টিকিটের জন্য হাহাকার, গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া
- আপডেট সময় : ০৯:০৬:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ১০০ বার পড়া হয়েছে
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর দুয়ারে কড়া নাড়ছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। দীর্ঘদিন পর প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা এবং একসঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ঢাকা ছাড়ছেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। বাস-লঞ্চ-ট্রেন ছাড়াও যে যেভাবে পারছেন ছুটছেন প্রিয়জনদের কাছে।
তবে ঈদকে সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরার তাড়ায় যোগ হচ্ছে বাড়তি ভাড়া গোনার বিড়ম্বনা। রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন রুটের বাসগুলোর টিকিট পেতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। তেমনি দালালের মাধ্যমে টিকিট মিললেও গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
বুধবার (১৯ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাসগুলোর যাত্রীরা কাউন্টারে এসে টিকিট পাচ্ছেন না। যারা আগে থেকেই অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করেছেন তারা সমস্যার শিকার না হলেও অফলাইনে যারা টিকেট নিচ্ছেন তাদের অভিযোগ বিস্তর।
প্রথম দিকে কাউন্টার মাস্টাররা টিকিট নেই বললেও অতিরিক্ত টাকা দিলেই যেকোনো মানের সিট পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।
তবে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে ছেড়ে যাওয়া হানিফ, শ্যামলী, হিমাচল, রয়েল কোচ, ইউনিক, সোহাগ, গ্রিন লাইন ও টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসসহ জনপ্রিয় ট্রান্সপোর্টগুলো গোপনে কিছুটা ভাড়া বাড়িয়েছে বলে জানা গেছে। তবে লোকাল গাড়িগুলোতে ‘গলা কাটা’ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। লোকাল গাড়িগুলোতে সায়েদাবাদ থেকে গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও খুলনার আশপাশের এলাকাগুলোতে এক হাজার এবং ক্ষেত্রবিশেষে এই ভাড়া ১২শ করেও নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হানিফ আলী বলেন, আমি সোহাগ পরিবহনে ঢাকা থেকে যশোর যাচ্ছি। দুটি সিট নিয়েছি। সাধারণত প্রতি সিট ৬৫০ টাকা। তবে আমার কাছ থেকে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে। টাকা কিছু বেশি গেলেও সিট পেয়েছি এটাই ভালো লাগছে।
বরিশালগামী যাত্রী রহিম হাওলাদার বলেন, ৬০০ টাকার ভাড়া এখন ৭০০ টাকা করে নিচ্ছে। টিকিট কিনতে গেলে বলছে টিকিট নেই। জনপ্রতি ১০০ টাকা বাড়িয়ে দিলেই টিকিট মিলছে। অতিরিক্ত ভাড়া না দিলে তারা (কাউন্টার মাস্টার) কৌশলী হচ্ছে। সব জায়গাতেই আড়ালে এ কার্যক্রম চলছে। এদিকে ২০০ টাকার সিএনজি ভাড়াও ৩৫০ টাকা নিয়েছে। কিছুই করার নেই।
যশোরগামী যাত্রী কুশ কুমার কুশাল বলেন, আমি ট্রেনের টিকিট পাইনি। অনেক ঘুরাঘুরি করে অবশেষে সায়েদাবাদ বাস কাউন্টারে এসেছি। এখানেও একই অবস্থা। টিকিট যেন সোনার হরিণ। ৬০০ টাকার ভাড়া এক হাজার বা তার থেকেও বেশি চাচ্ছে। উপায় না পেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই টিকিট নিয়েছি। টাকা বেশি গেলেও টিকিট তো নিতেই হবে।
রাজধানীর সায়েদাবাদে এসপি গোল্ডেন লাইন ও সেজুতি ট্রাভেলের কাউন্টার মাস্টার সমশের আলী বলেন, ঈদে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছি না। সবাই নির্ধারিত ভাড়ায় টিকিট পাচ্ছেন।
শ্যামলী কাউন্টার মাস্টার পবিত্র কুমার সরকার বলেন, কোনোভাবেই টিকিট বিক্রিতে নয়-ছয় হচ্ছে না। যাত্রীদের অনেকেই অনলাইনে টিকিট কাটছেন। এখন যাত্রীরা বেশ সচেতন; তারা বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নেয়। তবে লোকাল পরিবহনগুলোতে মনিটরিংয়ের অভাবে চুক্তিভিত্তিক অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। যাত্রীরাও কিছু না পেয়ে এই অতিরিক্ত ভাড়াতেই যাতায়াত করেন।
ইউনিক পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মাহফুল ইসলাম বলেন, বেশিরভাগ যাত্রী অনলাইনে টিকিট কাটেন। যারা অনলাইনে সেবা নিতে পারেন না তারাই সমস্যায় পড়েন। এ মুহূর্তে আমাদের কাছে দূর পাল্লার গাড়িগুলোর টিকিট নিই বললেই চলে।
হিমাচল পরিবহনের কাউন্টার ম্যান বাবু মোল্লা বলেন, টিকিট অনলাইনে না কিনলেই বিপদ। আগে টিকিট না কেনায় এখন অনেকেই আসছেন। ইঞ্জিন কভারেও ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা দিয়ে বাড়ি ফিরছেন। কোনো গাড়িতে সিট ফাঁকা থাকলেই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। যারা লোকাল গাড়িতে যাচ্ছেন তারাই বেশি ঝামেলা পোহাচ্ছেন।