ঢাকা ০২:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গজারিয়াতে ৫০ বছর ধরে বাঁশের সাঁকোই তাদের ভরসা

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ১০:৩৮:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ এপ্রিল ২০২৩ ১০৬ বার পড়া হয়েছে

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার মেঘনা নদীর তীরবর্তী হোসেন্দী ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন দুটি গ্রাম চরবলাকী ও ভাটি বলাকী। এই দুই গ্রামে বসবাস করা ১০ হাজারের বেশি মানুষের যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন বাঁশ ও কাঠের তৈরি সাঁকো।

খালের উপর নির্মিত কাঠ ও বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন ৩ থেকে ৪ হাজার মানুষ। এভাবেই ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে সাঁকো পারাপার করে চলছেন দুই গ্রামের মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সাঁকোটি। খালের উপর সেতু না থাকায় ভোগান্তির শেষ নেই স্থানীয় বাসিন্দাদের। ঝুঁকিপূর্ণ এই সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন অসুস্থ নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও দিনমজুর।

স্থানীয়রা বলছেন, শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হলেও বর্ষাকালে বাড়ে ভোগান্তি। অনেক সময় সাঁকো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়। তখন খাল পারাপারে নৌকাই একমাত্র মাধ্যম হয়ে ওঠে। বর্ষা ও বন্যার সময় নৌকা দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটে অহরহ। ফলে সাঁকোটি অপসারণ করে সেখানে ব্রিজ তৈরির দাবি জানান স্থানীয়রা।

চরবলাকী গ্রামের রহমতুল্লাহ মিয়া জানান, জনপ্রতিনিধিদের পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয়নি সাঁকোর। ছোটবেলা থেকে সাঁকোটি একই রকম দেখে আসছি। এখন ৭০ বছর বয়স, সাঁকোটি সাঁকোই রয়ে গেল। কোনো পরিবর্তন হয়নি। বৃদ্ধ ও শিশুদের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। কয়েকজনকে দুর্ঘটনারও শিকার হতে হয়েছে। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়েও দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়।

খেয়াঘাটের মাঝি মোতালেব সরকার (৫৫) বলেন, ‘সরকার কত কিছু করে, আমাদের এ খালে একটি সেতু বানাতে পারে না। একটি সেতুর জন্য আমাদের দুই গ্রামের শতশত মানুষের কষ্ট নিত্যদিনের সাথী।’

ভাটি বলাকী গ্রামের বৃদ্ধ কাশেম মিয়া বলেন, খালে সেতু না থাকায় ধান, পাট, চাল ও শাকসবজি বাজারে নিয়ে বিক্রি করা মুশকিল। বাধ্য হয়ে কম দামে জিনিসপত্র বেচতে হয়।

স্থানীয় সাইফুল ইসলাম জানান, স্বাধীনতার পর থেকেই এই খালের ওপর সেতু হবে হচ্ছে বলে আশায় বুক বেঁধে আছে হাজার হাজার মানুষ। সেতুর অভাবে মানুষজন অনেক কষ্ট করে নদী পার হয়। অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে। মানুষের এই দুর্ভোগ লাঘবে অনতিবিলম্বে একটি সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন।

হোসেন্দী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নবি হোসেন সরকার বলেন, খালের উপর একটি সেতু নির্মিত হলে অবহেলিত এই এলাকায় পরিবর্তন আসবে। মানুষের আয় উন্নতি বাড়ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের যাতায়াতও বাড়বে। এই সেতু নির্মাণ হলে হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হবে।

হোসেন্দী ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য মনির প্রধান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের ওই দুইটি গ্রামে ১০ হাজারের অধিক লোক বসবাস করে। এর মধ্যে ৩ থেকে ৪ হাজার লোক এই সাকো দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারলেও বর্ষা মৌসুম এলেই আমাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

এ বিষয়ে হোসেন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু বলেন, দুটি গ্রামের সংযোগ খালের সাঁকোটি সংস্কারের জন্য পরিষদ থেকে দু’বার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ওখানে ব্রিজ নির্মাণের জন্য উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

