নাটোরে দেবরকে হত্যার অভিযোগ ভাবির বিরুদ্ধে
- আপডেট সময় : ০২:৫৫:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ৯০ বার পড়া হয়েছে
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় সাকিবুল ইসলাম সোহাগ নামে এক আনসার সদস্যকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ভাবি লাবণীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারী) রাত ১০টার দিকে উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের নাজিরপুর গ্রামে নিজ বাড়ির পাশে মেজো চাচা মুনছুরের বাড়ির আঙ্গিনায় রহস্যজনক মৃত্যু হয় সোহাগের। খবর পেয়ে শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারী) ভোর রাতে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
নিহত সাকিবুল ইসলাম সোহাগ (২৮) নাজিরপুর গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে। আর লাবণী তারই আপন চাচাতো বড় ভাই মৃত মোজাম্মেলের স্ত্রী। সোহাগ চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ এলাকার অগ্রণী ব্যাংকে সাধারণ আনসার সদস্য হিসাবে কর্মরত ছিল। আনসার সদস্যের এই রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠছে। স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ সোহাগের অণ্ডকোষে আঘাত করে তাকে হত্যা করেছে লাবণী।পুলিশ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, নিহত আনসার সদস্য সাকিবুল ইসলাম সোহাগ ছুটি কাটানোর উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার কর্মস্থল থেকে ট্রেন যোগে বাড়ি ফিরছিলেন। ছেলের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন তার পরিবারের সদস্যরা। হঠাৎ রাত ১০টার দিকে সোহাগ মারা যাচ্ছে বলে মুনছুরের বাড়ি থেকে চিৎকার করে উঠে লাবণী। পরিবারের সদস্যরা ছুটে পাশের বাড়ি গিয়ে সোহাগকে পড়ে থাকতে দেখে। তাকে উদ্ধার করে বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করলে তার মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরে আনা হয়। এসময় পুলিশে খবর দিলে পুলিশ ভোর রাতের দিকে মৃতদেহ নিয়ে থানায় যায়।
ছেলে সোহাগের মৃতুতে মা শিউলী বেগমের কান্না থামাতে পারছিলেননা প্রতিবেশী সহ স্বজনরা। বাবা মুজিবুর রহমান পাগলের মতো এদিক সেদিক ছুটে যাচ্ছেন ছেলের খোঁজে।
শিউলী বেগম বলেন, বৃহস্পতিবার ছুটি নিয়ে রাতে ট্রেনে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তার। তিনি ছেলের বাড়ি আসার অপেক্ষায় ছিলেন এবং বারবার ফোন কলে কথা বলছিলেন সে কখন আসবে। সোহাগ রুই মাছ খাওয়ার কথা বললে তিনি রুই মাছের তরকারি রান্না করে ছেলের অপেক্ষা করতে থাকেন। সে কখন গ্রামে ফিরেছে তারা কিছুই জানেন না। লাবণীসহ গ্রামের মানুষের চিৎকার শুনে ছেলের বিধবা চাচাতো ভাবি লাবণীর আঙ্গিনায় গিয়ে ছেলের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেননা ওই পড়ে থাকা দেহ তার বুকের ধনের। ছেলের জন্য রান্না করা রুই মাছের তরকারি পড়ে রয়েছে। কিন্তু তার ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে। যারা তার ছেলেকে মেরে ফেলেছে তিনি তাদের ফাঁসি চান।
সোহাগের বড় চাচা আব্দুল মজিদের ছেলে রুবেল হোসেন ও প্রতিবেশীরা অভিযোগ করে বলেন, সোহাগরা দুই ভাইবোন। সোহাগের সাথে তার চাচাতো ভাইয়ের বউ (ভাবি) লাবণীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ৬ বছর আগে লাবণীর স্বামী মোজাম্মেলের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। মোজাম্মেলের মৃত্যুর পর থেকেই ভাবি দেবর পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের এই পরকীয়ার সম্পর্ক সমাধান করার জন্য বেশ কয়েকবার পারিবারিকভাবে বসেও সমাধান করা যায়নি। সোহাগকে হত্যা করা হয়েছে। তার অন্ডকোষ চেপে ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে তারা মনে করেন। অন্ডকোষের এক পাশে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়েছেন তারা। ৬ বছর আগে লাবণীর স্বামী মোজাম্মেলেরও রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়। এই দুটি হত্যাকান্ডের সাথে লাবণী জড়িত বলেই তারা মনে করেন।
বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুর রাজ্জাক জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মেডিকেলে নিয়ে আসা সোহাগ নামের ওই যুবক হাসাপাতালে আসার পূর্বেই মারা গেছে। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্য হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তারা। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর সঠিক কারণ জানা যাবে।
বাগাতিপাড়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, আনসার সদস্য সাকিবুল ইসলাম সোহাগের মৃত্যু রহস্যজনক। বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশে খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে তিনি সহ পুলিশ ফোর্স নিয়ে ভোর রাতের দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় আনেন। পরে ময়না তদন্তের জন্য এদিন দুপুরে নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহত যুবকের সাথে ওই নারীর পরকীয়ার সম্পর্ক ছিলো বলে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছেন তারা। ওই সম্পর্কের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য লাবণীকে থানায় আনা হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। হত্যার অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।