বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেধেছেন তানোরের বিলকুমারীর বোরো চাষীরা
- আপডেট সময় : ১২:০৬:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩ ১৭৯ বার পড়া হয়েছে
সপ্তাহের মধ্যেই কাটা শুরু হবে রাজশাহীর তানোরের বিলকুমারী বিলের আগাম জাতের বোরো ধান, শীষে সোনালী আকার ধারন করতে শুরু করেছে। আবহাওয়া প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত অনুকুলে। কৃষি দপ্তরের সঠিক পরামর্শে ও তদারকিতে রোগেরও আক্রমন নেয়। বাম্পার ফলনের সম্ভবনা দেখছেন কৃষকরা। যুগযুগ ধরে বিলের জমিতে আগাম জাতের বোরো ধানের চাষাবাদ হয়ে আসছে। অনেক কৃষকের সারা বছরের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন বিলের জমিতে বোরো ধান। ধানপাকা খরতাপ শুরু হয়েছে। বিল জুড়েই সোনালী সবুজ শীষের চমৎকার দৃশ্য। অল্পদিনের মধ্যেই রক্ত ঘামের পরিশ্রমের ধান উঠানে আসবে। আসায় বুক বেধেছেন বিল পাড়ের কৃষক কৃষানীরা।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, তানোর উপজেলার চান্দুড়িয়া ব্রীজ ঘাট থেকে তানোর পৌর এলাকা হয়ে কামারগাঁ ইউপির বা উপজেলার শেষপ্রান্ত মালশিরা পর্যন্ত বিল কুমারী বিলের অংশ। যুগযুগ ধরে বিলের জমিতে বোরো চাষ হয়ে থাকে। বিলের মুল অংশ পৌর সদর গুবিরপাড়া, শীতলীপাড়া, কুঠিপাড়ার নিচ অংশকে ধরা হয়। মাত্র ৩০ বিঘা জলাশয় রয়েছে। তাছাড়া বাকি এরিয়া ধানী জমিতে রুপান্তর। মাঝ দিয়ে সরু খাল রয়েছে কয়েকভাগে। এখাল বিলের নিচুঁ জমিতে সেচের ভরসা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার কামারগাঁ ইউপির মালশিরা, মাড়িয়া, জমসেদপুর মাদারিপুর, মির্জাপুর, ভবানীপুর, বাতাসপুর, পারিশো দূর্গাপুর, শ্রীখন্ডা, দমদমা, মজুমদারপাড়া, কামারগাঁ, মহাদেবপুর, হাতিশাইল ও তানোর পৌর এলাকার তালন্দ, সুমাসপুর, হরিদেবপুর, গোকুল, চাপড়া, ধানতৈড়, গুবিরপাড়া, সিন্দুকাই, হিন্দুপাড়া, কুঠিপাড়া, তানোরপাড়া, গোল্লাপাড়া, আমশো, জিওল, চাদপুর, বুরুজ, হাবিবনগর, কালিগঞ্জ, মাসিন্দা, চান্দুড়িয়া ইউপির, শিবনা দমদমা, চান্দুড়িয়া, কলমা ইউপির কুযিশহর, চন্দনকোঠা এলাকার নিচে বিলকুমারী বিলের জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে শুরু হবে ধান কাটা ও মাড়ায়।
এদিকে বিলের নিচুঁ জমি খাস, সেই খাস জমিতে ভূমুহীন কৃষকরা অল্প খরচে চাষ করে বছরের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
ভূমিহীন গুবিরপাড়া গ্রামের কৃষক ফারুক বলেন, প্রায় এক বিঘার বেশি জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। খরচ খুব একটা হয় না। ধানের চেহারা ভালোই আছে। ঈদের দু’একদিন পর ধান কাটা হবে। বিঘায় ২০ মন করে ফলন হয়। তবে বৃষ্টি হলে পাওয়া যায় না। শুধু আমি না অনেক দরিদ্র ভূমিহীনরা নিচের জমি রোপন করেন। এবার আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকুলে আছে।
