বিদায় বেলায় নিজে কাঁদলেন, কাঁদালেন কোতোয়ালি থানার ওসি
- আপডেট সময় : ০৭:১৬:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫৩ বার পড়া হয়েছে
সহকর্মীদের চোখের জল আর ফুল সজ্জিত করে সংবর্ধনার মাধ্যমে ময়মনসিংহের কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি শাহ কামাল আকন্দকে বিদায় দেওয়া হয়েছে।
রবিবার (১০ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানানো হয় তাকে। এর আগে শনিবার রাতে কোতোয়ালি মডেল থানার আওতাধীন ১নং ফাঁড়ি ইনচার্জ ওয়াজেদ আলীর নেতৃত্বে বিদায়ী ওসিকে ফুলের শুভেচ্ছায় বিদায়ী সংবর্ধনা জানান ১নং ফাঁড়ি পুলিশ।
কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ১নং ফাড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক ওয়াজেদ আলী, ২নং ফাড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান, কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক অপারেশন মারফত আলী, পুলিশ পরিদর্শক ইন্টেলিজেন্স রাজন পাল, এসআই আনোয়ার হোসেন, এসআই দেবাশীষ সাহা, সাংবাদিক
মোঃ আব্দুল হাফিজ, কামরুল হাসান বক্তব্য রাখেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারা কোতোয়ালি মডেল থানার বিদায়ী ওসি শাহ কামাল আকন্দ কে তার সততা, নিষ্ঠা, সামাজিক কর্মকাণ্ডসহ পেশাগত কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা বলেন, ওসি স্যার আমাদের সঙ্গে দুই বছরের বেশী সময় ধরে সময় কাটিয়েছেন, তার কর্মদক্ষতা ও মানবিক কাজ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা যোগাবে। স্যার সারাজীবন আমাদের হৃদয়ে থাকবেন। কর্মজীবনে একজন ওসি তার সহকর্মীদের এত স্নেহ ও ভালোবাসা দিতে পারেন সেটা অন্য ওসির সময় পাইনি। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশী সহকর্মীদের সঙ্গে তিনি সদাচারণ করতেন। অনুষ্ঠানে কোতোয়ালি পুুলিশের পক্ষ থেকে তাকে মানপত্র, ফুলের তোড়াসহ সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
বিদায়ী ওসি শাহ কামাল আকন্দ মিডিয়ার কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে বলেন, করোনাকালের মানবিক কাজে সাংবাদিকগণ ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত সহায়তা করেছেন।অফিসার ফোর্সদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, কোতোয়ালিতে সেবা গ্রহিতারা এসে যাতে অসন্তোষ না হয়, জিডি ও মামলায় কেউ যাতে হয়রানী না হয় এবং দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় সকলকে সেই নির্দেশ দিয়েছি। সবাই আমার নির্দেশ যত কষ্টই হোক মেনে চলেছেন। কারো বিরুদ্ধে কোথাও অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তিনি আরো বলেন, ময়মনসিংহ বিভাগীয় ও শিক্ষা নগরী। প্রায় দুই লক্ষাধিক শিক্ষার্থী সহ সকল মানুষকে অল্প সংখ্যক অফিসার ফোর্স দিয়ে নিরাপত্তা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র সকলের আন্তরিকতার জন্য। তিনি সবশেষে বলেন, নগরীর আইন শৃংখলা যে অবস্থায় আছে এটা ধরে রাখবেন। কোথাও কোন অঘটন ঘটলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছার চেষ্টা করবেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, রাতভর রেললাইন প্রহরা দেয়ার মত দিবারাত্রি কাজ করছেন সহকর্মীরা। বিশেষ কোন সুবিধা দিতে পারলেও সহকর্মীরা ভালবাসার টানে আন্তরিকভাবে এ সব করেছেন। সামনে নির্বাচন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আগে নিজেদের সিকিউরিটি নিবেন। ইনচার্জ যে নির্দেশ দিবেন সেভাবেই চলবেন।
অফিসার ফোর্স গন বিদায়ী ওসি সম্পর্কে বলেন, কোতোয়ালি মডেল থানার ইতিহাসের পাতায় ওসি শাহ কামাল আকন্দের নাম লেখা থাকবে। অফিসার ফোর্সগন মায়ের কোলে সন্তানের মত নিরাপদ ছিল। তিনি একজন ভাল অভিভাবক, ভাল ম্যানেজার, ভাল অধিনায়ক। তার মাঝে সব গুনাবলী রয়েছে। কাকে দিয়ে কোন কাজটি করানো সম্ভব তা তিনি জানেন। তার কাছ থেকে অনেক শিখার রয়েছে।
অফিসার ইনচার্জ হিসেবে শাহ কামাল আকন্দ এর অর্জন, যা দিয়েছেন তা পরবর্তীতে কেউ পারবে কি না সন্দেহ। বিভিন্ন মামলার সটিক তদন্ত, গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটনে কঠিন মুহূর্তে ধৈর্য ধরে সফল হয়েছেন। এর আগে গাড়িগুলো পৃথকভাবে বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হয়। পরে ওসি শাহ কামাল আকন্দ কোতোয়ালি মডেল থানার নবাগত ওসি মোহাম্মদ মাইন উদ্দিনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।
ওসি আরো বলেন, কোতোয়ালিবাসীর ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। সারাজীবন কোতোয়ালি এলাকার মানুষের এই ভালোবাসা মনে রাখব। আমার কর্মজীবনে এমন সুন্দর মুহূর্ত কখনো কাটেনি। যোগদানের প্রথমদিনে সাংবাদিকদের উদ্যেশ্য করে বলেছিলাম পুলিশ হবে জনগণের প্রথম ভরসাস্থল। কোতোয়ালিতে থাকার শেষদিন পর্যন্ত সেটা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছি। ওসির বিদায়ে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আবেগঘন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
প্রসঙ্গত, শাহ কামাল আকন্দ গত ২০২১ সালের ১৯শে আগষ্ট কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে কোতোয়ালি এলাকায় একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়ায় জেলাবাসীর কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হোন।
এছাড়াও মাদক, সন্ত্রাস দমন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশংসনীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে ময়মনসিংহ জেলা ও বিভাগে একাধিকবার জেলার শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ নির্বাচিত হন। এ সময়ের মধ্যে কোতোয়ালি পুলিশও একাধিকবার বিভাগ ও জেলায় শ্রেষ্ঠ পুলিশ নির্বাচিত হয়। এর আগে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত থাকাকালেও রাষ্ট্রীয় পুরষ্কারপ্রাপ্তসহ পুলিশ রেঞ্জ ও জেলায় বার বার শ্রেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পুরস্কারপ্রাপ্ত হন আলোচিত ওসি শাহ কামাল আকন্দ। তাছাড়া গোয়েন্দা শাখায় অফিসার ইনচার্জ হিসাবে জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অনন্য ভূমিকা পালনকারী এবং করোনাকালীন সময়ে অসামান্য মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপনকরায় চৌকস মেধাবী এই পুলিশ কর্মকর্তা শাহ কামাল হোসেন আকন্দকে কোতোয়ালি মডেল থানায় ওসি হিসাবে নিযুক্ত করা হয়।
সততা, দক্ষতা ও মেধার সংমিশ্রনে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে পুলিশ বাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন শাহ কামাল হোসেন আকন্দ ডিবি ময়মনসিংহের ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ৬১ কোটি টাকার মাদক উদ্ধার ছাড়াও ৪৪ টি ক্লুলেস মার্ডার কেসের রহস্য উন্মোচন করে নগরব্যাপী আলোচনায় শিরোনাম হন।