বিশ্ব অর্থনীতিতে ইতিবাচক সম্ভাবনা দেখছে না বিশ্ব ব্যাংক
- আপডেট সময় : ০২:২৭:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৩ ১১০ বার পড়া হয়েছে
করোনা মহামারীর ক্ষত এখনও পুরোপুরি সারেনি। গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চীন-তাইওয়ান সংঘাত। যার প্রভাব পড়েছে মূল্যবৃদ্ধিতে। আপাতত এই পরিস্থিতিতে আর্থিক বৃদ্ধিতে ইতিবাচক সম্ভাবনা দেখছে না বিশ্ব ব্যাংক। যদিও আমেরিকা এই বছর মন্দার অভিঘাত কিছুটা এড়াতে পারে বলে বিশ্বব্যাংক ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে আমেরিকার অর্থনীতি ০.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, মূলত আমেরিকা, ইউরোপ এবং চীনে বৃদ্ধির হার কমার কারণেই সামগ্রিক ভাবে বিশ্ব অর্থনীতির হাল খারাপ হবে।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নতুন বছরে বিশ্ব অর্থনীতির বৃদ্ধির হার সম্ভবত দাঁড়াবে ১.৭ শতাংশ। যা গত জুনে তাদেরই করা ৩ শতাংশ পূর্বাভাসের তুলনায় ১.৩ শতাংশ কম।
চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি ‘বিপজ্জনকভাবে মন্দার কাছাকাছি’ আসবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বের শীর্ষ তিনি অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং চীনের দুর্বল প্রবৃদ্ধির জেরেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
মূলত সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার বাড়ানোর প্রবণতা, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন অব্যাহত ও বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর নড়বড়ে অবস্থানের কারণে দেশগুলো অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি হয়েছে। আর এর জেরেই বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।
২০০৯ সাল ও ২০২০ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময়টা বাদ দিলে গত তিন দশকের মধ্যে এটিই হবে সবচেয়ে ধীর প্রবৃদ্ধির হার।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে, প্রবৃদ্ধির হার কমায় উদীয়মান অর্থনীতি ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। এসব দেশ ঋণের বোঝা মোকাবিলা করতে সমস্যায় পড়বে। এছাড়া দুর্বল মুদ্রা, আয়ের প্রবৃদ্ধিতে স্থবিরতা ও বাণিজ্যখাতে বিনিয়োগের পরিমাণ কমতে থাকায় পরবর্তী ২ বছরে এই দেশগুলোতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হয়েছে, যা গত ২ দশকের তুলনায় অর্ধেক।
বিশ্ব ব্যাংক উল্লেখ করেছে, ২০২২ সালের শেষের দিকে এসে জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের কারণে কিছু পরিমাণে মূল্যস্ফীতির চাপ কমে এসেছে, তবে সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, সরবরাহ খাতে নতুন করে বিঘ্ন দেখা দেওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি এবং সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির ধারা অটুট থাকতে পারে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো প্রতিক্রিয়া হিসেবে পলিসি রেট বর্তমান প্রত্যাশিত হারের চেয়ে বেশি হারে বাড়াতে পারে। এসব উদ্যোগের পরিণাম হিসেবে বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
নিম্ন আয়ের দেশগুলোর খাদ্য ও জ্বালানি সংকট, সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী এবং ঋণ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে বিশ্ব ব্যাংক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে।
এছাড়া ভর্তুকি মূল্যে অর্থায়ন ও অনুদান দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে বেসরকারি মূলধন ও অভ্যন্তরীণ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া, মানবসম্পদ তৈরি ও স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তার গুরুত্বের কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র এই বছর মন্দা এড়াতে পারে উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, মার্কিন অর্থনীতি ০.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। তবে উচ্চ মূল্য এবং আরও ব্যয়বহুল ঋণের হারের বৈশ্বিক দুর্বলতা সম্ভবত মার্কিন ব্যবসা এবং ভোক্তাদের জন্য আরেকটি বিপরীতমুখী পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।
এছাড়া যদি কোভিড-১৯ সংক্রমণ যদি বাড়তে থাকে বা ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ আরও খারাপ হয় তবে সরবরাহ ব্যবস্থাপনা আরও বিঘ্নিত হওয়া নিয়ে ঝুঁকিতে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে দুর্বল চীনা অর্থনীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইউরোপও। কারণ ইউরোপ দীর্ঘকাল ধরে চীনে প্রধান রপ্তানিকারকের ভূমিকায় রয়েছে।
বিশ্ব অর্থনীতির মতো বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমানো হয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নামবে ৫.২ শতাংশে।
যা আগের বছরের ৭.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থেকে কম। এর আগে গত বছরের অক্টোবরে বলা হয়েছিল, ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে বাংলাদেশের।
মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস জানুয়ারি ২০২৩ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, গৃহস্থালীর আয় ও সংস্থাগুলোর ব্যয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব, সেইসাথে জ্বালানি ঘাটতি, আমদানি বিধিনিষেধ এবং মুদ্রানীতি কঠোর হওয়ার কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৫.২ শতাংশে নামবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের অনুমিত এই প্রবৃদ্ধি আগের বছরের ৭.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় কম। কিন্তু আশা করা হচ্ছে, এটি আবারও বাড়বে এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ তার সম্ভাব্য গতিতে ফিরে আসবে।’
বিশ্বব্যাংক বলেছে, করোনা মহামারির কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এরপর ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। আর গত অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ।