ঢাকা ০৯:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ঋণের টাকা না পেয়ে নারীকে রাতে তালাবদ্ধ করে রাখল পল্লী উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ায় নিখোঁজ অটোরিকশা চালকের লাশ উদ্ধার, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ ক্রিকেটে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়লেন ক্যাম্ফার পাকিস্তানে বাস থামিয়ে ৯ যাত্রীকে অপহরণের পর হত্যা উন্নত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা আবশ্যক : প্রধান উপদেষ্টা ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ জারি রাষ্ট্রপতির ইসরাইলি বর্বরতায় একদিনে আরও ৮২ ফিলিস্তিনি নিহত গ্লোবাল সুপার লিগ : খালেদের ৪ উইকেটে জয়ে শুরু রংপুরের ২১ জেলায় পানির নিচে ৭২ হাজার হেক্টর জমির ফসল টানা বৃষ্টির প্রভাব কাঁচাবাজারে, মরিচের কেজি প্রায় ৩০০ টাকা

“টমেটো চাষে কিছু কথা”

কৃষক মনিরুজ্জামান মনির
  • আপডেট সময় : ০৯:০৩:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ জুন ২০২৩ ৫৮৭ বার পড়া হয়েছে

আমরা প্রত্যেক বছর টমেটো উৎপাদনের মৌসুমীর শুরুর দিকে কাঁচা টমেটো উঠিয়ে পাকানোর চিত্র বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রিক মিডিয়ায় দেখি। কিন্তু কেন এমন করা হয় এর পেছনের কারণ কি? কৃষক কি স্বেচ্ছায় এমন করছে? নাকি করতে বাধ্য হচ্ছে এমন না করে তাদের অন্য কোন উপায় আছে কি? থাকলে সেটি কি? মৌসুমীর শুরুতে তাদের উৎপাদিত টমেটো দ্রুত বিক্রি না করতে পারলে চাষীদের কম দামে বিক্রি করতে হবে না সে নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারছি কি? বিভিন্ন কোম্পানিগুলো কৃষকের উৎপাদিত টমেটো অতি উৎপাদনের সুযোগ নিয়ে তারা নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করে নিয়ে যাই। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন উপায় আমাদের জানা আছে কি? এ সকল প্রশ্নের যথাযথ উত্তর না দিয়ে বা সমাধান না করে উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব কি? শুধুমাত্র কেমিক্যাল দিয়ে ফসল পাকানোর সাথেই এর সম্পর্ক নয়। এর সাথে কৃষকের জীবন ও জীবিকার প্রশ্ন। কৃষকের পরিবার পরিজন নিয়ে টিকে থাকার প্রশ্ন। কাজেই তাদের এই টিকে থাকার অবলম্বন উপেক্ষা করে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আমরা জানি আমাদের শরীর গঠনের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন আর এই খাদ্য আশে আমাদের কৃষকের কাছ থেকে।

সেই কৃষকের জীবন মানের নিশ্চয়তা দিতে না পারলে প্রকারান্তরে আমরা আমাদের জীবন মানের অনিশ্চয়তা তৈরি করছি বা করব। কারণ কৃষককে যদি উৎপাদন পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করতে হয় তাহলে সে ফসল ফলাতে অতিমাত্রায় সার ও কীটনাশক ব্যবহার করবে ফলে সে ফসল আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করবে ফলে আমাদের চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি পাবে আমাদের গড় আয়ু কমে যাবে। তাই আমরা যদি সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন চাই তাহলে কৃষকের ফসলের উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করে বিক্রয় মূল্য নিশ্চিত করতে হবে তাহলে কৃষক তার কিছুটা দাম পেয়ে বেশি পাওয়ার আশায় অপ্রাপ্ত বয়স্ক টমেটো উঠিয়ে বাজারজাত করার আর প্রয়োজন পড়বে না। সাধারণত আমরা রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা গোদাগাড়ী চাষিরা টমেটো জানুয়ারি মাসের মধ্যেই ফসলের ক্ষেত ভেঙ্গে দিয়ে ধান উৎপাদনে চলে যায়। সেই সময় সাধারণত প্রতিবিঘা জমিতে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ মন অপ্রাপ্তবয়স্ক টমেটো থাকে। এই খেতে যদি আর এক থেকে দুই মাস বেশি পরিচর্যা করা যেত তাহলে কমপক্ষে একই জমি থেকে ১০০ থেকে ২০০ মন টমেটো বেশি উৎপাদন সম্ভব হবে। প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে ৪০০০ থেকে ৫ হাজার লিটার পানির প্রয়োজন হয়। বোরো মৌসুমের ধান চাষ সাধারণত ভূগর্ভস্থ পনির ওপর নির্ভরশীল। কাজেই টমেটোর দাম পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারলে কৃষক টমেটোর ক্ষেত ভেঙে না দিয়ে পরিচর্যা করলে কৃষক টমেটো বেশি উৎপাদন করতে পারত। ফলে তারা আর্থিক ভাবে লাভবান হবে এবং টমেটো চাষে ভূগর্ভস্থ পানির প্রয়োজন কম হবে ফলে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় কিছুটা ভূমিকা রাখবে।

লেখকঃ কৃষক মনিরুজ্জামান মনির
গোদাগাড়ী, রাজশাহী।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

“টমেটো চাষে কিছু কথা”

আপডেট সময় : ০৯:০৩:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ জুন ২০২৩

আমরা প্রত্যেক বছর টমেটো উৎপাদনের মৌসুমীর শুরুর দিকে কাঁচা টমেটো উঠিয়ে পাকানোর চিত্র বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রিক মিডিয়ায় দেখি। কিন্তু কেন এমন করা হয় এর পেছনের কারণ কি? কৃষক কি স্বেচ্ছায় এমন করছে? নাকি করতে বাধ্য হচ্ছে এমন না করে তাদের অন্য কোন উপায় আছে কি? থাকলে সেটি কি? মৌসুমীর শুরুতে তাদের উৎপাদিত টমেটো দ্রুত বিক্রি না করতে পারলে চাষীদের কম দামে বিক্রি করতে হবে না সে নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারছি কি? বিভিন্ন কোম্পানিগুলো কৃষকের উৎপাদিত টমেটো অতি উৎপাদনের সুযোগ নিয়ে তারা নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করে নিয়ে যাই। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন উপায় আমাদের জানা আছে কি? এ সকল প্রশ্নের যথাযথ উত্তর না দিয়ে বা সমাধান না করে উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব কি? শুধুমাত্র কেমিক্যাল দিয়ে ফসল পাকানোর সাথেই এর সম্পর্ক নয়। এর সাথে কৃষকের জীবন ও জীবিকার প্রশ্ন। কৃষকের পরিবার পরিজন নিয়ে টিকে থাকার প্রশ্ন। কাজেই তাদের এই টিকে থাকার অবলম্বন উপেক্ষা করে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আমরা জানি আমাদের শরীর গঠনের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন আর এই খাদ্য আশে আমাদের কৃষকের কাছ থেকে।

সেই কৃষকের জীবন মানের নিশ্চয়তা দিতে না পারলে প্রকারান্তরে আমরা আমাদের জীবন মানের অনিশ্চয়তা তৈরি করছি বা করব। কারণ কৃষককে যদি উৎপাদন পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করতে হয় তাহলে সে ফসল ফলাতে অতিমাত্রায় সার ও কীটনাশক ব্যবহার করবে ফলে সে ফসল আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করবে ফলে আমাদের চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি পাবে আমাদের গড় আয়ু কমে যাবে। তাই আমরা যদি সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন চাই তাহলে কৃষকের ফসলের উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করে বিক্রয় মূল্য নিশ্চিত করতে হবে তাহলে কৃষক তার কিছুটা দাম পেয়ে বেশি পাওয়ার আশায় অপ্রাপ্ত বয়স্ক টমেটো উঠিয়ে বাজারজাত করার আর প্রয়োজন পড়বে না। সাধারণত আমরা রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা গোদাগাড়ী চাষিরা টমেটো জানুয়ারি মাসের মধ্যেই ফসলের ক্ষেত ভেঙ্গে দিয়ে ধান উৎপাদনে চলে যায়। সেই সময় সাধারণত প্রতিবিঘা জমিতে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ মন অপ্রাপ্তবয়স্ক টমেটো থাকে। এই খেতে যদি আর এক থেকে দুই মাস বেশি পরিচর্যা করা যেত তাহলে কমপক্ষে একই জমি থেকে ১০০ থেকে ২০০ মন টমেটো বেশি উৎপাদন সম্ভব হবে। প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে ৪০০০ থেকে ৫ হাজার লিটার পানির প্রয়োজন হয়। বোরো মৌসুমের ধান চাষ সাধারণত ভূগর্ভস্থ পনির ওপর নির্ভরশীল। কাজেই টমেটোর দাম পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারলে কৃষক টমেটোর ক্ষেত ভেঙে না দিয়ে পরিচর্যা করলে কৃষক টমেটো বেশি উৎপাদন করতে পারত। ফলে তারা আর্থিক ভাবে লাভবান হবে এবং টমেটো চাষে ভূগর্ভস্থ পানির প্রয়োজন কম হবে ফলে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় কিছুটা ভূমিকা রাখবে।

লেখকঃ কৃষক মনিরুজ্জামান মনির
গোদাগাড়ী, রাজশাহী।