ঢাকা ০৯:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজিবির উপর রোহিঙ্গাদের গুলি, ছিনিয়ে নিল দুজনকে

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৮:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৩ ৭৭ বার পড়া হয়েছে

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী সীমান্তে বিজিবি চৌকিতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলি নিক্ষেপ ও তল্লাশিকালে দুইজন রোহিঙ্গাকে বিজিবির হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ আল ইয়াকিন ও নবী হোসেন গ্রুপের সদস্যরা।

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় উখিয়া উপজেলার পালংখালী সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছেন পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী।

তিনি জানান, সীমান্তে বিজিবির চৌকিতে দায়িত্বরত বিজিবির সদস্যরা দুজন রোহিঙ্গা পুরুষ – নারীকে মিয়ানমার অভিমুখ থেকে আসতে দেখে থামার সংকেত দিয়ে তাদের তল্লাশি করে দায়িত্বরত বিজিবি। তল্লাশির আগেই মিয়ানমার থেকে ২০-২৫ জন মুখোশপরা অস্ত্রধারী ব্যক্তি গুলিবর্ষণ করে এবং ওই দুজনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এরপর বিজিবি চৌকিতে সন্ত্রাসীরা পরপর ২০ -৩০ রাউন্ড গুলি নিক্ষেপ করে। প্রায় আধা ঘণ্টা চলে গুলি বিনিময়।

চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন আরো বলেন, যারা এসব ঘটনা সংঘটিত করছে তারা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ আল ইয়াকিনের সদস্য। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক ইয়াবা ব্যবসা, নারী পাচার, মানবপাচার, অস্ত্র ব্যবসা ও অপহরণের মতো ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। এসব রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা বছরে ৬ মাস বাংলাদেশে অবস্থান করলে আর ৬ মাস মিয়ানমারে থাকে। মূলত মিয়ানমার থেকে এসব সরবরাহ করেন তারা এবং বাংলাদেশে নানা ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করেন।
আজকে যারা ওই দুজন নারী পুরুষকে তল্লাশিকালে বিজিবির কাছ থেকে ছিনিয়ে নিলো তাদের শরীরে পরনে ছিল চক্রমক্র পাতা রংয়ের জামা। স্থানীয়রা তাদের দেখে রীতিমতো আতংকিত হয়ে পড়েছেন।

এবিষয়ে বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের বালুখালী ক্যাম্প ইনচার্জ কোম্পানি কমান্ডার মোহাম্মদ মিজান জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৫ টা ৪০ মিনিটের দিকে মিয়ানমার থেকে একজন পুরুষ ও একজন নারী সীমান্ত অতিক্রম করে ধামনখালী নামক স্থানে টহলরত বিজিবির স্পেশাল টিম তাদের চ্যালেঞ্জ করলে ওপার থেকে রোহিঙ্গা নবি হোসেন গ্রুপ ও আল ইয়াকিনের সন্ত্রাসীরা বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণ করে , তখন তাৎক্ষণিকভাবে বিজিবি সদস্যরা পিছু হটলে ২০-৩০ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ রোহিঙ্গা দুই অনুপ্রবেশকারীকে ছিনিয়ে মিয়ানমারের উপারে নিয়ে যায়। তখনও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষণ অব্যাহত ছিল। এর ১০ মিনিট পর বিজিবি সদস্যরা পাঁচ থেকে ছয় রাউন্ড পাল্টা গুলি বর্ষণ করে, এতেও তাদের গুলি নিক্ষেপ থামেনি। পরে ক্যাম্পে এসে বিজিবি এলএমজি থেকে কয়েকদফা ফায়ার করলে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষণ থেমে যায়।

এঘটনার পর থেকে উক্ত এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে বান্দরবানের ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু, কোনার পাড়া, উত্তর পাড়া, বাইশফাঁড়ি ও চাকমা পাড়াসহ উখিয়া এবং টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অভ্যন্তরে দেশটির সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির সংর্ঘষ চলে। তিন মাসের মতো এ গোলাগুলি চলার পর কয়েক মাস বন্ধ থাকে।

ওইসব ঘটনার মধ্যে মিয়ানমার দিক থেকে ছোড়া মর্টার শেলসহ বিভিন্ন গোলাবারুদ বাংলাদেশে এসে পড়ে। মিয়ানমারের জেট ফাইটার হেলিকপ্টারও কয়েকবার আকাশসীমা লংঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে ঘুমধুমের কোনার পাড়া সীমান্তের শূন্যরেখার ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গা শিশু নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়।

