ননী ফল চাষে রবিউলের বাজিমাত
- আপডেট সময় : ০৮:২২:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১১৭ বার পড়া হয়েছে
ননী ফল। নাম শুনলেই মনে ভেসে ওঠে সুস্বাদু কোনো এক খাবারের কথা। এটি হাতে তৈরি মিষ্টান্নজাতীয় খাবার না হলেও ওষধিগুণে ভরা ফলটির চাষে কদর বেড়েছে নড়াইলে।
প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ফল ও চারা কিনতে ননী ফলের বাগানে ভিড় করছেন ক্রেতারা। তবে যোগান সীমিত হওয়ায় চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বাগান মালিককে।
বাণিজ্যিকভাবে ননী ফল চাষ করে সাড়া ফেলেছেন নড়াইলের উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম (৪২)। তিনি নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়নের ধাড়ীয়াঘাটা গ্রামের শামসুর রহমানের ছেলে। এদিকে রবিউলের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রবিউল ইসলাম নিজ বাড়ির পাশের ১৫ শতক জমিতে গড়ে তুলেছেন মহৌষধি গুণসম্পন্ন ননী ফলের বাগান। এছাড়াও পাশের ২০ শতকের আরেকটি জমিতেও চলছে বাগান করার প্রস্তুতি। গাছে গাছে ঝুলছে কাঁচা-পাকা ননী ফল। বর্তমানে অফ্রিকান, ইন্ডিয়ান ও মালয়েশিয়ান জাতের প্রায় দুই শত ননী ফল গাছে সমৃদ্ধ রবিউলের বাগান। এছাড়াও তার কাছে ননীফল, করসলসহ বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি গাছের কয়েক হাজার চারা রয়েছে। দামি এই ফল ও চারা কিনতে ক্রেতারা প্রতিনিয়ত তার বাগানে ভিড় করছেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কুরিয়ারের মাধ্যমে চারা ও ফল পৌছে দিচ্ছেন রবিউল।
উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, তিনি এসিআই কৃষি প্রজেক্টে যশোরে চাকরি করেন। সেই সুবাধে দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষেক তিনি কৃষি বিষয়ে যুক্তি-পরামর্শ দিয়ে থাকেন। একবার তিনি ভারতে গিয়ে ননী ফলের বিশাল বড় বড় প্রজেক্ট দেখেন এবং জানতে পারেন এটি ক্যানসারের প্রতিশেধক। এরপর ২০২১ সালে ভারত থেকে চারা এনে বাগান গড়ে তোলেন । প্রায় ৪ লাখ টাকা ব্যয় করে বাগানটি করার পর থেকেই ভালো সাড়া পেয়েছেন।
গত বছর গাছ থেকে প্রথম ফল পান। সে বছর প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেন। এবছর ইতোমধ্যে ৫-৬ মণ ফল বিক্রি করছেন। এর আগে ৫-৬ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও বর্তমানে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। শীত মৌসুমে ফলের দাম আরও বাড়বে। তিনি আশা করছেন এবার প্রায় ৮-১০ লাখ টাকার ফল বিক্রি করবেন৷ মৌসুমে ফলের দাম আরও বাড়বে। তিনি আশা করছেন এবার প্রায় ৮-১০ লাখ টাকার ফল বিক্রি করবেন৷
তিনি বলেন, এখন থেকে এ বাগানে আর খরচ নেই। শুধু সার-ওষুধে হয়তো হাজার দু’য়েক টাকা খরচ হবে বছরে। তাছাড়া আর এক টাকাও ইনভেস্ট করা লাগবে না। ২০ বছর পর্যন্ত আর কোনো ইনভেস্ট ছাড়াই ইনকাম করতে পারবেন৷ এ বছর ৮-১০ লাখ টাকা আয় হলে সামনে বছর ১৫ লাখ টাকা হবে। গাছ যত বৃদ্ধি পাবে, ফলও বাড়বে৷ ফলের দামও বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও বলেন, তার বাগানে থাকা আফ্রিকান ননী ফলটা ক্যানসারের মহৌষধ। ভারতীয়টা ব্যাথা এবং রুচি বাড়াতে সক্ষম। আর মালয়েশিয়ানটাও ক্যানসারে কাজ করে তবে এর ফলের সাইজ কিছুটা ছোট।
নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশের যে কোনো প্রান্তে যে কেউ হোক না কেন যদি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে, অবশ্যই তাকে উদ্বুদ্ধ করব। তারা যাতে লাভবান হয় সেজন্য সহযোগিতা করব। এটা তো একটা ব্যবসা। মানুষের উপকার হবে, ব্যবসাও হবে। ক্যানসারের কোনো ওষুধ বাংলাদেশে ছিল না। এই ওষুধ খেয়ে তাদের ওখানের শত শত রোগী ভালো হয়েছে। তাছাড়াও অনান্য চাষাবাদে লাভ নেই। কিন্ত এই ননী ফল চাষে বর্তমান প্রচুর লাভ।
নড়াইল শহরের আলাদাতপুর থেকে আসা মোহাম্মদ ইরব মোল্যা ঢাকা মেইলকে জানান, এখানে অনেক ওষধি গাছ আছে শুনে এসেছেন। তার একজন রোগী আছে তার জন্য গাছ, পাতা ও ফল নিবেন। তিনি এসে দেখেন আরও অনেক লোকজন আসছেন ওষধি গাছ ও ফল নিতে।
আল-আমিন নামে এক যুবক ঢাকা মেইলকে বলেন, তার ছোট বোনোর ক্যানসার হয়েছিল। ঢাকা নিয়ে গেলে সেখান থেকে ফেরত দেন। পরে এখান থেকে ননী ফল ও করসলের পাতা নিয়ে খাওয়ার পর অনেকটা সুস্থ হয়েছে।
এদিকে রবিউলের বাগানের ননী ফল কিনতে আসা পার্শ্ববর্তী মাগুরা জেলার তৈয়ব আলী ঢাকা মেইলকে বলেন, ক্যানসারে আক্রান্ত তার এক আত্মীয় বেশ ভালো হয়ে গেছে এই ফল খেয়ে। তাই তিনিও ফল কিনতে এসেছেন। আল্লাহ যদি ভালো করেন, তাহলে ভালো হবেন।
নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় ঢাকা মেইলকে বলেন, ননী ফলের গাছের চারা একবার রোপণের পর ২০ বছর ফল পাওয়া যায়। বাণিজ্যিকভাবে নড়াইলে এখানেই প্রথম ননী ফলের চাষ হচ্ছে এটা অত্যন্ত লাভজনক। রবিউলের বাগানের প্রচার করছেন তারা। এতে অনেকেই সাড়া দিচ্ছে। নতুন উদ্যেক্তাদের সার্বিকভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
সুত্রঃ ঢাকা মেইল