ঢাকা ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুই শরিকের আবদার নিয়ে বিপাকে মোদি!

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ০৩:১১:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪ ২৪ বার পড়া হয়েছে

শপথ গ্রহণের দিন অজিত পাওয়ারের এনসিপিকে নিয়ে বিজেপির ঘুম ছুটে গিয়েছিল। শপথ গ্রহণের পরের দিন চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলুগু দেশম পার্টি ও একনাথ শিন্ডের শিবসেনা নরেন্দ্র মোদিকে চিন্তায় ফেলে দিল।

বিজেপি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় তেলুগু দেশমকে বিমান মন্ত্রণালয় ছেড়ে দিলেও চন্দ্রবাবু নায়ডু এখনো লোকসভার স্পিকারের পদের দাবিতে অনড়। পাল্টা চালে বিজেপি অন্ধ্রপ্রদেশেরই দলের সভানেত্রী ডি পুরন্দেশ্বরীর নাম স্পিকারের পদের জন্য এগিয়ে দিচ্ছে। পুরন্দেশ্বরী তেলুগু দেশমের প্রতিষ্ঠাতা এন টি রাম রাও-এর কন্যা। সেই হিসেবে তিনি চন্দ্রবাবুর শ্যালিকা। শ্যালিকার জন্য দুলাভাই নিজের দাবি থেকে সরে আসতে পারেন বলে বিজেপি নেতাদের আশা। উল্টো দিকে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে চন্দ্রবাবুকে বার্তা দেওয়া হয়েছে, তেলুগু দেশম স্পিকার পদের জন্য প্রার্থী দিলে কংগ্রেস সমর্থন করতে পারে।

রোববার চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলুগু দেশম পার্টির দুই সাংসদ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। রামমোহন নায়ডু পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। চন্দ্রশেখর পেম্মাসানি শপথ নেন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। তেলুগু দেশমের দাবি ছিল পরিকাঠামোসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। সেই দাবি মেনে আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় তেলুগু দেশমকে বিমান মন্ত্রণালয় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। চন্দ্রশেখর পেম্মাসানিকে গ্রামোন্নয়ন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে।

সূত্রের খবর, এর পরেও চন্দ্রবাবু লোকসভার স্পিকারের পদের দাবিতে অনড়। তার সঙ্গে এনডিএ-র আহ্বায়কের পদও দাবি করেছেন চন্দ্রবাবু। তার যুক্তি, অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের সময়েও তেলুগু দেশমের জি এম সি বালাযোগীকে লোকসভার স্পিকারের পদ ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। অতীতের মতো এনডিএ-র আহ্বায়কের পদও দাবি করছেন চন্দ্রবাবু। বুধবার চন্দ্রবাবু অন্ধ্রপ্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন। রোববার চন্দ্রবাবু দিল্লিতে মোদির শপথগ্রহণে ছিলেন। এই সৌজন্যের মধ্যেও টানাপড়েন অব্যাহত রয়েছে। এনডিএ-তে বিজেপির আর এক গুরুত্বপূর্ণ শরিক নীতীশ কুমারের জেডিইউ-ও স্পিকারের পদ পেতে আগ্রহী।

কেন চন্দ্রবাবু ও নীতীশ, দুজনেই লোকসভার স্পিকারের পদ চাইছেন? লোকসভায় তেলুগু দেশমের ১৬ জন ও জেডিইউ-এর ১২ জন সাংসদ রয়েছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য মোদি সরকারের দুই দলেরই সমর্থন প্রয়োজন। নীতীশ-নায়ডুর আশঙ্কা, ভবিষ্যতে এনডিএ থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের আঁচ পেলে বিজেপি তাদের দল ভেঙে দিতে পারে। দলছুট সাংসদেরা বিজেপিতে যোগ দিলে দলত্যাগ বিরোধী আইন অনুযায়ী তাদের সাংসদ পদ খারিজ করে দেওয়ার ক্ষমতা স্পিকারের হাতেই থাকে। এনডিএ থেকে সরে গেলেও স্পিকারকে পদ থেকে সরাতে লোকসভার ৫০ শতাংশ সদস্যের সমর্থনে প্রস্তাব আনতে হয়।

এরই মধ্যে বিজেপির চিন্তা বাড়িয়ে আর এক শরিক একনাথ শিন্ডের শিবসেনা জানিয়ে দিয়েছে, তাদেরও একটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ দিতে হবে। শুধু একটি প্রতিমন্ত্রীর পদে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা ভেঙে বেরিয়ে আসা শিন্ডের সেনারা খুশি নন। শিন্ডের দল লোকসভায় সাতটি আসনে জিতে এলেও তাদের দলের শুধু একজন সাংসদ, গণপতরাও প্রতাপরাও যাদবকে আয়ুষ মন্ত্রকের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীর পদ দেওয়া হয়েছে। আজ দলের সাংসদ শ্রীরঙ্গ বার্নে জানিয়ে দিয়েছেন, তাদের পূর্ণমন্ত্রীর পদ চাই। শ্রীরঙ্গের বক্তব্য, ‘সাত জন সাংসদ থাকা সত্ত্বেও আমাদের একটি মাত্র প্রতিমন্ত্রীর পদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এইচ ডি কুমারস্বামীর জেডিএস-এর দু’জন সাংসদ থাকলেও তারা একটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ পেয়েছে। বিহারের জিতনরাম মাঝি তার দলের একাই সাংসদ। তিনিও পূর্ণমন্ত্রীর পদ পেয়েছেন।’

আজ খোদ শিন্ডের কাছেই তাঁর দলের সাংসদ, বিধায়করা নালিশ জানিয়েছেন, বিজেপি নির্বাচনের সময় তাদের দলের কাজেও নাক গলিয়েছে। উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউত এই সুযোগে শিন্ডের শিবসেনা, অজিত পাওয়ারের এনসিপি-কে তোপ দেগেছেন। তাঁর প্রশ্ন, এই দুই নেতা দল ভেঙে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে মহারাষ্ট্রের জন্য কী পেলেন? এমনিতেই মহারাষ্ট্রে বিজেপির আর এক শরিক অজিত পাওয়ারের এনসিপি-র নেতা প্রফুল্ল পটেল রোববার মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেননি। কারণ বিজেপি তাদের প্রতিমন্ত্রীর পদ দিলেও অজিত পাওয়ার-প্রফুল্ল পটেল দুজনেই পূর্ণমন্ত্রীর পদের দাবিতে অনড়। -আনন্দবাজার

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দুই শরিকের আবদার নিয়ে বিপাকে মোদি!

আপডেট সময় : ০৩:১১:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪

শপথ গ্রহণের দিন অজিত পাওয়ারের এনসিপিকে নিয়ে বিজেপির ঘুম ছুটে গিয়েছিল। শপথ গ্রহণের পরের দিন চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলুগু দেশম পার্টি ও একনাথ শিন্ডের শিবসেনা নরেন্দ্র মোদিকে চিন্তায় ফেলে দিল।

বিজেপি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় তেলুগু দেশমকে বিমান মন্ত্রণালয় ছেড়ে দিলেও চন্দ্রবাবু নায়ডু এখনো লোকসভার স্পিকারের পদের দাবিতে অনড়। পাল্টা চালে বিজেপি অন্ধ্রপ্রদেশেরই দলের সভানেত্রী ডি পুরন্দেশ্বরীর নাম স্পিকারের পদের জন্য এগিয়ে দিচ্ছে। পুরন্দেশ্বরী তেলুগু দেশমের প্রতিষ্ঠাতা এন টি রাম রাও-এর কন্যা। সেই হিসেবে তিনি চন্দ্রবাবুর শ্যালিকা। শ্যালিকার জন্য দুলাভাই নিজের দাবি থেকে সরে আসতে পারেন বলে বিজেপি নেতাদের আশা। উল্টো দিকে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে চন্দ্রবাবুকে বার্তা দেওয়া হয়েছে, তেলুগু দেশম স্পিকার পদের জন্য প্রার্থী দিলে কংগ্রেস সমর্থন করতে পারে।

রোববার চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলুগু দেশম পার্টির দুই সাংসদ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। রামমোহন নায়ডু পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। চন্দ্রশেখর পেম্মাসানি শপথ নেন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। তেলুগু দেশমের দাবি ছিল পরিকাঠামোসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। সেই দাবি মেনে আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় তেলুগু দেশমকে বিমান মন্ত্রণালয় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। চন্দ্রশেখর পেম্মাসানিকে গ্রামোন্নয়ন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে।

সূত্রের খবর, এর পরেও চন্দ্রবাবু লোকসভার স্পিকারের পদের দাবিতে অনড়। তার সঙ্গে এনডিএ-র আহ্বায়কের পদও দাবি করেছেন চন্দ্রবাবু। তার যুক্তি, অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের সময়েও তেলুগু দেশমের জি এম সি বালাযোগীকে লোকসভার স্পিকারের পদ ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। অতীতের মতো এনডিএ-র আহ্বায়কের পদও দাবি করছেন চন্দ্রবাবু। বুধবার চন্দ্রবাবু অন্ধ্রপ্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন। রোববার চন্দ্রবাবু দিল্লিতে মোদির শপথগ্রহণে ছিলেন। এই সৌজন্যের মধ্যেও টানাপড়েন অব্যাহত রয়েছে। এনডিএ-তে বিজেপির আর এক গুরুত্বপূর্ণ শরিক নীতীশ কুমারের জেডিইউ-ও স্পিকারের পদ পেতে আগ্রহী।

কেন চন্দ্রবাবু ও নীতীশ, দুজনেই লোকসভার স্পিকারের পদ চাইছেন? লোকসভায় তেলুগু দেশমের ১৬ জন ও জেডিইউ-এর ১২ জন সাংসদ রয়েছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য মোদি সরকারের দুই দলেরই সমর্থন প্রয়োজন। নীতীশ-নায়ডুর আশঙ্কা, ভবিষ্যতে এনডিএ থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের আঁচ পেলে বিজেপি তাদের দল ভেঙে দিতে পারে। দলছুট সাংসদেরা বিজেপিতে যোগ দিলে দলত্যাগ বিরোধী আইন অনুযায়ী তাদের সাংসদ পদ খারিজ করে দেওয়ার ক্ষমতা স্পিকারের হাতেই থাকে। এনডিএ থেকে সরে গেলেও স্পিকারকে পদ থেকে সরাতে লোকসভার ৫০ শতাংশ সদস্যের সমর্থনে প্রস্তাব আনতে হয়।

এরই মধ্যে বিজেপির চিন্তা বাড়িয়ে আর এক শরিক একনাথ শিন্ডের শিবসেনা জানিয়ে দিয়েছে, তাদেরও একটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ দিতে হবে। শুধু একটি প্রতিমন্ত্রীর পদে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা ভেঙে বেরিয়ে আসা শিন্ডের সেনারা খুশি নন। শিন্ডের দল লোকসভায় সাতটি আসনে জিতে এলেও তাদের দলের শুধু একজন সাংসদ, গণপতরাও প্রতাপরাও যাদবকে আয়ুষ মন্ত্রকের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীর পদ দেওয়া হয়েছে। আজ দলের সাংসদ শ্রীরঙ্গ বার্নে জানিয়ে দিয়েছেন, তাদের পূর্ণমন্ত্রীর পদ চাই। শ্রীরঙ্গের বক্তব্য, ‘সাত জন সাংসদ থাকা সত্ত্বেও আমাদের একটি মাত্র প্রতিমন্ত্রীর পদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এইচ ডি কুমারস্বামীর জেডিএস-এর দু’জন সাংসদ থাকলেও তারা একটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ পেয়েছে। বিহারের জিতনরাম মাঝি তার দলের একাই সাংসদ। তিনিও পূর্ণমন্ত্রীর পদ পেয়েছেন।’

আজ খোদ শিন্ডের কাছেই তাঁর দলের সাংসদ, বিধায়করা নালিশ জানিয়েছেন, বিজেপি নির্বাচনের সময় তাদের দলের কাজেও নাক গলিয়েছে। উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউত এই সুযোগে শিন্ডের শিবসেনা, অজিত পাওয়ারের এনসিপি-কে তোপ দেগেছেন। তাঁর প্রশ্ন, এই দুই নেতা দল ভেঙে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে মহারাষ্ট্রের জন্য কী পেলেন? এমনিতেই মহারাষ্ট্রে বিজেপির আর এক শরিক অজিত পাওয়ারের এনসিপি-র নেতা প্রফুল্ল পটেল রোববার মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেননি। কারণ বিজেপি তাদের প্রতিমন্ত্রীর পদ দিলেও অজিত পাওয়ার-প্রফুল্ল পটেল দুজনেই পূর্ণমন্ত্রীর পদের দাবিতে অনড়। -আনন্দবাজার