সীমান্তে গোলাগুলির এসব ঘটনায় ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে বেশ কয়েকবার তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বিজিবির উপর রোহিঙ্গাদের গুলি, ছিনিয়ে নিল দুজনকে

আপডেট সময় : ০৮:৩৮:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৩

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী সীমান্তে বিজিবি চৌকিতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলি নিক্ষেপ ও তল্লাশিকালে দুইজন রোহিঙ্গাকে বিজিবির হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ আল ইয়াকিন ও নবী হোসেন গ্রুপের সদস্যরা।

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় উখিয়া উপজেলার পালংখালী সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছেন পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী।

তিনি জানান, সীমান্তে বিজিবির চৌকিতে দায়িত্বরত বিজিবির সদস্যরা দুজন রোহিঙ্গা পুরুষ – নারীকে মিয়ানমার অভিমুখ থেকে আসতে দেখে থামার সংকেত দিয়ে তাদের তল্লাশি করে দায়িত্বরত বিজিবি। তল্লাশির আগেই মিয়ানমার থেকে ২০-২৫ জন মুখোশপরা অস্ত্রধারী ব্যক্তি গুলিবর্ষণ করে এবং ওই দুজনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এরপর বিজিবি চৌকিতে সন্ত্রাসীরা পরপর ২০ -৩০ রাউন্ড গুলি নিক্ষেপ করে। প্রায় আধা ঘণ্টা চলে গুলি বিনিময়।

চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন আরো বলেন, যারা এসব ঘটনা সংঘটিত করছে তারা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ আল ইয়াকিনের সদস্য। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক ইয়াবা ব্যবসা, নারী পাচার, মানবপাচার, অস্ত্র ব্যবসা ও অপহরণের মতো ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। এসব রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা বছরে ৬ মাস বাংলাদেশে অবস্থান করলে আর ৬ মাস মিয়ানমারে থাকে। মূলত মিয়ানমার থেকে এসব সরবরাহ করেন তারা এবং বাংলাদেশে নানা ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করেন।
আজকে যারা ওই দুজন নারী পুরুষকে তল্লাশিকালে বিজিবির কাছ থেকে ছিনিয়ে নিলো তাদের শরীরে পরনে ছিল চক্রমক্র পাতা রংয়ের জামা। স্থানীয়রা তাদের দেখে রীতিমতো আতংকিত হয়ে পড়েছেন।

এবিষয়ে বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের বালুখালী ক্যাম্প ইনচার্জ কোম্পানি কমান্ডার মোহাম্মদ মিজান জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৫ টা ৪০ মিনিটের দিকে মিয়ানমার থেকে একজন পুরুষ ও একজন নারী সীমান্ত অতিক্রম করে ধামনখালী নামক স্থানে টহলরত বিজিবির স্পেশাল টিম তাদের চ্যালেঞ্জ করলে ওপার থেকে রোহিঙ্গা নবি হোসেন গ্রুপ ও আল ইয়াকিনের সন্ত্রাসীরা বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণ করে , তখন তাৎক্ষণিকভাবে বিজিবি সদস্যরা পিছু হটলে ২০-৩০ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ রোহিঙ্গা দুই অনুপ্রবেশকারীকে ছিনিয়ে মিয়ানমারের উপারে নিয়ে যায়। তখনও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষণ অব্যাহত ছিল। এর ১০ মিনিট পর বিজিবি সদস্যরা পাঁচ থেকে ছয় রাউন্ড পাল্টা গুলি বর্ষণ করে, এতেও তাদের গুলি নিক্ষেপ থামেনি। পরে ক্যাম্পে এসে বিজিবি এলএমজি থেকে কয়েকদফা ফায়ার করলে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষণ থেমে যায়।

এঘটনার পর থেকে উক্ত এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে বান্দরবানের ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু, কোনার পাড়া, উত্তর পাড়া, বাইশফাঁড়ি ও চাকমা পাড়াসহ উখিয়া এবং টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অভ্যন্তরে দেশটির সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির সংর্ঘষ চলে। তিন মাসের মতো এ গোলাগুলি চলার পর কয়েক মাস বন্ধ থাকে।

ওইসব ঘটনার মধ্যে মিয়ানমার দিক থেকে ছোড়া মর্টার শেলসহ বিভিন্ন গোলাবারুদ বাংলাদেশে এসে পড়ে। মিয়ানমারের জেট ফাইটার হেলিকপ্টারও কয়েকবার আকাশসীমা লংঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে ঘুমধুমের কোনার পাড়া সীমান্তের শূন্যরেখার ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গা শিশু নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়।

সীমান্তে গোলাগুলির এসব ঘটনায় ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে বেশ কয়েকবার তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।