গণমানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদি এবার ফেনীতে
- আপডেট সময় : ০৪:৫৮:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫৩ বার পড়া হয়েছে
দেশকে জানতে এবং জানাতে প্রতিনিয়ত ইত্যাদি যাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। কখনও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খোঁজে, কখনও ইতিহাস-ঐতিহ্য-শেকড়ের সন্ধানে, কখনওবা মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় স্থানের খোঁজে। এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে গিয়ে ইত্যাদি ধারণের ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সমৃদ্ধ ফেনী জেলায়। মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে বাংলাদেশের প্রাচীনতম বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে।
উল্লেখ্য, ফেনী সমৃদ্ধ হওয়ার পেছনে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে বিরাট অবদান।
অনুষ্ঠানটি ধারণ করা হয় ১৭ ডিসেম্বর। ইত্যাদির ধারণ উপলক্ষে ফেনীতে ছিল উৎসবের আমেজ। পুরো স্কুল মাঠই ছিলো দর্শকপূর্ণ। মাঠের সামনে রাস্তায় এবং চারিদিকের বাড়িঘরের ছাদেও ছিলো দর্শকদের উপচে পড়া ভীড়।
ইত্যাদির ধারণ উপলক্ষে সেদিন বর্ণিল আলো এবং বিদ্যালয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে নির্মিত দৃষ্টি নন্দন মঞ্চে ইত্যাদির ধারণ অনুষ্ঠান চলে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। জেলা প্রশাসন ও ফেনী পৌরসভার আন্তরিক সহযোগিতায় অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে ইত্যাদির ধারণ সম্পন্ন হয়। এই দীর্ঘ সময়ে দর্শকরা কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের রাতে কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে মন্ত্রমুগ্ধের মত ধারণ অনুষ্ঠান দেখার পাশাপাশি অবাক বিস্ময়ে দেখেছেন একটি ভালো অনুষ্ঠান করতে হলে কতটা শ্রম দিতে হয়। কিছুক্ষণ পরপরই দর্শকদের তালিবৃষ্টি আর আনন্দ চিৎকারে গোটা ফেনী শহরই যেন সেদিন আনন্দনগরীতে পরিণত হয়েছিলো।
এবারের অনুষ্ঠানে আধুনিক ও ফোকের ফিউশনে একটি দ্বৈত সংগীত গেয়েছেন এ সময়ের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী পান্থ কানাই ও ডলি সায়ন্তনী। গানটির কথা লিখেছেন কবির বকুল, সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন আকাশ মাহমুদ। রয়েছে ফেনী জেলাকে নিয়ে একটি পরিচিতিমূলক গানের সঙ্গে স্থানীয় প্রায় শতাধিক নৃত্যশিল্পীর নাচ। গানটির কথা লিখেছেন মনিরুজ্জামান পলাশ, সুর করেছেন হানিফ সংকেত, সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদি, কণ্ঠ দিয়েছে তানজিনা রুমা, পুলক ও রিয়াদ। নৃত্য পরিচালনা করেছেন মনিরুল ইসলাম মুকুল।
শেকড় সন্ধানী ইত্যাদি সবসময়ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার বিমুখ, জনকল্যাণে নিবেদিত মানুষদের তুলে ধরার পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের অচেনা-অজানা বিষয় ও তথ্যভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রচার করে আসছে। আর সেই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বেও রয়েছে কয়েকটি হৃদয় ছোঁয়া প্রতিবেদন। রয়েছে ফেনীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ এবং কীর্তিমান ব্যক্তিদের উপর তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন।
রয়েছে ফেনীর সীমান্তবর্তী মানুষের সুখ-দুঃখ, জীবন-যাপনের উপর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। আমাদের দেশে অনেকেই আছেন যারা তার নামকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে জীবৎকালেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন স্বনামে। তবে রংপুর জেলার পীরগঞ্জের গনি মিয়া এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এবারের অনুষ্ঠানে বিত্তহীন সেই গনি মিয়ার উপর রয়েছে একটি মানবিক প্রতিবেদন। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষে রংপুর জেলার পীরগাছা মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক প্রকৃতি প্রেমিক রফিকুল হাসানের ব্যতিক্রমী উদ্যোগের উপর রয়েছে একটি সচেতনতামূলক প্রতিবেদন। রয়েছে ফেনীর প্রচার বিমুখ সমাজকর্মী মঞ্জিলা আক্তার মিমির উপর একটি উদ্বুদ্ধকরণ প্রতিবেদন। যিনি অসহায় মানুষকে সহায়তা দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি মানবিক ও সামাজিক সংগঠন ‘সহায়’।
ইত্যাদিতেই প্রথম পরিবেশিত হয় বিশ্বের বিস্ময়কর বিষয়ের উপর বিদেশি প্রতিবেদন। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বে রয়েছে আমেরিকার মিনেসোটা রাজ্যের রচেস্টার শহরে অবস্থিত বিশ্ব সেরা মেয়ো ক্লিনিকের উপর একটি প্রতিবেদন। দর্শকপর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণস্থান ফেনীকে ঘিরে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে হাজার হাজার দর্শকের মাঝখান থেকে ৪ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। ২য় পর্বে নির্বাচিত দর্শকরা আঞ্চলিক ভাষায় একটি নাট্যাংশে অভিনয় করেন। যা ছিল বেশ উপভোগ্য। দর্শকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী, ফেনী কন্যা শমী কায়সার। এই পর্বে হানিফ সংকেতের সঙ্গে রয়েছে তার একটি ভিন্নরকম সাক্ষাৎকার।
ফেনীর মঞ্চে ছিলো যথারীতি সমসাময়িক বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে নানি-নাতির কথার মাতামাতি। এছাড়াও মঞ্চে ফেনী অঞ্চলের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা নিয়ে নাটিকাতে অভিনয় করেছেন ফেনীর কয়েকজন অভিনেতা-অভিনেত্রী।
নিয়মিত পর্বসহ এবারও রয়েছে বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু সরস অথচ তীক্ষ্ণ নাট্যাংশ। শীতের পিঠায় যান্ত্রিক ছোঁয়ায় ঐতিহ্যের সর্বনাশ, চামচা প্রীতিতে অপ্রীতিকর ঘটনা, প্রযুক্তির অপব্যবহার থেকে মুক্তির উপায়, বিষাক্ত আসক্তি, মানবতার নামে ব্যবসা, সংক্রামক উত্তেজনাসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর রয়েছে বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ। এবারের ইত্যাদিতে উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন-সোলায়মান খোকা, জামিলুর রহমান শাখা, জিয়াউল হাসান কিসলু, মম আলী, মাহফুজুর রহমান বাবু, সুভাশিষ ভৌমিক, তুষার খান, শবনম পারভীন, মুকিত জাকারিয়া, বড়দা মিঠু, জিল্লুর রহমান, আমিন আজাদ, মামুনুল হক টুটু, বিণয় ভদ্র, বিলু বড়–য়া, তারিক স্বপন, জামিল হোসেন, আবু হেনা রনি, জাহিদ শিকদার, আনোয়ারুল আলম সজল, নিপু, সাবরিনা নিসা, সুর্বনা মজুমদার, সাজ্জাদ সাজু, মতিউর রহমান, সিলভিয়া কুইয়া, মোনালিসা দীপা, সানজানা, মনজুর আলম, হাশিম মাসুদ, রবিন চৌধুরী, নজরুল ইসলাম, বেলাল আহমেদ মুরাদসহ আরো অনেকে। বরাবরের মত এবারও ইত্যাদির শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ইত্যাদির নিয়মিত শিল্প নির্দেশক মুকিমুল আনোয়ার মুকিম। পরিচালকের সহকারী হিসাবে ছিলেন যথারীতি রানা সরকার ও মোহাম্মদ মামুন।
গণমানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদির এই পর্বটি একযোগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে প্রচারিত হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর, শুক্রবার-রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর। ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। ইত্যাদি স্পন্সর করেছে যথারীতি কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড।