ঢাকা ১২:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাজেটে বাড়তে পারে নিত্যপণ্যের দাম

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ০৮:৫৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ মে ২০২৩ ৭৩ বার পড়া হয়েছে

বৈশ্বিক কারণে দেশের বাজারে পণ্যের দামের রোধে আগামী বাজেটে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং সরকারের আয় বাড়াতে ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মানতে গিয়ে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যাতে অনেক খাতে খরচ বাড়বে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন।

তবে, নির্বাচনের আগের শেষ বাজেট হওয়ায় ব্যবসায়ীদের খুশি করতেও কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘মানুষের আয় বাড়েনি। আগামী বাজেটে আয় বাড়াতে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। এতে অনেক খাতে খরচ আরও বাড়বে। নির্বাচনের আগে শেষ বাজেট হওয়ায় নির্বাচনী চমক হিসেবেও কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। বৈশ্বিক কারণে এসবের সুফল পাওয়া কঠিন। এ ছাড়া ব্যবসায়ীরা একবার দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা শুরু করলে তা আর কমাতে চায় না।

গত মাস ছয়েক ধরে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৮-৯ শতাংশের ঘরে। সরকার দাম কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও সেসবের সুফল তেমন পাওয়া যায়নি। এক বছর ধরে সব ধরনের চালের দাম বেশি। আটা, ময়দা, চিনি, ভোজ্য তেলের দাম প্রায় দ্বিগুণ। দাম বাড়তি বলে মাছ, মাংস, ডিম, দুধসহ অনেক খাবার সাধারণ আয়ের পরিবারগুলো খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতেও আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, বুট, ডাল, হলুদ, মরিচ, ভুট্টা, আটা, ময়দা, ভোজ্য তেল, চিনি, ফল, লবণের দাম কমানোর চেষ্টা করা হয়নি।

আইএমএফের শর্তে রাজস্ব সুবিধা কমানোয় পাউরুটি, বিস্কুট, সাবান, শ্যাম্পু, প্রক্রিয়াজাত খাবারের দাম বাড়বে। ভ্যাটের হার বাড়ানোয় মিষ্টির দামও বাড়বে। দেশে উৎপাদিত জুতা, স্যান্ডেলের দাম কমানো হচ্ছে না। আমদানিকৃত পণ্যের দাম বাড়বে। আগামী অর্থবছরেও চেইন শপ থেকে পণ্য কিনতে হলে ভ্যাটের সর্বোচ্চ হার ১৫ শতাংশের সঙ্গে আরও ৫ শতাংশ বাড়তি দিতে হবে ক্রেতাকে। খামারে চাষ করা ৩০ লাখ টাকার বেশি মাছ বিক্রিতে ১৫ শতাংশ রাজস্ব থাকছে। একই সঙ্গে বড় মাছ আমদানিতেও সম্পূরক শুল্ক আসছে। শুল্ক-করের মারপ্যাঁচে আমদানিকৃত ও দেশে চাষ করা বড় মাছের দাম কমানোর সুযোগ থাকছে না। আগামী অর্থবছরের রাজস্ব বাজেট প্রস্তাব ও প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে এসব তথ‍্য জানা গেছে।

আগামী অর্থবছরে মোবাইল ব্যবহারে খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশি কোম্পানির মোবাইলের উৎপাদন পর্যায়ে তিন স্তরে ভ্যাট বসানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। নিজেরা যন্ত্রপাতি বানিয়ে উৎপাদন করলে ৩ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। সংযোজন করলে দুভাবে ভ্যাট আরোপ হবে। কমপক্ষে দুটি যন্ত্রাংশ নিজেরা বানিয়ে মোবাইল উৎপাদন করলে ৫ শতাংশ এবং সব যন্ত্রাংশ আমদানি করে সংযোজন করলে সাড়ে ৭ থেকে ১০ শতাংশ ভ্যাট বসতে পারে। অন্যদিকে ফ্রিজ তৈরির উপকরণ ও যন্ত্রাংশ আমদানি এবং স্থানীয় ক্রয়ের ক্ষেত্রে কর ছাড় সুবিধা রয়েছে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এ সুবিধা বাড়ানো না হলে এ পণ্যের দামও বাড়বে। আমদানিকৃত মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও মোটরসাইকেলের দাম কমাতে কিছু থাকছে না। আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতার প্রভাব এড়াতে বাজেটে কিছু না থাকায় দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিলে ভ্রমণকর ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সব ধরনের পরিবহনে যাতায়াতে খরচ বাড়ছে। আগামী বাজেটে গাড়ির মালিকদের খরচ অনেকটা বাড়ানো হয়েছে। একাধিক গাড়ি আছে এমন করদাতাদের দ্বিতীয় গাড়ির নিবন্ধন ও নবায়নের সময় ২৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত কার্বন কর দিতে হতে পারে। একই সঙ্গে উচ্চ সিসির অর্র্থাৎ দামি গাড়ির শুল্ক হার বাড়ানো হতে পারে। ২০০১ থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির সম্পূরক শুল্ক ২০০ থেকে বাড়িয়ে ২৫০ শতাংশ ও ৩০০১ থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত ৩৫০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ শতাংশ করা হতে পারে। বিদ্যমান আইনে অগ্রিম কর ২৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা; এ হিসাব ক্ষেত্রবিশেষে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে অর্থ বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আবাসন খাতে নিবন্ধন ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে এনবিআর। আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের এতে আপত্তি আছে। প্রস্তাব কার্যকর হলে আগামী অর্থবছরে ফ্ল্যাট ও প্লটের দাম বাড়বে। ধোঁয়া ও ধোঁয়াহীন তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে। আমদানিকৃত মদের দাম কমাবে না। বিলাসবহুল অনেক পণ্যের শুল্ক হার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

আমদানি শুল্ক বাড়ানোয় বিদেশি খেলনার দাম বাড়বে। দেশি খেলনার দাম কমবে না। বিউটি পার্লারের খরচ, প্রসাধনী ও জুয়েলারির দাম বাড়বে। সোনার দাম কমাতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোতে প্রিন্টিং প্লেট, লিফট, সোলার প্যানেল, মিটার, কম্পিউটার প্রিন্টার, টোনার, বিদেশি চকলেট, বাটার, চিজ, প্রক্রিয়াজাত ও রেডি টু কনজিউম কফির দাম বাড়তি থাকছে। বিদেশি গ্যাস লাইটার ও দেশলাই আমদানি খরচও বাড়তি থাকতে পারে। বোতলজাত পানি ও বাসাবাড়িতে পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য ব্যবহৃত ওয়াটার পিউরিফায়ারের দামও বেশি থাকতে পারে।

ক্লাডউ সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, ই-বুক পাবলিকেশন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস ও ফ্রিল্যান্সিং খাতে রাজস্ব ছাড় না দেওয়ায় খরচ কমছে না।

সারের দাম বাড়ানো হয়েছে। আগামী বাজেটে কৃষি যন্ত্রপাতিতে রাজস্বের থাবা বসানো হয়নি। তবে বৈশি^ক কারণে দাম বাড়লে তা ঠেকানোর পদক্ষেপ নেই।

আগামী বাজেটে মেড ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ডের উৎপাদনে আগ্রহী করতে দেশি শিল্পের সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে ছাড় দেওয়া হয়েছে। দেশি শিল্পে চাহিদা বেশি এমন অনেক কাঁচামালের আমদানি শুল্কে ছাড় দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, লোহার রড, স্ক্র্যাব, মোটরসাইকেল ও গাড়ির যন্ত্রাংশ, নির্মাণসামগ্রী, টেক্সটাইল, চামড়া খাত, পাটশিল্প, দেশি টেলিভিশন, এসি, মোবাইল, ওষুধ ও অটোমোবাইল শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানিতে ছাড় থাকছে। সম্পূর্ণ আমদানিকৃত মোটরসাইকেলের চেয়ে দেশে সংযোজিত বা উৎপাদিত মোটরসাইকেল শিল্পে বেশি সুবিধা থাকছে। মোটরসাইকেল উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ আমদানিতে নিম্ন হারে শুল্ক হার বহাল থাকছে। জ্বালানি খাতে দফায় দফায় দাম বাড়ানোয় শিল্প খাতে সংকট বেড়েছে। জ্বালানির ১৩ পণ্যে অগ্রিম কর অব্যাহতি দিয়ে দাম বাড়ার ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করা হয়েছে। দেশে উৎপাদিত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সার্ভার, মাদারবোর্ড এবং সফটওয়্যার উন্নয়নে বিদ্যমান সুবিধ বহাল থাকছে।

সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন কাস্টমাইজেশন, এনটিটিএন, ডিজিটাল কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, ডিজিটাল অ্যানিমেশন ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট সার্ভিস, ওয়েব লিস্টিং, আইটি প্রসেস আউটসোর্সিং, ওয়েবসাইট হোস্টিং, ডিজিটাল গ্রাফিকস ডিজাইন, ডিজিটাল ডেটা এন্ট্রি অ্যান্ড প্রসেসিং, ডিজিটাল ডেটা অ্যানালিটিকস, জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস, আইটি সাপোর্ট অ্যান্ড সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্স সার্ভিস, সফটওয়্যার ল্যাব টেস্ট সার্ভিস, কল সেন্টার সার্ভিস, ওভারসিজ মেডিকেল ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিস, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সার্ভিস, ডকুমেন্ট কনভারশন, রোবোটিকস প্রসেস আউটসোর্সিং ও সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিস খাতে খরচ বাড়ানো হয়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বাজেটে বাড়তে পারে নিত্যপণ্যের দাম

আপডেট সময় : ০৮:৫৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ মে ২০২৩

বৈশ্বিক কারণে দেশের বাজারে পণ্যের দামের রোধে আগামী বাজেটে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং সরকারের আয় বাড়াতে ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মানতে গিয়ে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যাতে অনেক খাতে খরচ বাড়বে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন।

তবে, নির্বাচনের আগের শেষ বাজেট হওয়ায় ব্যবসায়ীদের খুশি করতেও কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘মানুষের আয় বাড়েনি। আগামী বাজেটে আয় বাড়াতে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। এতে অনেক খাতে খরচ আরও বাড়বে। নির্বাচনের আগে শেষ বাজেট হওয়ায় নির্বাচনী চমক হিসেবেও কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। বৈশ্বিক কারণে এসবের সুফল পাওয়া কঠিন। এ ছাড়া ব্যবসায়ীরা একবার দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা শুরু করলে তা আর কমাতে চায় না।

গত মাস ছয়েক ধরে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৮-৯ শতাংশের ঘরে। সরকার দাম কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও সেসবের সুফল তেমন পাওয়া যায়নি। এক বছর ধরে সব ধরনের চালের দাম বেশি। আটা, ময়দা, চিনি, ভোজ্য তেলের দাম প্রায় দ্বিগুণ। দাম বাড়তি বলে মাছ, মাংস, ডিম, দুধসহ অনেক খাবার সাধারণ আয়ের পরিবারগুলো খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতেও আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, বুট, ডাল, হলুদ, মরিচ, ভুট্টা, আটা, ময়দা, ভোজ্য তেল, চিনি, ফল, লবণের দাম কমানোর চেষ্টা করা হয়নি।

আইএমএফের শর্তে রাজস্ব সুবিধা কমানোয় পাউরুটি, বিস্কুট, সাবান, শ্যাম্পু, প্রক্রিয়াজাত খাবারের দাম বাড়বে। ভ্যাটের হার বাড়ানোয় মিষ্টির দামও বাড়বে। দেশে উৎপাদিত জুতা, স্যান্ডেলের দাম কমানো হচ্ছে না। আমদানিকৃত পণ্যের দাম বাড়বে। আগামী অর্থবছরেও চেইন শপ থেকে পণ্য কিনতে হলে ভ্যাটের সর্বোচ্চ হার ১৫ শতাংশের সঙ্গে আরও ৫ শতাংশ বাড়তি দিতে হবে ক্রেতাকে। খামারে চাষ করা ৩০ লাখ টাকার বেশি মাছ বিক্রিতে ১৫ শতাংশ রাজস্ব থাকছে। একই সঙ্গে বড় মাছ আমদানিতেও সম্পূরক শুল্ক আসছে। শুল্ক-করের মারপ্যাঁচে আমদানিকৃত ও দেশে চাষ করা বড় মাছের দাম কমানোর সুযোগ থাকছে না। আগামী অর্থবছরের রাজস্ব বাজেট প্রস্তাব ও প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে এসব তথ‍্য জানা গেছে।

আগামী অর্থবছরে মোবাইল ব্যবহারে খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশি কোম্পানির মোবাইলের উৎপাদন পর্যায়ে তিন স্তরে ভ্যাট বসানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। নিজেরা যন্ত্রপাতি বানিয়ে উৎপাদন করলে ৩ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। সংযোজন করলে দুভাবে ভ্যাট আরোপ হবে। কমপক্ষে দুটি যন্ত্রাংশ নিজেরা বানিয়ে মোবাইল উৎপাদন করলে ৫ শতাংশ এবং সব যন্ত্রাংশ আমদানি করে সংযোজন করলে সাড়ে ৭ থেকে ১০ শতাংশ ভ্যাট বসতে পারে। অন্যদিকে ফ্রিজ তৈরির উপকরণ ও যন্ত্রাংশ আমদানি এবং স্থানীয় ক্রয়ের ক্ষেত্রে কর ছাড় সুবিধা রয়েছে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এ সুবিধা বাড়ানো না হলে এ পণ্যের দামও বাড়বে। আমদানিকৃত মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও মোটরসাইকেলের দাম কমাতে কিছু থাকছে না। আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতার প্রভাব এড়াতে বাজেটে কিছু না থাকায় দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিলে ভ্রমণকর ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সব ধরনের পরিবহনে যাতায়াতে খরচ বাড়ছে। আগামী বাজেটে গাড়ির মালিকদের খরচ অনেকটা বাড়ানো হয়েছে। একাধিক গাড়ি আছে এমন করদাতাদের দ্বিতীয় গাড়ির নিবন্ধন ও নবায়নের সময় ২৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত কার্বন কর দিতে হতে পারে। একই সঙ্গে উচ্চ সিসির অর্র্থাৎ দামি গাড়ির শুল্ক হার বাড়ানো হতে পারে। ২০০১ থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির সম্পূরক শুল্ক ২০০ থেকে বাড়িয়ে ২৫০ শতাংশ ও ৩০০১ থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত ৩৫০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ শতাংশ করা হতে পারে। বিদ্যমান আইনে অগ্রিম কর ২৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা; এ হিসাব ক্ষেত্রবিশেষে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে অর্থ বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আবাসন খাতে নিবন্ধন ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে এনবিআর। আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের এতে আপত্তি আছে। প্রস্তাব কার্যকর হলে আগামী অর্থবছরে ফ্ল্যাট ও প্লটের দাম বাড়বে। ধোঁয়া ও ধোঁয়াহীন তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে। আমদানিকৃত মদের দাম কমাবে না। বিলাসবহুল অনেক পণ্যের শুল্ক হার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

আমদানি শুল্ক বাড়ানোয় বিদেশি খেলনার দাম বাড়বে। দেশি খেলনার দাম কমবে না। বিউটি পার্লারের খরচ, প্রসাধনী ও জুয়েলারির দাম বাড়বে। সোনার দাম কমাতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোতে প্রিন্টিং প্লেট, লিফট, সোলার প্যানেল, মিটার, কম্পিউটার প্রিন্টার, টোনার, বিদেশি চকলেট, বাটার, চিজ, প্রক্রিয়াজাত ও রেডি টু কনজিউম কফির দাম বাড়তি থাকছে। বিদেশি গ্যাস লাইটার ও দেশলাই আমদানি খরচও বাড়তি থাকতে পারে। বোতলজাত পানি ও বাসাবাড়িতে পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য ব্যবহৃত ওয়াটার পিউরিফায়ারের দামও বেশি থাকতে পারে।

ক্লাডউ সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, ই-বুক পাবলিকেশন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস ও ফ্রিল্যান্সিং খাতে রাজস্ব ছাড় না দেওয়ায় খরচ কমছে না।

সারের দাম বাড়ানো হয়েছে। আগামী বাজেটে কৃষি যন্ত্রপাতিতে রাজস্বের থাবা বসানো হয়নি। তবে বৈশি^ক কারণে দাম বাড়লে তা ঠেকানোর পদক্ষেপ নেই।

আগামী বাজেটে মেড ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ডের উৎপাদনে আগ্রহী করতে দেশি শিল্পের সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে ছাড় দেওয়া হয়েছে। দেশি শিল্পে চাহিদা বেশি এমন অনেক কাঁচামালের আমদানি শুল্কে ছাড় দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, লোহার রড, স্ক্র্যাব, মোটরসাইকেল ও গাড়ির যন্ত্রাংশ, নির্মাণসামগ্রী, টেক্সটাইল, চামড়া খাত, পাটশিল্প, দেশি টেলিভিশন, এসি, মোবাইল, ওষুধ ও অটোমোবাইল শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানিতে ছাড় থাকছে। সম্পূর্ণ আমদানিকৃত মোটরসাইকেলের চেয়ে দেশে সংযোজিত বা উৎপাদিত মোটরসাইকেল শিল্পে বেশি সুবিধা থাকছে। মোটরসাইকেল উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ আমদানিতে নিম্ন হারে শুল্ক হার বহাল থাকছে। জ্বালানি খাতে দফায় দফায় দাম বাড়ানোয় শিল্প খাতে সংকট বেড়েছে। জ্বালানির ১৩ পণ্যে অগ্রিম কর অব্যাহতি দিয়ে দাম বাড়ার ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করা হয়েছে। দেশে উৎপাদিত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সার্ভার, মাদারবোর্ড এবং সফটওয়্যার উন্নয়নে বিদ্যমান সুবিধ বহাল থাকছে।

সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন কাস্টমাইজেশন, এনটিটিএন, ডিজিটাল কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, ডিজিটাল অ্যানিমেশন ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট সার্ভিস, ওয়েব লিস্টিং, আইটি প্রসেস আউটসোর্সিং, ওয়েবসাইট হোস্টিং, ডিজিটাল গ্রাফিকস ডিজাইন, ডিজিটাল ডেটা এন্ট্রি অ্যান্ড প্রসেসিং, ডিজিটাল ডেটা অ্যানালিটিকস, জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস, আইটি সাপোর্ট অ্যান্ড সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্স সার্ভিস, সফটওয়্যার ল্যাব টেস্ট সার্ভিস, কল সেন্টার সার্ভিস, ওভারসিজ মেডিকেল ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিস, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সার্ভিস, ডকুমেন্ট কনভারশন, রোবোটিকস প্রসেস আউটসোর্সিং ও সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিস খাতে খরচ বাড়ানো হয়নি।