ঢাকা ০৫:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পঞ্চগড়ে পুলিশ-মুসল্লি সংঘর্ষ, নিহত ১

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ০২:৩৫:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ মার্চ ২০২৩ ৮৭ বার পড়া হয়েছে

পঞ্চগড়ে কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভের সময় পুলিশের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে।

নিহত যুবক হলেন আরিফুর রহমান (২৭)। সে মসজিদপাড়া এলাকার ফরমান আলীর ছেলে। পঞ্চগড় পৌরসভার কাউন্সিলর মাজেদুর রহমান চৌধূরী ইরান ধাওয়া পাল্টা ধাওযায় আরিফের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তবে কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের সালানা জলসার মিডিয়া সেলের মাহমুদ আহম্মেদ সুমন জানায় তাদের একজন নিহত হয়েছে। তবে তার পরিচয় পাওয়া যায়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর পঞ্চগড় পৌরসভা এলাকার কয়েকটি মসজিদ থেকে মুসুল্লিরা একত্র হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। এরপর পঞ্চগড় শহরে এসে বিক্ষোভ অবরোধ করেন, পরে একপর্যায়ে আহাম্মদ নগর এলাকায় কাদিয়ানীদের জলসা অভিমুখে মিছিল নিয়ে রওনা দেয় মুসুল্লিরা।

এসময় পঞ্চগড় চৌরাঙ্গি মোড় এলাকায় পুলিশ মিছিলটিকে আটকে দেয়। সেখান থেকে মুসুল্লিরা জেলা শহরে সিনেমা হল সড়কে পিছু হটে। তাৎক্ষণিক হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা একত্র হয়ে শহরে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে।

এ সময় জনতার ধাওয়ায় পুলিশ পিছু হটে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। এ সময় পুলিশ সাংবাদিক সহ কমপক্ষে অর্ধশতাধিক আহত হয়। বর্তমানে পঞ্চগড় শহরে দোকানপাট বন্ধ এবং থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এদিকে পুলিশ এলাকাবাসী ও বিক্ষুব্ধ জনতার সংঘর্ষে জেলা শহরের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।

রাত অবধি দোকান পাঠ বন্ধ ছিল। বেলা ২ টার পর থেকে দফায় দফায় জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় হাজার হাজার পথচারী ভোগান্তিতে পড়ে। শহরের বেশ কিছু বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। রাত অবধি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

এদিকে বিকেলে কাদিয়ান সম্প্রদায়ের আহম্মদনগড় মুসলিম জামাত এলাকার বাড়িগুলোতে বিক্ষুব্ধ জনতা ব্যাপক হামলা চালায়। হামলায় ২০ থেকে ২৫ টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দেয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাদিয়ানের বাড়িতে হামলা চলছে।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। শহরের ছোটছোট যানবাহন চলতে শুরু করে। রাত সাতটার দিকে শহরের করতোয়া সেতু সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষুব্ধ জনতা আবারও জড়ো হয় বিক্ষোভ শুরু করেন।

এদিকে বিক্ষোভের খবর পেয়ে আগে থেকেই পঞ্চগড় শহরের চৌরাঙ্গি মোড়সহ বেশ কয়েকটি স্থানে শুরু থেকেই পুলিশ অবস্থান নিয়েছিল। পুলিশের সাথে বিজিবি র‌্যাবও অবস্থান নেয়। তবে বিক্ষুব্ধ জনতাকে কোনভাবেই নিয়ন্ত্রন করতে পারেনি।

বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন বিক্ষুব্ধ জনতা। দুপরের পর থেকে রাত আটটা পর্যন্ত হামলা চলছেই।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. রহিমুল ইসলাম জানান, এই ঘটনায় ১৮ জন পুরুষ ভর্তি রয়েছে এছাড়াও ২৭ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে যায় দুইজনকের রংপুর মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়েছে।

পঞ্চগড় পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা জানান, পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রনেই রয়েছে। সালানা জলসা বন্ধ করতে বলা হয়েছে কাদিয়ানিদের। কাদিয়ানিরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরছেন। তিনি বলেন, মারা যাওয়ার বিষয়টি এখনো আমি নিশ্চিত না।

জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম রাতে সাংবাদিকদের জানায় বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। সালানা জলসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

পঞ্চগড়ে পুলিশ-মুসল্লি সংঘর্ষ, নিহত ১

আপডেট সময় : ০২:৩৫:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ মার্চ ২০২৩

পঞ্চগড়ে কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভের সময় পুলিশের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে।

নিহত যুবক হলেন আরিফুর রহমান (২৭)। সে মসজিদপাড়া এলাকার ফরমান আলীর ছেলে। পঞ্চগড় পৌরসভার কাউন্সিলর মাজেদুর রহমান চৌধূরী ইরান ধাওয়া পাল্টা ধাওযায় আরিফের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তবে কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের সালানা জলসার মিডিয়া সেলের মাহমুদ আহম্মেদ সুমন জানায় তাদের একজন নিহত হয়েছে। তবে তার পরিচয় পাওয়া যায়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর পঞ্চগড় পৌরসভা এলাকার কয়েকটি মসজিদ থেকে মুসুল্লিরা একত্র হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। এরপর পঞ্চগড় শহরে এসে বিক্ষোভ অবরোধ করেন, পরে একপর্যায়ে আহাম্মদ নগর এলাকায় কাদিয়ানীদের জলসা অভিমুখে মিছিল নিয়ে রওনা দেয় মুসুল্লিরা।

এসময় পঞ্চগড় চৌরাঙ্গি মোড় এলাকায় পুলিশ মিছিলটিকে আটকে দেয়। সেখান থেকে মুসুল্লিরা জেলা শহরে সিনেমা হল সড়কে পিছু হটে। তাৎক্ষণিক হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা একত্র হয়ে শহরে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে।

এ সময় জনতার ধাওয়ায় পুলিশ পিছু হটে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। এ সময় পুলিশ সাংবাদিক সহ কমপক্ষে অর্ধশতাধিক আহত হয়। বর্তমানে পঞ্চগড় শহরে দোকানপাট বন্ধ এবং থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এদিকে পুলিশ এলাকাবাসী ও বিক্ষুব্ধ জনতার সংঘর্ষে জেলা শহরের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।

রাত অবধি দোকান পাঠ বন্ধ ছিল। বেলা ২ টার পর থেকে দফায় দফায় জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় হাজার হাজার পথচারী ভোগান্তিতে পড়ে। শহরের বেশ কিছু বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। রাত অবধি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

এদিকে বিকেলে কাদিয়ান সম্প্রদায়ের আহম্মদনগড় মুসলিম জামাত এলাকার বাড়িগুলোতে বিক্ষুব্ধ জনতা ব্যাপক হামলা চালায়। হামলায় ২০ থেকে ২৫ টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দেয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাদিয়ানের বাড়িতে হামলা চলছে।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। শহরের ছোটছোট যানবাহন চলতে শুরু করে। রাত সাতটার দিকে শহরের করতোয়া সেতু সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষুব্ধ জনতা আবারও জড়ো হয় বিক্ষোভ শুরু করেন।

এদিকে বিক্ষোভের খবর পেয়ে আগে থেকেই পঞ্চগড় শহরের চৌরাঙ্গি মোড়সহ বেশ কয়েকটি স্থানে শুরু থেকেই পুলিশ অবস্থান নিয়েছিল। পুলিশের সাথে বিজিবি র‌্যাবও অবস্থান নেয়। তবে বিক্ষুব্ধ জনতাকে কোনভাবেই নিয়ন্ত্রন করতে পারেনি।

বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন বিক্ষুব্ধ জনতা। দুপরের পর থেকে রাত আটটা পর্যন্ত হামলা চলছেই।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. রহিমুল ইসলাম জানান, এই ঘটনায় ১৮ জন পুরুষ ভর্তি রয়েছে এছাড়াও ২৭ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে যায় দুইজনকের রংপুর মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়েছে।

পঞ্চগড় পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা জানান, পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রনেই রয়েছে। সালানা জলসা বন্ধ করতে বলা হয়েছে কাদিয়ানিদের। কাদিয়ানিরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরছেন। তিনি বলেন, মারা যাওয়ার বিষয়টি এখনো আমি নিশ্চিত না।

জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম রাতে সাংবাদিকদের জানায় বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। সালানা জলসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।