ঢাকা ০৩:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তানোরে বিলকুমারি বিল পাড়ের ৫ শতাধিক জেলে পরিবার মানবেতর জীবন-যাপন

আশরাফুল আলম , তানোর থেকে ঃ
  • আপডেট সময় : ০১:২১:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জুন ২০২৩ ২৩৫ বার পড়া হয়েছে

প্রচন্ড গরম আর খরতাপে বিলের পানি আগুনের মত হয়ে উঠছে। একারণে কয়েক সপ্তা ধরে মাছ পাচ্ছে না জেলেরা। রাজশাহীর তানোরে বিলকুমারি বিলে এমন অবস্থা চলছে। এতে করে বিল পাড়ের প্রায় ৫ শতাধিক জেলে পরিবার চরম মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

এরপরও একদিকে কিস্তি। আর অন্যদিকে ব্যবসা নেই। এতে করে মহাবিপাকে পড়েছেন মৎস্যজীবি পাড়া হিসেবে পরিচিত তানোর পৌর সদর শীতলী ও কুঠিপাড়ার জেলে পরিবার। এক বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। এমন কি কিস্তির টাকা দিতে না পেরে অনেকে পালিয়ে থাকছেন। এরপরও গভীর রাতে আসছেন কিস্তির লোক বাড়িতে। ওই রাতেও কিস্তি আদায়কারীরা দরজায় কড়া নাড়ছেন। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না। ফলে এমন কঠিন সময়ে সরকারি সহায়তা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন মৎজীবি নেতারা। আবার সমানে ঈদুল আজহা। পরিবারের সদস্যদের একটু মাংস পোলা যেন সোনার হরিণ হয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নাব্যতা সংকটে ভূগছে তানোর পৌর সদরে অবস্থিত ঐতিহ্য শিবনদী বা বিল কুমারী বিল। এই বিলের মূল অংশ ধরা হয় শেখ রাসেল মিনি স্টাডিয়ামের উত্তর পূর্ব দিকে প্রায় ৫০০ বিঘার জলাশয়। ওই জলাশয়ে মাছ ধরে ৫ শতাধিক জেলে পরিবারের জীবন-জীবিকা চলে বছরজুড়ে। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকেই তীব্র তাপদাহ ও প্রচন্ড সূর্যের প্রখরতা। যার কারণে বিলের পানি ব্যাপক গরম হয়ে পড়ছে।

শীতলীপাড়া গ্রামের মৎস্যজীবি মজিদ ওরফে বিষু জানান, খরতাপের কারণে একেবারে সিমিত মাছ পাওয়া যাচ্ছে। যতটুকু মিলছে গরমে অর্ধেক মরে যাচ্ছে। আগে ওই মাছ বিক্রি করে ৫০০ টাকা পাওয়া যেত। কিন্তু এখন ১৫০ থেকে ২০০ টাকাও মিলছে না।

আরেক মৎস্যজীবি মোজাম জানান, কি আর বলব ভাই, সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। সমিতির কিস্তি দেব না চাল ও ডাল কিনে খাব। কোন কুল কিনারা খুজে পাচ্ছি না। কোন দিন ২০০ টাকার মাছ পেলে পরের দিন আর মিলছে না। দু’বেলা খাবার জুটছে না। বাজারে চাল ডাল, সবজিসহ সকল পণ্যের দাম বাড়তি। এককেজি চাল নিম্মে হলেও ৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। কয়েকমাস আগে ওএমএসের ৩০ টাকা কেজির চাল বিক্রি হত সেটাও বন্ধ। এখন খেয়ে মরে বেচেঁ থাকা। আবার বিল থেকে জাল চুরি হচ্ছে। যাকে বলে মরার উপর খড়ার ঘাঁ।

আরেক মৎস্যজীবি আজিজুর জানান, প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকার জাল বিলে রয়েছে। আগে প্রতিদিন নিম্মে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মাছ বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু এখন আর মাছ মিলছে না। কিন্তু অতিরিক্ত গরমের কারণে অর্ধেক মাছ মরে যাচ্ছে।

কুঠিপাড়া, শীতলীপাড়া ও গোকুল মৎস্যজীবি পাড়ার একাধিক ব্যক্তিরা দু:খ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের মতো কষ্টে কেউ দিন পার করছে না। কিন্তু এসময়ও পৌরসভার মেয়র বা সরকারি ভাবে কেউ কোন সাহায্য দিচ্ছে না। ফলে অনেকের পান্তা ও খিচড়ি খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। এসময় বিলে প্রচুর পানি থাকে। এবার পানি নেই, মাছও তেমন মিলছে না। আর প্রচন্ড গরমে ও তাপপ্রবাহের কারণে জালে যে সব মাছ মিলছে প্রায় সবই মরে যাচ্ছে। বিলের মাছ আমাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র ভরসা। বৃষ্টির পানিও হচ্ছে না। এজন্য বিলের পানিও বাড়ছে না। যার কারণে আমাদের সংসার চলছে দূর অবস্থায়।

তানোর উপজেলা মৎস্য অফিসার বাবুল হোসেন জানান, এটা অর্থ বছরের শেষ মাস। এই মাসে যে বরাদ্দ পাওয়া যাবে, অবশ্য যারা প্রকৃত মৎস্যজীবি তাদেরকে সহযোগী তা করা হবে।

তানোর পৌর মেয়র ইমরুল হক বলেন, পৌরসভায় আলাদা কোন বরাদ্দ থাকে না। আগামীতে ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে সরকারি ভাবে চাল বরাদ্দ দেয়। সেক্ষেত্রে মৎস্যজীবিদের অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিল্লাল হোসেন বলেন, মৎস্য অফিসারের সাথে আলোচনা করে আগামী অর্থ বছরে সরকারি ভাবে কোন বরাদ্দ পাওয়া গেলে মৎস্যজীবিদের সহায়তা করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

তানোরে বিলকুমারি বিল পাড়ের ৫ শতাধিক জেলে পরিবার মানবেতর জীবন-যাপন

আপডেট সময় : ০১:২১:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জুন ২০২৩

প্রচন্ড গরম আর খরতাপে বিলের পানি আগুনের মত হয়ে উঠছে। একারণে কয়েক সপ্তা ধরে মাছ পাচ্ছে না জেলেরা। রাজশাহীর তানোরে বিলকুমারি বিলে এমন অবস্থা চলছে। এতে করে বিল পাড়ের প্রায় ৫ শতাধিক জেলে পরিবার চরম মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

এরপরও একদিকে কিস্তি। আর অন্যদিকে ব্যবসা নেই। এতে করে মহাবিপাকে পড়েছেন মৎস্যজীবি পাড়া হিসেবে পরিচিত তানোর পৌর সদর শীতলী ও কুঠিপাড়ার জেলে পরিবার। এক বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। এমন কি কিস্তির টাকা দিতে না পেরে অনেকে পালিয়ে থাকছেন। এরপরও গভীর রাতে আসছেন কিস্তির লোক বাড়িতে। ওই রাতেও কিস্তি আদায়কারীরা দরজায় কড়া নাড়ছেন। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না। ফলে এমন কঠিন সময়ে সরকারি সহায়তা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন মৎজীবি নেতারা। আবার সমানে ঈদুল আজহা। পরিবারের সদস্যদের একটু মাংস পোলা যেন সোনার হরিণ হয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নাব্যতা সংকটে ভূগছে তানোর পৌর সদরে অবস্থিত ঐতিহ্য শিবনদী বা বিল কুমারী বিল। এই বিলের মূল অংশ ধরা হয় শেখ রাসেল মিনি স্টাডিয়ামের উত্তর পূর্ব দিকে প্রায় ৫০০ বিঘার জলাশয়। ওই জলাশয়ে মাছ ধরে ৫ শতাধিক জেলে পরিবারের জীবন-জীবিকা চলে বছরজুড়ে। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকেই তীব্র তাপদাহ ও প্রচন্ড সূর্যের প্রখরতা। যার কারণে বিলের পানি ব্যাপক গরম হয়ে পড়ছে।

শীতলীপাড়া গ্রামের মৎস্যজীবি মজিদ ওরফে বিষু জানান, খরতাপের কারণে একেবারে সিমিত মাছ পাওয়া যাচ্ছে। যতটুকু মিলছে গরমে অর্ধেক মরে যাচ্ছে। আগে ওই মাছ বিক্রি করে ৫০০ টাকা পাওয়া যেত। কিন্তু এখন ১৫০ থেকে ২০০ টাকাও মিলছে না।

আরেক মৎস্যজীবি মোজাম জানান, কি আর বলব ভাই, সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। সমিতির কিস্তি দেব না চাল ও ডাল কিনে খাব। কোন কুল কিনারা খুজে পাচ্ছি না। কোন দিন ২০০ টাকার মাছ পেলে পরের দিন আর মিলছে না। দু’বেলা খাবার জুটছে না। বাজারে চাল ডাল, সবজিসহ সকল পণ্যের দাম বাড়তি। এককেজি চাল নিম্মে হলেও ৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। কয়েকমাস আগে ওএমএসের ৩০ টাকা কেজির চাল বিক্রি হত সেটাও বন্ধ। এখন খেয়ে মরে বেচেঁ থাকা। আবার বিল থেকে জাল চুরি হচ্ছে। যাকে বলে মরার উপর খড়ার ঘাঁ।

আরেক মৎস্যজীবি আজিজুর জানান, প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকার জাল বিলে রয়েছে। আগে প্রতিদিন নিম্মে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মাছ বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু এখন আর মাছ মিলছে না। কিন্তু অতিরিক্ত গরমের কারণে অর্ধেক মাছ মরে যাচ্ছে।

কুঠিপাড়া, শীতলীপাড়া ও গোকুল মৎস্যজীবি পাড়ার একাধিক ব্যক্তিরা দু:খ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের মতো কষ্টে কেউ দিন পার করছে না। কিন্তু এসময়ও পৌরসভার মেয়র বা সরকারি ভাবে কেউ কোন সাহায্য দিচ্ছে না। ফলে অনেকের পান্তা ও খিচড়ি খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। এসময় বিলে প্রচুর পানি থাকে। এবার পানি নেই, মাছও তেমন মিলছে না। আর প্রচন্ড গরমে ও তাপপ্রবাহের কারণে জালে যে সব মাছ মিলছে প্রায় সবই মরে যাচ্ছে। বিলের মাছ আমাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র ভরসা। বৃষ্টির পানিও হচ্ছে না। এজন্য বিলের পানিও বাড়ছে না। যার কারণে আমাদের সংসার চলছে দূর অবস্থায়।

তানোর উপজেলা মৎস্য অফিসার বাবুল হোসেন জানান, এটা অর্থ বছরের শেষ মাস। এই মাসে যে বরাদ্দ পাওয়া যাবে, অবশ্য যারা প্রকৃত মৎস্যজীবি তাদেরকে সহযোগী তা করা হবে।

তানোর পৌর মেয়র ইমরুল হক বলেন, পৌরসভায় আলাদা কোন বরাদ্দ থাকে না। আগামীতে ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে সরকারি ভাবে চাল বরাদ্দ দেয়। সেক্ষেত্রে মৎস্যজীবিদের অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিল্লাল হোসেন বলেন, মৎস্য অফিসারের সাথে আলোচনা করে আগামী অর্থ বছরে সরকারি ভাবে কোন বরাদ্দ পাওয়া গেলে মৎস্যজীবিদের সহায়তা করা হবে।