কুড়িগ্রাম আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্র সচিবের যোগসাজশে নকলে সহায়তা শিক্ষকদের, ম্যাজিস্ট্রেট দেখলেই সতর্ক!
- আপডেট সময় : ১১:৩০:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১৪০ বার পড়া হয়েছে
কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে জেলা সদরের ৩০ মাদ্রাসার পরীক্ষার্থীরা দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছে। এই কেন্দ্রের পরীক্ষায় ব্যাপকহারে নকল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেন্দ্রসচিব ও শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদতে শিক্ষার্থীরা নকল করে পরীক্ষা দিচ্ছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। পরীক্ষা শেষে কেন্দ্রের কক্ষ ও শৌচাগারে গিয়ে নকলের কাগজ দেখা গেছে।
তবে এসব অভিযোগকে প্রোপাগান্ডা বলে দাবি করেছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও কেন্দ্রসচিব মাওলানা মো. নূর বখত। কেন্দ্রের দুর্নাম হয় এমন প্রতিবেদন না করার অনুরোধ করেন তিনি। বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই ওই কেন্দ্রের কয়েকটি কক্ষ ও শৌচাগারে নকলের টুকরো পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
কেন্দ্র সূত্র জানায়, কুড়িগ্রাম কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে সদরের ৩০ মাদ্রাসার ৯৩১ শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এই কেন্দ্রের প্রায় প্রতিটি কক্ষে নকলের সুবিধা নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মাদ্রাসার একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র ও কেন্দ্রের কয়েকজন পরীক্ষার্থী জানায়, পরীক্ষার দিন বিষয়ভিত্তিক শিক্ষককে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়া না হলেও পরীক্ষায় অংশ নেওয়া কয়েক মাদ্রাসার বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের কেন্দ্রে রাখা হয়। তারা ওই বিষয়ের বহু নির্বাচনি প্রশ্নপত্র সমাধান করে পরীক্ষা কক্ষে পৌঁছে দেন। শিক্ষকদের পাহারায় শিক্ষার্থীরা তা দেখে দেখে উত্তরপত্র পূরণ করে। এছাড়া লিখিত পরীক্ষায় বইয়ের পাতা ও ফটোকপি করা কাগজ নিয়ে পরীক্ষা দেয় শিক্ষার্থীরা। অনেক সময় এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে নকল পৌঁছে দেন দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা। পরীক্ষা চলাকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরাই পরীক্ষার্থীদের সতর্ক করেন। তখন পরিবেশ স্বাভাবিক থাকে।
মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধ্যক্ষ মাওলানা মো. নূর বখতের ভাতিজা ও আলিয়া মাদ্রসার একজন শিক্ষক টাকার চুক্তিতে প্রতি বছর নকল সরবরাহের কাজ করছেন। এতে অধ্যক্ষসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক জড়িত। কয়েক বছর আগে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট পরীক্ষার্থীদের নকল সরবরাহের অভিযোগে কয়েকজন শিক্ষককে হাতেনাতে ধরেছিলেন। আর কখনও এমন অনৈতিক কাজ না করার শর্তে সেবার রক্ষা পেয়েছিলেন তারা। এরপরও নকল সরবরাহ বন্ধ হয়নি। প্রতি বছর দাখিল পরীক্ষাসহ এই কেন্দ্রে যেকোনো পরীক্ষায় হল চুক্তিসহ নানা অনৈতিক কাজে জড়াচ্ছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা।
দাখিল পরীক্ষা চলাকালে কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্র পরিদর্শন করে আসা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীরা ব্যাপক নকল করার সুযোগ পাচ্ছে। বাইরে থেকে কেউ গেলেই শিক্ষকরা পরীক্ষার্থীদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। শিক্ষকরা এমন অনৈতিক কাজে সহায়তা করলে ম্যাজিস্ট্রেট গিয়েও সহজে নকল ধরতে পারবেন না।’
তবে কেন্দ্রসচিব ও কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নূর বখত এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘এখন নকলের যুগ শেষ হয়ে গেছে। এমনিতেই মাদ্রাসা নিয়ে অনেকের নেতিবাচক ধারণা। সেসব ধারণা থেকে এমন প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। আপনি চাইলে নিজে যেকোনো দিন কেন্দ্রে এসে দেখতে পারেন।’
তার ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র সমাধানে সহায়তার অভিযোগ প্রসঙ্গে মাওলানা নূর বখত বলেন, ‘এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ। ট্যাগ অফিসারসহ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কেন্দ্রে অবস্থান করেন। এছাড়া ইউএনও ও এসিল্যান্ড কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। নকল করা কিংবা নকলে সহায়তা করার প্রশ্নই আসে না। যারা এসব বলছেন, তারা মাদ্রাসা ও পরীক্ষা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাইছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুসফিকুল আলম হালিম বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। সংশ্লিষ্ট ট্যাগ অফিসারসহ গোয়েন্দা সংস্থাকে অভিযোগ তদন্তের জন্য বলবো। এছাড়া আগামীতে আমরা ওই কেন্দ্রে বিশেষ নজর দেবো