কৃষক সাহেব বলেন, ঈদের আগে তার ধান কাটা হবে। বিলের জমিতে ফলন বাম্পার হয়। পাঁচ বিঘা জমির ধান পাক ধরেছে। ধান পাকা খরতাপ শুরু হয়েছে। এরকম আবহাওয়া থাকলে সুষ্ঠ ভাবে দান ঘরে উঠবে। ফলনও ভালো হবে এবং দামও ভালো আছে। তিনি আরো বলেন , সব জমিতে ধান পাক ধরেছে, ঈদের আগে থেকেই কাটা শুরু হবে। আর যদি বৈশাখী ঝড় বৃষ্টিপাত হয় তাহলে মোড়কের শেষ থাকবে না। শীতলীপাড়া গুবিরপাড়ার নিচে সব জমির ধান কমবেশি প্রায় একই সাথে কাটা পড়ে।
কৃষক বকুল বলেন, শীতলীপাড়ার নিচে প্রায় এক বিঘা জমির ধানে পাক ধরেছে। ঈদের আগে শ্রমিক পেলে কাটা হবে, নচেৎ ঈদের পরদিন থেকেই কাটতে হবে।
কামারগাঁ ইউপির কৃষকরা বলছেন, আমরা সবার আগে ধান রোপন করি। দু চারদিনের মধ্যে ধান কাটা শুরু হবে। কারন সামান্য বৃষ্টি হলে ইউপির জমিগুলো আগে ঢুবে যায়। এজন্য সবাই আগেই রোপন করে এবং আগেই কাটা মাড়ায় শুরু হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি ফরহাদ বলেন, ধান গাছে প্রচুর শীষ এসেছে, চেহেরাও ভালো আছে। দু’চার দিনের মধ্যে কৃষকরা ধান কাটা শুরু করবেন। বিলের জমিতে ফলন ভালো হয় এবং এবছর দামও ভালো। ফলে কৃষকরা আশায় বুতমক বেধেছেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আবহাওয়া এরকম থাকলে বাম্পার ফলন ও লাভ করতে পারবে কৃষকরা আর যদি ঝড় বৃষ্টি হয় তাহলে মোড়কের শেষ থাকবে না। কারন সার কীটনাশকের দাম বেশি, এজন্য যেকোন বছরের তুলনায় খরচ কিছুটা বেশি হয়েছে।
তানোর পৌর মেয়র ইমরুল হক বলেন, ধান পাকা রোদ বা খরতাপ চলছে। এমব আবহাওয়া চলতে থাকলে সুষ্ঠু ভাবে কৃষকরা তাদের কষ্টের সোনালী ফসল ধান ঘরে তুলতে পারবে। পৌর এলাকার কৃষকদের বছরের খাবারের ভরসা বিলের জমি। এজমি থেকে য়ে পরিমান ধান পায় সেটা বছরের খাবার হয়। বিশেষ করে কুঠিপাড়া,শীতলীপাড়া, হিন্দুপাড়া ও গুবিরপাড়া গ্রামের অনেক ভূমিহীনরা বিলের নিচুঁ জমি রোপন করে থাকেন। সেই রোপনকৃত জমি থেকে যে পরিমান ধান পায় সেটা বছরের খাবার ও খড় দিয়ে জালানি এবং গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। আবহাওয়ার ভালো থাকবে বলে তো সবাই মনে করছেন। তবে বৈশাখের ঝড় বৃষ্টি নিয়ে তো একটা শংকা সবারই আছে।
তানোর উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, তানোর উপজেলার চান্দুড়িয়া ব্রীজ ঘাট থেকে কামারগাঁ ইউপির মালশিরা গ্রাম বা চৌবাড়িয়া ব্রীজ পর্য়ন্ত ৩৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। নিয়োমিত মাঠে থেকে কাজ করা হয়েছে। একাধিক মাঠ দিবস পালন করার কারনে ধানে রোগবালা নেই। আবহাওয়া অনুকুলে আছে। কয়েকদিনের মধ্যে ধান কাটা শুরু হবে। ফলন ভালো হবে এবং দামও ভালো আছে। এবছর উপজেলায় ১৩ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে।