ঢাকা ১০:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেতন-বোনাস পায়নি সাড়ে ৫ হাজার কারখানার শ্রমিক

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ০৯:১৮:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ১০০ বার পড়া হয়েছে

ঈদ উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। আর মাত্র একদিন পর অর্থাৎ ২১ এপ্রিল থেকে বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানেও ঈদের ছুটি শুরু হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মার্চ মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস পায়নি প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কারখানার শ্রমিক। শুধু তাই নয়, ৫০টির বেশি কল-কারখানার শ্রমিকরা এখনো ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পায়নি।

ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বেতন-বোনাস নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে শ্রমিকদের। এমন পরিস্থিতিতে ঈদ বোনাস ও অর্ধেক মাসের বেতনের দাবিতে কর্মবিরতি থেকে শুরু করে মহাসড়কও অবরোধ করছেন শ্রমিকরা।

কারখানা মালিকদের নেতারা আশ্বস্ত করছেন, বেতন ও বোনাস দিয়েই কল-কারখানায় ঈদের ছুটি দেওয়া হবে। ঈদের আগেই সব বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হবে।

অন্যদিকে ২৫ রমজান থেকে ২৭ রমজানের মধ্যে বেতন-বোনাস দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।

বাংলাদেশ শিল্পাঞ্চল পুলিশের তথ্যমতে, দেশে মোট ৯ হাজার ৬১৬ কলকারখানা রয়েছে। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) পর্যন্ত ৫ হাজার ৪৮৮টি কারখানার শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন- ঈদ বোনাস পরিশোধ করা হয়নি। তার মধ্যে শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন দেয়নি ১ হাজার ১৫৫টি কারখানা। আর বোনাস দেয়নি ৪ হাজার ৩৩৩টি কারখানার মালিকরা।

শিল্প পুলিশের তথ্যমতে, দেশের ৯ হাজার ৬১৬টি কল-কারখানার মধ্যে সর্বশেষ মার্চ মাসের শ্রমিকদের বেতন দিয়েছে ৮ হাজার ৪৬১টি। অর্থাৎ ১ হাজার ১৫৫টি কল-কারখানায় মার্চ মাসের বেতন হয়নি। শতাংশের হিসেবে ৮৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ কারখানায় বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ১২ দশমিক ১ শতাংশ কারখানায় শ্রমিকদের বেতন বাকি রয়েছে।

বাকি থাকা কারখানাগুলোর মধ্যে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত ১৬৩১টি কারখানার মধ্যে ১৪৮৪টির বেতন দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ১৪৭টি কারখানায় এখনো বেতন হয়নি।

একইভাবে বিকেএমইএ’র ৯৫টি, বিটিএমএ’র ২৪টি, বেপজার ১টি এবং অন্যান্য ৮৮৮টি কল-কারখানায় বেতন দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনও দেয়নি ৫০টি কলকারখানা মালিক।

অপরদিকে ৯ হাজার ৬১৬টি কল-কারখানার মধ্যে শ্রমিকদের ঈদের বোনাস দিয়েছে ৫২৮৩টি কারখানা। অর্থাৎ ৪ হাজার ৩৩৩টি কারখানায় বোনাস হয়নি। যা শতাংশের হিসেবে ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

এখনো বোনাস দেয়নি এমন কারখানার মধ্যে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান বেশি। এ খাতের ১৬৩১টির মধ্যে বোনাস পেয়েছে মাত্র ৮৫১টি কারখানার শ্রমিক। বাকি ৭৮০টি কারখানার শ্রমিকরা বোনাস পায়নি। যা শতকরা হিসেবে ৪৭ দশমিক ৮২ শতাংশ।

একইভাবে বিকেএমইএর ৭০০টির মধ্যে বোনাস পায়নি ২৪৬টির। বিটিএমএর ৩৫৮টির মধ্যে বোনাস হয়নি ১৭৪টির। বেপজার ৩৪৫টি কারখানার মধ্যে বোনাস হয়নি ২০টির।

পাটকল খাতের ৮৩টি কল-কারখানার মধ্যে ৪৪টির বোনাস পায়নি শ্রমিকরা। এছাড়া অন্যান্য খাতের ৬ হাজার ৪৯৯টি কারখানার মধ্যে বোনাস হয়নি ৩ হাজার ৬৯টির। সবমিলিয়ে ৪ হাজার ৩৩৩টি কারখানায় বোনাস হয়নি। শতাংশের হিসেবে ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ কারখানায় শ্রমিকদের বোনাস পরিশোধ হয়নি।

এ বিষয়ে তৈরি পোশাক মালিকদের প্রধান সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত কারখানায় চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে মার্চ মাসের বেতন দেওয়া শুরু হয়েছে। অল্প কিছু কারখানায় বেতন বাকি রয়েছে এগুলো আজ কালকের মধ্যে দিয়ে দেওয়া হবে। আর বেতনের পাশাপাশি বোনাস দিয়ে তারপরই কারখানাগুলো ঈদের ছুটিতে যাবে।

বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাতে গোনা কয়েকটি গার্মেন্টস হয়তো দেরি করছে কিন্তু অধিকাংশ কারখানা শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস দিয়ে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, আজ থেকে সরকারি ছুটি কিন্তু ২১ এপ্রিল থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ছুটি শুরু হবে। এই দুদিনে বড় অংশের বেতন ও বোনাস দেওয়া হয়।

তিনি প্রত্যাশা করেন, গত দুই-তিন বছর ধরে দুই-একটি কারখানা ছাড়া বেতন-বোনাস নিয়ে কোনো ঝামেলা হয়নি। এবছরও বেতন-বোনাস নিয়ে ঝামেলা হবে না। ঝামেলা সৃষ্টি হলে সবার উদ্যোগে সমাধান করা হবে। তবুও শ্রমিকদের ঈদের বেতন বোনাস পরিশোধ করা হবে।

নিটওয়্যার কারখানা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানার মধ্যে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানের বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা ছিল। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের প্রাইম টেক্সটাইল গতকাল বেতন-বোনাস দিয়ে দিয়েছে। আর একটি হচ্ছে- গাজীপুরের ক্রসলাইন টেক্সটাইল, এই কারখানা মালিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিয়ে দেবে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো সমস্যা দেখছি না। তারা ছুটির আগের বেতন-বোনাস দুটোই দিয়ে দিবে।

পোশাক কারখানা শ্রমিকদের সংগঠন বাংলাদেশ-জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, অর্ধেকের বেশি কারখানায় শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেয়নি। মালিকরা বলছেন দিয়ে দিবেন। আমরা তাদের বারবার বলার চেষ্টা করছি দ্রুত দিতে। কিন্তু তারা দেরি করছে।

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদে ছুটি শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনো অর্ধেক প্রতিষ্ঠানে বেতন-বোনাস হয়নি। ফলে ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের দাবি ছিল- ১৮ এপ্রিলের মধ্যে বেতন-বোনাস দিয়ে দেওয়ার জন্য। কারণ এরপর ব্যাংক বন্ধ থাকবে। ফলে শ্রমিকদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি হবে। কিন্তু এই সময়ে এখনো অর্ধেক শ্রমিক বেতন-বোনাস পায়নি। আমরা মালিকপক্ষকে বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেছি।

এদিকে বেতন-বোনাস পরিশোধ না করায় মঙ্গলবার গাজীপুরের শ্রীপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন হংকং সাংহাই মানজালা টেক্সটাইল মিলস নামে একটি কারখানার শ্রমিকরা।

রাজধানীর উত্তরার ইন্ট্রাকো ডিজাইন ও ইন্ট্রাকো ফ্যাশন লিমিটেডের এখনো সমস্যা চলছে। ভালুকার এডাম টেক্সটাইল লিমিটেড ও গাজীপুরের ক্রসলাইন এবং নারায়নগঞ্জের প্রাইম টেক্সটাইলের শ্রমিকরা বেতন বোনাসের দাবিতে কর্মবিরতি দিয়েছে। মালিকরা বেতন-বোনাস দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এখনো বেতন বোনাস পায়নি শ্রমিকরা।

ঈদের ছুটির আগে দ্রুত শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান এ আহ্বান জানান।

শ্রমিক নেতারা বলেন, শ্রমজীবী মানুষরা যেন খুশি মনে ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে পারেন, সেজন্য মালিকদের এগিয়ে আসতে হবে। তৈরি পোশাক শিল্পসহ সব প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ঈদের পূর্বে পরিশোধ করতে হবে।

তারা বলেন, প্রতি বছর ঈদের পূর্বে কিছু কিছু কল-কারখানায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মালিকরা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ না করে কারখানাগুলোতে ছুটি দিয়ে দেন। এতে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হন। শ্রমিকরা বেতন-ভাতার দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তারা রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হন। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। এ বছর যেন বিগত বছরগুলোর পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য মালিকদের যথাসময়ে বেতন-ভাতা পরিশোধের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বেতন-বোনাস পায়নি সাড়ে ৫ হাজার কারখানার শ্রমিক

আপডেট সময় : ০৯:১৮:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৩

ঈদ উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। আর মাত্র একদিন পর অর্থাৎ ২১ এপ্রিল থেকে বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানেও ঈদের ছুটি শুরু হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মার্চ মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস পায়নি প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কারখানার শ্রমিক। শুধু তাই নয়, ৫০টির বেশি কল-কারখানার শ্রমিকরা এখনো ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পায়নি।

ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বেতন-বোনাস নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে শ্রমিকদের। এমন পরিস্থিতিতে ঈদ বোনাস ও অর্ধেক মাসের বেতনের দাবিতে কর্মবিরতি থেকে শুরু করে মহাসড়কও অবরোধ করছেন শ্রমিকরা।

কারখানা মালিকদের নেতারা আশ্বস্ত করছেন, বেতন ও বোনাস দিয়েই কল-কারখানায় ঈদের ছুটি দেওয়া হবে। ঈদের আগেই সব বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হবে।

অন্যদিকে ২৫ রমজান থেকে ২৭ রমজানের মধ্যে বেতন-বোনাস দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।

বাংলাদেশ শিল্পাঞ্চল পুলিশের তথ্যমতে, দেশে মোট ৯ হাজার ৬১৬ কলকারখানা রয়েছে। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) পর্যন্ত ৫ হাজার ৪৮৮টি কারখানার শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন- ঈদ বোনাস পরিশোধ করা হয়নি। তার মধ্যে শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন দেয়নি ১ হাজার ১৫৫টি কারখানা। আর বোনাস দেয়নি ৪ হাজার ৩৩৩টি কারখানার মালিকরা।

শিল্প পুলিশের তথ্যমতে, দেশের ৯ হাজার ৬১৬টি কল-কারখানার মধ্যে সর্বশেষ মার্চ মাসের শ্রমিকদের বেতন দিয়েছে ৮ হাজার ৪৬১টি। অর্থাৎ ১ হাজার ১৫৫টি কল-কারখানায় মার্চ মাসের বেতন হয়নি। শতাংশের হিসেবে ৮৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ কারখানায় বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ১২ দশমিক ১ শতাংশ কারখানায় শ্রমিকদের বেতন বাকি রয়েছে।

বাকি থাকা কারখানাগুলোর মধ্যে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত ১৬৩১টি কারখানার মধ্যে ১৪৮৪টির বেতন দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ১৪৭টি কারখানায় এখনো বেতন হয়নি।

একইভাবে বিকেএমইএ’র ৯৫টি, বিটিএমএ’র ২৪টি, বেপজার ১টি এবং অন্যান্য ৮৮৮টি কল-কারখানায় বেতন দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনও দেয়নি ৫০টি কলকারখানা মালিক।

অপরদিকে ৯ হাজার ৬১৬টি কল-কারখানার মধ্যে শ্রমিকদের ঈদের বোনাস দিয়েছে ৫২৮৩টি কারখানা। অর্থাৎ ৪ হাজার ৩৩৩টি কারখানায় বোনাস হয়নি। যা শতাংশের হিসেবে ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

এখনো বোনাস দেয়নি এমন কারখানার মধ্যে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান বেশি। এ খাতের ১৬৩১টির মধ্যে বোনাস পেয়েছে মাত্র ৮৫১টি কারখানার শ্রমিক। বাকি ৭৮০টি কারখানার শ্রমিকরা বোনাস পায়নি। যা শতকরা হিসেবে ৪৭ দশমিক ৮২ শতাংশ।

একইভাবে বিকেএমইএর ৭০০টির মধ্যে বোনাস পায়নি ২৪৬টির। বিটিএমএর ৩৫৮টির মধ্যে বোনাস হয়নি ১৭৪টির। বেপজার ৩৪৫টি কারখানার মধ্যে বোনাস হয়নি ২০টির।

পাটকল খাতের ৮৩টি কল-কারখানার মধ্যে ৪৪টির বোনাস পায়নি শ্রমিকরা। এছাড়া অন্যান্য খাতের ৬ হাজার ৪৯৯টি কারখানার মধ্যে বোনাস হয়নি ৩ হাজার ৬৯টির। সবমিলিয়ে ৪ হাজার ৩৩৩টি কারখানায় বোনাস হয়নি। শতাংশের হিসেবে ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ কারখানায় শ্রমিকদের বোনাস পরিশোধ হয়নি।

এ বিষয়ে তৈরি পোশাক মালিকদের প্রধান সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত কারখানায় চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে মার্চ মাসের বেতন দেওয়া শুরু হয়েছে। অল্প কিছু কারখানায় বেতন বাকি রয়েছে এগুলো আজ কালকের মধ্যে দিয়ে দেওয়া হবে। আর বেতনের পাশাপাশি বোনাস দিয়ে তারপরই কারখানাগুলো ঈদের ছুটিতে যাবে।

বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাতে গোনা কয়েকটি গার্মেন্টস হয়তো দেরি করছে কিন্তু অধিকাংশ কারখানা শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস দিয়ে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, আজ থেকে সরকারি ছুটি কিন্তু ২১ এপ্রিল থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ছুটি শুরু হবে। এই দুদিনে বড় অংশের বেতন ও বোনাস দেওয়া হয়।

তিনি প্রত্যাশা করেন, গত দুই-তিন বছর ধরে দুই-একটি কারখানা ছাড়া বেতন-বোনাস নিয়ে কোনো ঝামেলা হয়নি। এবছরও বেতন-বোনাস নিয়ে ঝামেলা হবে না। ঝামেলা সৃষ্টি হলে সবার উদ্যোগে সমাধান করা হবে। তবুও শ্রমিকদের ঈদের বেতন বোনাস পরিশোধ করা হবে।

নিটওয়্যার কারখানা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানার মধ্যে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানের বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা ছিল। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের প্রাইম টেক্সটাইল গতকাল বেতন-বোনাস দিয়ে দিয়েছে। আর একটি হচ্ছে- গাজীপুরের ক্রসলাইন টেক্সটাইল, এই কারখানা মালিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিয়ে দেবে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো সমস্যা দেখছি না। তারা ছুটির আগের বেতন-বোনাস দুটোই দিয়ে দিবে।

পোশাক কারখানা শ্রমিকদের সংগঠন বাংলাদেশ-জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, অর্ধেকের বেশি কারখানায় শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেয়নি। মালিকরা বলছেন দিয়ে দিবেন। আমরা তাদের বারবার বলার চেষ্টা করছি দ্রুত দিতে। কিন্তু তারা দেরি করছে।

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদে ছুটি শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনো অর্ধেক প্রতিষ্ঠানে বেতন-বোনাস হয়নি। ফলে ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের দাবি ছিল- ১৮ এপ্রিলের মধ্যে বেতন-বোনাস দিয়ে দেওয়ার জন্য। কারণ এরপর ব্যাংক বন্ধ থাকবে। ফলে শ্রমিকদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি হবে। কিন্তু এই সময়ে এখনো অর্ধেক শ্রমিক বেতন-বোনাস পায়নি। আমরা মালিকপক্ষকে বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেছি।

এদিকে বেতন-বোনাস পরিশোধ না করায় মঙ্গলবার গাজীপুরের শ্রীপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন হংকং সাংহাই মানজালা টেক্সটাইল মিলস নামে একটি কারখানার শ্রমিকরা।

রাজধানীর উত্তরার ইন্ট্রাকো ডিজাইন ও ইন্ট্রাকো ফ্যাশন লিমিটেডের এখনো সমস্যা চলছে। ভালুকার এডাম টেক্সটাইল লিমিটেড ও গাজীপুরের ক্রসলাইন এবং নারায়নগঞ্জের প্রাইম টেক্সটাইলের শ্রমিকরা বেতন বোনাসের দাবিতে কর্মবিরতি দিয়েছে। মালিকরা বেতন-বোনাস দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এখনো বেতন বোনাস পায়নি শ্রমিকরা।

ঈদের ছুটির আগে দ্রুত শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান এ আহ্বান জানান।

শ্রমিক নেতারা বলেন, শ্রমজীবী মানুষরা যেন খুশি মনে ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে পারেন, সেজন্য মালিকদের এগিয়ে আসতে হবে। তৈরি পোশাক শিল্পসহ সব প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ঈদের পূর্বে পরিশোধ করতে হবে।

তারা বলেন, প্রতি বছর ঈদের পূর্বে কিছু কিছু কল-কারখানায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মালিকরা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ না করে কারখানাগুলোতে ছুটি দিয়ে দেন। এতে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হন। শ্রমিকরা বেতন-ভাতার দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তারা রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হন। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। এ বছর যেন বিগত বছরগুলোর পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য মালিকদের যথাসময়ে বেতন-ভাতা পরিশোধের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।