২ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার নিচে এসে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৪৬ মিটারে। ভরা মওসুমে গত বছরের ২২ আগষ্ট পদ্মায় সর্বোচ্চ পানির গভীরতা রেকর্ড করা হয় ১৭ দশমিক ৪৫ মিটার। এর আগে গত ১৫ মে পানির গভীরতা ছিলো ৯ দশমিক ৩৪ মিটার। গত ২২ আগষ্টের পর থেকেই পদ্মার পানি প্রবাহ ক্রমাগত কমে আসতে আসতে বর্তমানে ধু ধু বালুচরের মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। তবে পদ্মার গর্ভে কিছু কিছু স্থানে স্রোতবিহীন অগভীর নীরব-নিথর ছোট ছোট কূপ রয়েছে। এদিকে পদ্মা নদীতে পানি নেই, মাছ নেই। তাই রাজশাহী অঞ্চলের হাজার হাজার জেলেরা বেকার হয়ে পড়েছেন। হাহাকার চলছে তাদের পরিবারের জীবন যাত্রা। এবং খেয়ে না খেয়ে কোনোরকমে দিন পার করছেন জেলেরা। অনেকে বাধ্য হয়ে বাপ দাদার হাজার বছরের পুরনো এ পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানাগেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ভারত বাংলাদেশ চুক্তির বাস্তবতা নেই

মরণফাঁদ ফারাক্কার কারনে রাজশাহীর পদ্মা এখন মরুভুমি

আপডেট সময় : ০৫:৩৯:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

ভারতের মরণফাঁদ ফারাক্কার কারনে রাজশাহীর পদ্মা নদির পানি শুকিয়ে শুধু ধু ধু বালুচরের মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। এক সময়ের খরস্রোতা পদ্মার প্রবেশদ্বার রাজশাহীর বাংলাদেশী ভূখণ্ডে পদ্মায় পানি নেই বললেই চলে। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে পদ্মা চলে গেছে ফের ভারতীয় ভু-খন্ডের গঙ্গার মধ্যে। তবে বাংলাদেশের অংশে কিছু কিছু এলাকায় পায়ের গোড়ালি পানিতে পায়ে হেঁটেই নদী পার হচ্ছেন চরাঞ্চলের মানুষরা। এছাড়া বেশিরভাগ ধু ধু বালুচরে চলছে গরুর গাড়ি। আর পানি না থাকায় নদীতে মাছ ধরতে না পেরে মাতবেতর জীবনযাপন করছে পদ্মা পাড়ের জেলে পরিবারগুলো।গতকাল রবিবার সকালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় পদ্মা এখন ধু ধু বালুচর বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে ভারতের মনোহরপুরে ১৯৭৫ সালে মরণফাঁদ ফারাক্কা বাঁধ গড়ে তোলা হয়। এর প্রভাবেই পদ্মা এখন ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। ভারতের গঙ্গা বাংলাদেশের রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কিছু অংশ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে পদ্মা নাম ধারণ করেছে। এক সময়ের খরস্রোতা এ পদ্মা রাজা রাজবল্লভের কীর্তি ধ্বংস করেছিল বলে এটি কীর্তিনাশা নদী নামেও ব্যপক পরিচিতি পেয়েছিল। কিন্তু সেসব কথা পদ্মা ও পদ্মা পাড়ের মানুষের কাছে শুধুই স্মৃতিকথা। পদ্মা এখন আর কারও কীর্তি ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে না। মরণ ফাঁদ ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে বছরের অধিকাংশ সময় এখন পদ্মার বুকে থাকে না বিস্তৃত সেই জলধারা, পালতোলা নৌকা আর মাঝিমাল্লাদের গান। পদ্মার প্রবেশদ্বারেই যতদূর চোখ যায়, চোখে পড়ে কেবলই ধু ধু বালুচর। শুষ্ক মওসুমের আগেই পদ্মায় নৌকা চলাচলের পথ রুদ্ধ হওয়ায় মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে বালিচর পাড়ি দিয়ে গন্তব্য পৌঁছতে হচ্ছে গোদাগাড়ীর সভ্যতা বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের মানুষকে। আর মালামাল পরিবহনে দরকার পড়ছে গরুর গাড়ি। উজান থেকে আসছেনা পানি। ঐতিহাসিক ফারাক্কা চুক্তি অনুযায়ী প্রতিবছর পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশকে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি দেয়ার কথা। শুষ্ক মওসুমের এই সময়টিতে ভারত বাংলাদেশকে চুক্তি অনুযায়ী পানি প্রদান করলে পদ্মায় অন্তত পানিপ্রবাহ থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন। যা পদ্মার বর্তমান পরিণতি প্রমাণ করে চলে। গত ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পদ্মায় সর্বোচ্চ পানির গভীরতা রেকর্ড করা হয় ২৪ দশমিক ১৪ মিটার। গত কয়েক বছর থেকে পদ্মায় পানির গভীরতা ১৩ থেকে ১৪ মিটারে ওঠানামা করে। তবে এক দশক পর গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহী অঞ্চলে পদ্মার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপরে ১৮ দশমিক ৬২ মিটারে। ওই দিন বিকেলে পানি কিছুটা কমে এসে হয় ১৮ দশমিক ৫৮ মিটার। তবে পরদিন সকালে পদ্মার পানি ১২ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার নিচে এসে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৪৬ মিটারে। ভরা মওসুমে গত বছরের ২২ আগষ্ট পদ্মায় সর্বোচ্চ পানির গভীরতা রেকর্ড করা হয় ১৭ দশমিক ৪৫ মিটার। এর আগে গত ১৫ মে পানির গভীরতা ছিলো ৯ দশমিক ৩৪ মিটার। গত ২২ আগষ্টের পর থেকেই পদ্মার পানি প্রবাহ ক্রমাগত কমে আসতে আসতে বর্তমানে ধু ধু বালুচরের মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। তবে পদ্মার গর্ভে কিছু কিছু স্থানে স্রোতবিহীন অগভীর নীরব-নিথর ছোট ছোট কূপ রয়েছে। এদিকে পদ্মা নদীতে পানি নেই, মাছ নেই। তাই রাজশাহী অঞ্চলের হাজার হাজার জেলেরা বেকার হয়ে পড়েছেন। হাহাকার চলছে তাদের পরিবারের জীবন যাত্রা। এবং খেয়ে না খেয়ে কোনোরকমে দিন পার করছেন জেলেরা। অনেকে বাধ্য হয়ে বাপ দাদার হাজার বছরের পুরনো এ পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানাগেছে।