গ্রাহকের ৬ কোটি টাকা নিয়ে উধাও কর্ণফুলী সমিতি

- আপডেট সময় : ১১:৩০:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪ ১২৫ বার পড়া হয়েছে
৬৪ বছরের সাবেক কলেজ শিক্ষক জিনাত রশিদ আজাদ। চাকরি জীবনের সমস্ত টাকা জমা রেখেছিলেন কর্ণফুলী সমবায় সমিতিতে। নিজের বাসায় ভাড়া নিয়ে অফিস চালানোর সুবিধার্থে ও এলাকার পরিচিত লোকজন থাকায় বিশ্বাস করে রেখেছিলেন জমানো শেষ সম্বলের টাকা। শুধু শিক্ষক জিনাত রশিদ নন, তার মতো উপজেলার খাদিজা, রাসেল আল মামুনসহ শতাধিক আমানতকারী টাকা রেখেছিলেন এই কর্ণফুলী সমবায় সমিতিতে। তাদের জমাকৃত আনুমানিক ৬ কোটি টাকা নিয়ে হঠাৎ করে উধাও হয়ে যায়। প্রতিকার পেতে এ দুয়ার থেকে অন্য দুয়ারে দিয়েছেন ধর্ণা। নালিশ দিয়েছেন অনেকের কাছে। এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে দিয়েছেন লিখিত অভিযোগ। কর্ণফুলী সমবায় সমিতির সভাপতি আশরাফুল ইসলাম মহাদেবপুর উপজেলার উত্তর গ্রাম ইউনিয়ন এর বামনসাতা গ্রামের খোদা বক্স মন্ডলের ছেলে। এদিকে তারা প্রতারণার কৌশল হিসেবে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে পল্লীসেবা নামে আরেকটি সংস্থা খুলেন এই উপজেলাতে।
ভূক্তভোগী জিনাত রশিদ আজাদ বলেন, ২০১৮ সালের আগষ্ট মাসে আমার বাসায় নিচ তলা ভাড়া নেন তারা। ভাড়া নেওয়ার সময় সমিতির এমডি আশরাফুল ইসলাম, সভাপতি জাহিদ হাসান, সাধারণ সম্পাদক আশা খাতুন, এরিয়া ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম ও শাখা ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম, অডিট অফিসার মিনহাজসহ পরিচিত অনেকে ছিল, যারা এই সমিতির সাথে সংশ্লিষ্ট। তাই আমি সরল বিশ্বাসে তাদের অফিস করার জন্য ভাড়া দিয়েছিলাম। একসময় তাদের প্রলোভনে আমি আমার চাকরি জীবনের সমস্ত টাকা ২৮ লাখ তাদের সমিতিতে জমা রাখি। তাদের কার্যক্রম প্রথম তিন বছর ভালো ছিল। একসময় তাদের লেনদেনের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বিষয়টি জানতে পেরে আমিসহ অনেকে তাদের কাছে জমানো আমানত ফেরত চাই। কিন্তু তারা আজ নয়, কাল দিবো বলে সময় কালক্ষেপন করতে থাকে। এভাবে অপেক্ষা করতে করতে একদিন রাতের আধারে তারা উধাও হয়ে যায়। অফিসে ঝুলছিল তালা। তখন আমাদের হা-হুতাশ করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলনা। গত ২৩ সালের ডিসেম্বরে মালিক আশরাফুল ইসলাম গা ঢাকা দেয়। আর সমিতি জানুয়ারি মাসে বন্ধ করে সকল স্টাফ উধাও। টাকা দিয়ে এখন আমরা অনেকেই পথে বসার উপক্রম হয়েছি। আমরা প্রতিকারের আশায় থানায়, ইউএনও, র্যাব, পিবিআই এ অভিযোগ দিয়েছি। এছাড়া আদালতে মামলা করা হয়েছে।
ওই সমিতিতে আফরোজা বেগম ২লাখ, খাদিজা ২৮লাখ, রাসেল আল মামুন ২লাখ, বেনজির ইয়াসমিন এক লাখ ৮০ হাজার টাকা রেখেছিলেন অতিরিক্ত মুনাফার লোভে। এছাড়া শহীদ, কার্ত্তিকসহ শতাধিক গ্রাহক প্রায় ৬কোটি টাকা সঞ্চয় রেখেছিলেন কর্ণফুলী সমিতিতে। তারা অভিযোগ করে বলেন, মাসে মাসে প্রতি লাখে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে সমিতিতে সঞ্চয় রাখার উৎসাহ প্রদান করেছিল সমিতির লোকজন। আমরা তাদের প্রতারণা বুজতে পারিনি। সেই লাভের আশায় আমাদের কষ্টার্জিত টাকা সঞ্চয় হিসেবে জমা রাখি। কয়েক মাস লাভ দেওয়ার পর সেটি বন্ধ করে দেন। এরপর সঞ্চয়ের টাকা উত্তোলন করতে চাইলে কাল ক্ষেপন করতে থাকেন সমিতির লোকজন। টাকা ফেরত না দিয়ে বিভিন্ন তালবাহানা শুরু করেন।
এর আগে জেলার মহাদেবপুর উপজেলা সদর মডেল স্কুলের মোড় এলাকায় অফিস খুলে পাঁচশত গ্রাহকের প্রায় ২০কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সমিতির সভাপতি আশরফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানার বিচারসহ পাওনা টাকা ফেরতের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার ২২ ফেব্রুয়ারি জেলার সদর উপজেলার সার্কিট হাউজ এর সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। নওগাঁর বেশ কয়েকটি উপজেলায় কর্ণফুলী নামে শাখা পরিচালিত হতো বর্তমানে সেই শাখা গুলোও তালাবদ্ধ।
মূলহোতা আশরাফুল ইসলাম পলাতক থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। সমিতির সভাপতি জাহিদ হাসান মুঠোফোন রিসিভ করেননি। একইভাবে মুঠোফোন রিসিভ করেননি সমিতির শাখা ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম। এরিয়া ম্যানেজার জাহিদুল ইসলামও মুঠোফোন রিসিভ করেননি।
বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে র্যাব-৫, সিপিসি-৩ জয়পুরহাট কোম্পানী কমান্ডার থেকে জানানো হয়, এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের কার্যক্রম চলমান আছে। যেকোনো সময় আমরা তাদের আটক করতে সক্ষম হবো।