ফলন ভালো হয়েও লোকসানে ভোলার আলু চাষিরা
- আপডেট সময় : ০৯:৪৪:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মার্চ ২০২৩ ১০৩ বার পড়া হয়েছে
পোকার আক্রমণে ভোলার আলু চাষিদের অধিকাংশ আলু নষ্ট হয়ে গেছে। তাই ফলন ভালো হলেও কৃষকের মুখ মলিন। রোববার (১৯ মার্চ) দুপুরের দিকে ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা, পূর্ব ইলিশা, বাপ্তা, রাজাপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে চাষিরা খেত থেকে আলু তুলছেন। তাতে অধিকাংশ আলুই পোকার আক্রমণে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আলু চাষিরা ভুগছেন দুশ্চিন্তায়। খরচটাও পুষিয়ে উঠতে পারবেন না হয়তো সেই আশঙ্কায় আছেন তারা।
পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক ইউছুফ (৪৬) বলেন, আমি ১৩ গণ্ডা বর্গা জমিতে ২০ মণ বীজ আলু আবাদ করেছি। এতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমি আশাবাদী এবার জমি থেকে প্রায় ২৫০ মণ আলু পাব। বর্তমান আলুর বাজার চলছে মণ প্রতি ৪০০ টাকা। এতে আমি ১ লাখ টাকার মতো আলু বিক্রি করতে পারব। তাতে ক্ষতি হতে পারে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। কারণ শেষ সময়ের দিকে আলুখেতে সেনি পোকা আক্রমণ করছে। তাই এক অংশ আলু নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি অফিসার সেনি পোকা দমনের জন্য কোনো পরামর্শ দেয়নি। আর সরকারি কোনো বীজও আমি পাইনি।
ইলিশ গ্রামের কৃষক মফিজুল ইসলাম (৩৫) বলেন, আমি এ বছর এক কানি ১৭ গণ্ডা বর্গা জমিতে আলু আবাদ করেছি। তাতে আমার প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। এক কানি জমির আলু তুলেছি। তাতে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার আলু বিক্রি করছি। এ বছর আলু ভালো হয় নাই। কারণ বৃষ্টি হয়নি তাই আলু পুষ্টি ও ওজন হয়নি। আবার শেষের দিকে আলু খেতে গুটি ও সেনি পোকা আক্রমণ করে। তাতে অধিকাংশ আলু নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, গত বছর আলু চাষ করে লাভবান হওয়ায় এ বছরও আলু চাষ করেছি। কিন্তু এখন দেখি লোকসান গুণতে হচ্ছে।
ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাঘার হাওলা গ্রামের কৃষক সিরাজ (৫৫) বলেন, বড় আশা করে আলু চাষ করেছি। ভাবছিলাম লাভবান হবে। কিন্তু আল্লাহ খেতে ভালো ফলন দিছে। শেষ সময় এসে গুটি পোকা আর সেনি পোকায় আক্রমণ করে অনেক আলু নষ্ট করে ফেলছে। কী করমু আলু তুলে নষ্ট আলুগুলো ফেলে দিতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমি ২ একর ৪০ শতাংশ জমিতে আলুর আবাদ করেছি। তাতে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এক শতাংশ জমিতে আড়াই মণ আলু আসছে। মণ প্রতি খেত থেকে ৪০০ টাকা করে বেপারীরা কিনে নিচ্ছে। তাতে দেখা যাচ্ছে আমার লোকসান গুণতে হবে।
জেলার কৃষি অফিস সূত্র জানা গেছে, এ বছর জেলার ৭ উপজেলায় ৫৪১০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষমাত্রা নিধারণ করা হয়েছে। কিন্তু আবাদ করা হয়েছে ৪৬০০ হেক্টর জমিতে। আলু আবাদে শতভাগ পরিশুদ্ধ ভালো ফলনের আশা করা যায় না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ ফসল নষ্ট হয়ে যায়।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাসান ওয়ারিসুল কবির জানান, আলু তোলার শেষের দিকে কিছু কিছু জায়গায় গুটি ও সেনি পোকায় আক্রমণ করায় ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তবে মারাত্মক ক্ষতি হয়নি। কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আলুর ক্ষতিকর সব চেয়ে বড় যে রোগ তা হলো লেইট ব্লাইট বা মড়ক। সেই রোগ থেকে থেকে আলু রেহাই পেয়েছে। জেলার ৪৫ শতাংশ আলু তোলা হয়ে গেছে। সুত্র: ঢাকা পোষ্ট