তারাকান্দায় মা-বাবা হারা পলির দায়িত্ব নিলেন ওসি
- আপডেট সময় : ১০:২৩:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০২৪ ১১৫ বার পড়া হয়েছে
পলির বয়স যখন ২ বছর তখন এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় বাবা। এরপর থেকে মায়ের আদরে লালিত হয় সে। পলির বয়স প্রায় ৯বছর। গত ২৯ শে মার্চ এক প্রতিবেশীর হাতে খুন হয় তার মা। নানা নাই, মামা নাই, একমাত্র নানীর আশ্রয়েই তার আশ্রয়। নানীর পটিবারেও অসহায়ত্ব ও সামর্থহীন। এ অবস্থায় বাবা-মা হারা নাতিকে নিয়ে বিপাকে পড়েন পলির নানী। মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে লালন-পালন করেন তিনি।যে কারণে ঈদের আনন্দ বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় ছিলো পলি।
হঠাৎ পলির খোজ নিতেই তার নানীর বাড়ীতে সেমাই, চিনি,নতুন কাপড়সহ ঈদ সামগ্রী নিয়ে হাজির ময়মনসিংহের তারাকান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি ওয়াজেদ আলী।
সুত্র মতে জানা গেছে- গত ময়মনসিংহের তারাকান্দায় পাওনা টাকা চাওয়া কে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী নবী হোসেনের হাতে নৃশংসভাবে খুম হয় উপজেলার
বালিখাঁ ইউনিয়নের বালিখাঁ পূর্ব মালি ডাংগা গ্রামের মৃত এনামুল হক ওরফে এনার স্ত্রী অজুফা বেগম (২৮)।
ঘাস কাটতে মাঠে গিয়ে নিখোঁজ হয় অজুফা। পরে বাড়ির লোকজন খোঁজাখুজি করে মাঠে এক ফিশারীর পুকুরে খুটির সাথে বাধা অবস্থায় লাশ দেখে পুলিশকে জানালে পুলিশ ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে।
এ ঘটনা একই গ্রামের নুরুল ইসলামের পুত্র নুরুন্নবি ওরফে (৩০) নামে এক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ । সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসা বাদে পুলিশ কে জানান, এই মহিলা তার নিকট ২০০০টাকা পায় ঘটনার দিন তাকে মাঠে একা পেয়ে পাওনা টাকা চাইলে দুজনের মধ্যে তর্কতর্কি হয়। এক পর্যায়ে তাকে কারেন্ট শর্টে মৃত্যু নিশ্চিত করে নবী হোসেন। সড়ক দুর্ঘটনায় বাবাকে হারানো ও মায়ের খুন হওয়ার পর একা হয়ে যায় ৯বছরের শিশু পলি। থাকেন নানীর সংসারে।
কিন্তু অভাবের সংসারে অর্থাভাবে নানীর সাথে এবার বাবা-মা হারা পলির প্রথম ঈদ আনন্দ বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা ছিলো। পরে স্থানীয়দের মুখে শোনেন পলির এমন করুণ কাহিনি। এমন কাহিনি শুনে নিজেকে সামলাতে পারলেন না ওসি। সঙ্গে সঙ্গে পলির ঈদে যত খরচ লাগে তা বহনের দায়িত্ব নেন তিনি। সেই সঙ্গে পলিকে কোলে তুলে নেন ওসি। দেন ঈদ সামগ্রী, নেন পলির লেখাপড়াসহ সকল দায়িত্ব।
তারাকান্দা থানা পুলিশের ওসি ওয়াজেদ বলেন, আমার চোখের সামনে অর্থের অভাবে এক কন্যার ঈদ আনন্দ বন্ধ হয়ে যাবে তা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। পলিকে মানুষের মতো হতে হলে লেখাপড়া করতে হবে। অর্থের অভাবে কিছুতেই পলির ঈদ আনন্দ ঝরে যেতে পারে না। তাই তার ঈদের খরচসহ লেখাপড়ার সব খরচ আমি নিজে বহন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়া শিশুটির দায়িত্বও নিয়েছি আমি।
তিনি বলেন- নানা নাই, মামা নাই, একমাত্র নানীর আশ্রয়ই পলির আশ্রয়। এই ঈদে তার পাশে দাড়ানোর মতো কেউ নেই। মনের ইচ্ছা থেকেই আজকে তার বাড়ী গেলাম। একটা মেহেদীর প্যাকেট, দুইটা সাবান, দু প্যাকেট সেমাই আর এক কেজি চিনি, নুডলস প্যাকেট, বিস্কুট এর প্যাকেট, একটা ডায়েরি এবং কলম আর অল্প কিছু নতুন টাকা বাচ্চাটার হাতে তুলে দিলাম। মনে হলো, বাবা মায়ের কাছ থেকে ঈদের সবচেয়ে বড় উপহার পেল পলি।
তিনি আরও বলেন, অর্থের অভাবে পলির মতো কোনো শিশুর স্বপ্ন যেন ঝরে না যায় সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আসুন আমরা সবাই পলির মতো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই, পলিদের দায়িত্ব নিই।
এদিকে বাবা-মা হারা পলির প্রতি ওসির এমন মানবিকতা বালিখা ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনতার নজর কেড়েছে। ওসির মানবতার প্রশংসায় মেতে উঠেছেন বালিখাসহ উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ।