দেখার কেউ নেই- কুকুর-বিড়ালের সঙ্গে মমেক হাসপাতালে রোগীদের বসবাস!
- আপডেট সময় : ০৩:৪৯:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ৯৭ বার পড়া হয়েছে
ঐতিহ্যবাহী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি বৃহত্তর বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জেলা ছাড়াও বিভিন্ন জায়গার রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে আশা রোগীর চিকিৎসা সেবার একমাত্র প্রতিষ্ঠান। বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকারের নেতৃত্ব দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। ময়মনসিংহের ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটিরও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। এতে ৩৩টি বিভাগ/ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ৩০০০ হতে ৩৫০০ রোগী চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে এবং বহির্বিভাগে বর্তমানে ৩০০০ হতে ৪০০০ রোগী চিকিৎসা গ্রহন করে থকেন।
তবে হাসপাপাতালটির অবকাঠামোর উন্নড হলেও উন্নত হয়নি এর চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা। রেগীর হয়রানী,দালালের দৌরাত্ম, রোগীদের অবহেলা,রোগীর সসথে নার্স ও চিকিৎসকদের অসৌজন্যমোলক আচরণ,সরকারী ঔষধ প্রদানেও রয়েছে বিভিন্ন অভিযোগ আলোচনা-সমালোচনা । সেবার মানে উন্নয়ন ঘটেনি জেলা শহরের এই হাসপাতালে। দক্ষ চিকিৎসক স্বল্পতার অভাবে ঘরবন্দিভাবে পড়ে রয়েছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রাংশ।
এতে করে চিকিৎসা সেবার মান নিয়েও রয়েছে জনমনে নানা প্রশ্ন। সরকারি হাসপাতালের সেবা নিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকেই। ছোট-খাট বিষয় নিয়েও দৌড়াতে হয় ঢাকা পর্যন্ত। হাসপাতালের পরিবেশ এবং অব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে হাসপাতালটি। জরুরি সেবা ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোতেই যেন স্বস্তি রোগীদের।
হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে না স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কোন ব্যবস্থা। সামনে দু-একটা হাত ধোয়ার জন্য বেসিন বসিয়ে রাখলেও যত্নের অভাবে তা ব্যবহার অযোগ্য হয়ে গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীন ভূমিকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা রয়েছেন চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।
অপরদিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বারান্দা এবং শয্যাগুলোতে অবাধেই ঘোরাফেরা করছে কুকুর। সিঁড়ির কোনায় কোনায় জমে আছে ময়লার স্তূপ। হাসপাতাল ভবনের ভেতরে কুকুরের অবাধ বিচরণের কারণে রোগী এবং স্বজনদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীন ভূমিকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা রয়েছেন চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা জানান, সরকার যখন পুরো দেশবাসীকে সচেতন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে নানামুখী কর্মসূচি নিচ্ছে সেই মুহূর্তে হাসপাতালের ভেতরে কুকুরের অবাধ আনাগোনা কাম্য নয়। কারণ কুকুর জলাতঙ্ক রোগ বহন করে। সেই কুকুরগুলো হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে রয়েছে। রোগী ওয়ার্ডের যাতায়াতের রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে কুকুরগুলো ঘুমিয়ে রয়েছে। বিড়ালগুলো ওয়ার্ডের এপাশ থেকে ওপাশ দৌড়চ্ছে, মুখ দিচ্ছে খাবারে। হাসপাতাল ভবনের ভেতরে বিড়াল-কুকুরের অবাধ বিচরণের কারণে রোগী এবং স্বজনদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
হাসপাতালটি কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।এ ব্যাপারে বাংলাদেশ টেক্স লইয়ার্স এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এডভোকেট সাদিক হোসেন বলেন- এই যদি হাসপাতালে অবস্থা হয় কুকুর এবং মানুষ কি একসাথে বসবাস করতে পারে। এটাতো একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি। এটা নিয়ে মন্তব্য করার কোন ভাষা নেই।এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: জাকিরুল ইসলামকে ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন ইন্তাজ উদ্দীন বলেন, ‘এই তাপদাহের সময় সরকার যখন পুরো দেশবাসীকে সচেতন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে নানামুখী কর্মসূচি নিচ্ছে সেই মুহূর্তে হাসপাতালের ভেতরে কুকুরের অবাধ আনাগোনা কাম্য নয়। কারণ কুকুর জলাতঙ্ক রোগ বহন করে। সেই কুকুরগুলো হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে রয়েছে। হাসপাতালটি কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।’
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেক রোগীকে দেখতে আসা স্বজন রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দেশ যখন হাজার হাজার মানুষ প্রতিনিয়তই তীব্র তাপদাহের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তে চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র হাসপাতালে যদি এমনভাবে কুকুর শুয়ে থাকে তা হলে সেই হাসপাতালে রোগী কতটুকু নিরাপদ তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই জানেন। আমরা যখন নিজ গৃহেই নিরাপদ নই, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীনতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওস্বাস্থ্যমন্ত্রীর সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলেও দাবী করেন তিনি।
নারী ওয়ার্ডে রোগীর সাথে আসা আরও এক স্বজন পারভেজ মিয়া বলেন, ‘স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য প্রতিনিয়ত ম্যাজিস্ট্রেট জেল-জরিমানা করে যাচ্ছে, যাতে কমে মানুষ সচেতন হয়। সকলেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে। কিন্তু হাসপাতালের মত জায়গাতে এই নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ কখনোই কাম্য নয়। প্রশাসনের লোকজন এই দিকে নজর দিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সচেতন হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ-ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল টি ১৯৬২ ইং সালে ৮৩ একর জমির মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। হাসপাতাল সৃষ্টির শুরু থেকেই ৩০০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। তখন প্রতিনিয়তই ৮০০ হতে ১০০০ রোগী ভর্তি অবস্থায় চিকিৎসা গ্রহন করতেন। তখন মুল ইউনিট ছিল ১০টি। তৎকালীন সময়ে চিকিৎসা সরঞ্জামাদি অভাবে চিকিৎসার পুর্নাঙ্গ রুপ লাভ করতে পারেনি। বর্তমানে এই হাসপাতালটি টার্সিয়ারী লেভেল ও একাডেমিক হাসপাতাল। নবগঠিত ময়মনসিংহ বিভাগ সহ আশেপাশে বিভিন্ন জেলার প্রায় আড়াই কোটি জনগনের সরকারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল এই হাসপাতাল। ২০১০ সালে ৮ তলা বিশিষ্ট নতুন ভবন স্থাপনের মাধ্যমে ২০১৩ ইং সনে জানুয়ারী মাসে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক নতুন হাসপাতাল ভবন উদ্বোধনের মাধ্যমে নতুন হাসপাতাল ভবনটিতে চিকিৎসাসেবা সম্প্রসারিত করা হচ্ছে।