কারা পাবেন পেনশন সুবিধা, মিলবে যেভাবে
- আপডেট সময় : ০৭:০৮:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৩ ১১৭ বার পড়া হয়েছে
দেশের সব নাগরিকের জন্য পেনশন নিয়ে চিন্তা শুরু হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদে। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত দায়িত্বে থাকাকালে ২০১৭-১৮ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের একটি রূপরেখা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এ নিয়ে পাইলট প্রকল্পের কথা। এই প্রস্তাবকে নিজের স্বপ্নের প্রকল্প বলেও উল্লেখ করেছিলেন প্রয়াত এই অর্থমন্ত্রী।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সময় প্রকাশ্যে এ নিয়ে খুব একটা কাজ দেখা না গেলেও ভেতরে ভেতরে কাজ এগিয়েছে। যার ফলে গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ‘সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা প্রবর্তন’ বিষয়ে একটি উপস্থাপনা দেয়। পদে পদে নানা কার্যক্রম শেষে এবার জাতীয় সংসদে পাস হলো ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল, ২০২২।’
দেশের সব নাগরিককে পেনশন সুবিধার আওতায় আনার এই উদ্যোগ নিয়ে সরকার গেজেট জারি করে বাধ্যতামূলক না করা পর্যন্ত পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ হবে ঐচ্ছিক। এর মাধ্যমে ৬০ বছর পর আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন নাগরিকরা। এই সুবিধা পেতে ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী নাগরিকদের নির্ধারিত হারে চাঁদা দিতে হবে।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি সংসদে পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদে বিলটি স্থিরকৃত আকারে পাস হয়। যদিও আর্থিক খাতের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম-দুর্নীতির কথা তুলে ধরে এই উদ্যোগের সমালোচনাও করেছেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সংসদে বিল পাসের দিনে বলেন, ‘এই পেনশন স্কিমে সরকারের অংশগ্রহণ কী? সরকারের কোনো অংশগ্রহণ নেই। এটা ব্যাংকের ডিপিএস স্কিমের মতো। গুঞ্জন আছে- সরকারের টাকার অভাব হয়েছে। জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কী সরকার চলবে?’
এছাড়াও বিল পাসের আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরাম সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, ‘উদ্যোগটি চমৎকার হলেও এই পেনশন ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের সাড়া পাওয়া যাবে না। কারণ সরকারি চাকরিজীবীরা যেভাবে পেনশন পান, তার সঙ্গে অনেক কিছুই সামাঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মানুষ রিটার্ন কীভাবে পাবে তা পরিষ্কার নয়। এটি অনেকটা ব্যাংকিং প্যাকেজের মতো। এই বিলটি পাসের আগে সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া উচিত।’
কারা, কীভাবে পাবেন পেনশনের সুবিধা
পেনশন সুবিধার বিষয়ে বলা হয়েছে, এই স্কিমে যুক্ত হলে ৬০ বছর পর নাগরিকরা আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন। এই সুবিধা পেতে ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী নাগরিকদের নির্ধারিত হারে চাঁদা দিতে হবে। তবে বিশেষ বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ্বরাও এই আইনের আওতায় নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা পরিশোধ করে পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে স্কিমে অংশগ্রহণের তারিখ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা প্রদান শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন, সে বয়স থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন। এ ক্ষেত্রে আজীবন বলতে, পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত বিবেচনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা প্রায় সাড়ে আট কোটি। এরমধ্যে সরকারি চাকরিজীবী রয়েছেন ১৪ লাখের কিছু বেশি। বিলটি আইনে পরিণত হলে অর্থাৎ সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হলে প্রায় আট কোটি ৩৫ লাখ মানুষ এই ব্যবস্থার আওতায় আসবেন।
পেনশন আইনে বলা হয়েছে, চাঁদাদাতা টানা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিলে মাসিক পেনশন পাবেন। এছাড়া চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জিভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরাও এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন।
আইনে আরও বলা আছে, নিম্নআয়ের নাগরিকদের অথবা অসচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে দিতে পারবে।
বিলে বলা হয়েছে, একজন পেনশনার আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন। তবে পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তার নমিনি অবশিষ্ট সময়ের জন্য (৭৫ বছর পর্যন্ত) মাসিক পেনশন পাবেন। চাঁদাদাতা ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে মারা গেলে জমা করা অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।
এছাড়াও পেনশনের জন্য জমা দেওয়া অর্থ, কোনো পর্যায়ে এককালীন তোলার প্রয়োজন হলে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তুলতে পারবেন, যা ফিসহ পরিশোধ করতে হবে। পাশাপাশি পেনশন থেকে পাওয়া অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে। সেই সঙ্গে পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে।
সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে সরকারি অথবা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের চাঁদার অংশ নির্ধারণ করবে কর্তৃপক্ষ। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত সরকারি ও আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা পেনশন ব্যবস্থার আওতাবহির্ভূত থাকবেন।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে থাকবেন কারা?
এই আইন কার্যকর হওয়ার পর সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পাঁচ সদস্যের একটি জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করবে। যার প্রধান হবেন নির্বাহী চেয়ারম্যান। আর বাকি চারজন সদস্য হিসেবে থাকবেন। এদের নিয়োগ করবে সরকার। তাদের চাকরির মেয়াদ শর্তবিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। এরমধ্যে কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ করবে সরকার। সরকারের অনুমোদন নিয়ে এই কর্তৃপক্ষ ঋণ নিতে পারবে। এছাড়া পেনশন ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৬ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে বিলে। এর চেয়ারম্যান হবেন অর্থমন্ত্রী। আর পর্ষদের সদস্যসচিব হবেন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান।
সুত্রঃ ঢাকা মেইল