গজারিয়াতে ৫০ বছর ধরে বাঁশের সাঁকোই তাদের ভরসা

আপডেট সময় : ১০:৩৮:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ এপ্রিল ২০২৩

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার মেঘনা নদীর তীরবর্তী হোসেন্দী ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন দুটি গ্রাম চরবলাকী ও ভাটি বলাকী। এই দুই গ্রামে বসবাস করা ১০ হাজারের বেশি মানুষের যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন বাঁশ ও কাঠের তৈরি সাঁকো।

খালের উপর নির্মিত কাঠ ও বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন ৩ থেকে ৪ হাজার মানুষ। এভাবেই ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে সাঁকো পারাপার করে চলছেন দুই গ্রামের মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সাঁকোটি। খালের উপর সেতু না থাকায় ভোগান্তির শেষ নেই স্থানীয় বাসিন্দাদের। ঝুঁকিপূর্ণ এই সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন অসুস্থ নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও দিনমজুর।

স্থানীয়রা বলছেন, শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হলেও বর্ষাকালে বাড়ে ভোগান্তি। অনেক সময় সাঁকো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়। তখন খাল পারাপারে নৌকাই একমাত্র মাধ্যম হয়ে ওঠে। বর্ষা ও বন্যার সময় নৌকা দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটে অহরহ। ফলে সাঁকোটি অপসারণ করে সেখানে ব্রিজ তৈরির দাবি জানান স্থানীয়রা।

চরবলাকী গ্রামের রহমতুল্লাহ মিয়া জানান, জনপ্রতিনিধিদের পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয়নি সাঁকোর। ছোটবেলা থেকে সাঁকোটি একই রকম দেখে আসছি। এখন ৭০ বছর বয়স, সাঁকোটি সাঁকোই রয়ে গেল। কোনো পরিবর্তন হয়নি। বৃদ্ধ ও শিশুদের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। কয়েকজনকে দুর্ঘটনারও শিকার হতে হয়েছে। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়েও দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়।

খেয়াঘাটের মাঝি মোতালেব সরকার (৫৫) বলেন, ‘সরকার কত কিছু করে, আমাদের এ খালে একটি সেতু বানাতে পারে না। একটি সেতুর জন্য আমাদের দুই গ্রামের শতশত মানুষের কষ্ট নিত্যদিনের সাথী।’

ভাটি বলাকী গ্রামের বৃদ্ধ কাশেম মিয়া বলেন, খালে সেতু না থাকায় ধান, পাট, চাল ও শাকসবজি বাজারে নিয়ে বিক্রি করা মুশকিল। বাধ্য হয়ে কম দামে জিনিসপত্র বেচতে হয়।

স্থানীয় সাইফুল ইসলাম জানান, স্বাধীনতার পর থেকেই এই খালের ওপর সেতু হবে হচ্ছে বলে আশায় বুক বেঁধে আছে হাজার হাজার মানুষ। সেতুর অভাবে মানুষজন অনেক কষ্ট করে নদী পার হয়। অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে। মানুষের এই দুর্ভোগ লাঘবে অনতিবিলম্বে একটি সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন।

হোসেন্দী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নবি হোসেন সরকার বলেন, খালের উপর একটি সেতু নির্মিত হলে অবহেলিত এই এলাকায় পরিবর্তন আসবে। মানুষের আয় উন্নতি বাড়ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের যাতায়াতও বাড়বে। এই সেতু নির্মাণ হলে হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হবে।

হোসেন্দী ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য মনির প্রধান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের ওই দুইটি গ্রামে ১০ হাজারের অধিক লোক বসবাস করে। এর মধ্যে ৩ থেকে ৪ হাজার লোক এই সাকো দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারলেও বর্ষা মৌসুম এলেই আমাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

এ বিষয়ে হোসেন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু বলেন, দুটি গ্রামের সংযোগ খালের সাঁকোটি সংস্কারের জন্য পরিষদ থেকে দু’বার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ওখানে ব্রিজ নির্মাণের জন্য উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।