ঢাকা ০৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক নজরে পারভেজ মোশাররফ

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
  • আপডেট সময় : ০৮:১২:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ১০২ বার পড়া হয়েছে

পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সেনা শাসক জেনারেল (অব.) পারভেজ মোশাররফ মারা গেছেন। ৭৯ বছরের এই সাবেক নেতা অ্যামাইলয়েডোসিস নামক একটি বিরল রোগ নিয়ে দুবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চার তারকা জেনারেল পারভেজ মোশাররফের জীবন ছিল নানা রঙে রঙিন।

১৯৯৯ সালে দেশে সামরিক আইন জারি করার পর মোশাররফ প্রধান নির্বাহীর পদ গ্রহণ করেন এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে অভিশংসন এড়াতে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। পরের নির্বাচনে ভরাডুবি হয় তার।

সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়ার পর ১৯৯৮ সালে তিনি বাহিনীর প্রধান হন। তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নওয়াজ শরিফ। সেনাবাহিনীর প্রধান হওয়ার প্রায় এক বছর পর তিনি নওয়াজ শরিফকেই ক্ষমতাচ্যুত করেন।

জেনারেল মোশাররফকে সেনাবাহিনীর প্রধান করা ছিল পিএমএল-নওয়াজের এই নেতার জন্য একটি বাজি। কারণ তিনি জ্যেষ্ঠ জেনারেলদের পাশ কাটিয়ে তাকে সেনাপ্রধান করেছিলেন। ১৯৯৯ সালে কাশ্মিরের বিভিন্ন এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হয় পাকিস্তান। ওই ব্যর্থতার দায় একা নিতে চায়নি সেনাবাহিনী।pervez musharraf

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মোশাররফকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন নওয়াজ। কিন্তু সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য। নওয়াজ সরকারের বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থান হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমর্থন জানান জেনারেল মোশাররফ।

প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিল্লিতে ১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট জন্ম পাকিস্তানের সাবেক এই একনায়কের। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তার পরিবার পাকিস্তানে চলে যায়।

পারভেজের জন্ম হয়েছিল দিল্লিতে ১৯৪৩ সালে। তিনি করাচি এবং তুরস্কের ইস্তানবুলে বড় হন। লাহোরের ফরমান ক্রিশ্চিয়ান কলেজে মোশাররফ গণিত নিয়ে ভর্তি হলেও পরিবারের অমতে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন ১৯৬১ সালে। ১৯৬৪ সালে তিনি একাডেমি থেকে ২য় লেফটেন্যান্ট হিসেবে বের হন। এই ২য় লেফটেন্যান্ট পদবীতেই তিনি ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

আশির দশকে ব্রিগেডিয়ার পদবীতে তিনি একটি গোলন্দাজ ব্রিগেডের অধিনায়কত্ব করেন। নব্বইয়ের দশকে মেজর-জেনারেল মোশাররফ একটি পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়কত্ব এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডো বাহিনী ‘স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপ’ এর প্রধান অধিনায়ক হন। পরে সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে ডেপুটি মিলিটারি সেক্রেটারি এবং ডাইরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশন্স ডাইরেক্টরেট ছিলেন।

১৯৯৮ সালের অক্টোবর মাসে পারভেজ মোশাররফের পদবী লেফটেন্যান্ট-জেনারেল থেকে পূর্ণ জেনারেল পদবীতে উন্নীত করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। পূর্ণ জেনারেল হিসেবে পারভেজ সেনাবাহিনী প্রধান এবং চেয়ারম্যান অব দ্যা জয়েন্ট চীফস অব স্টাফ কমিটির দায়িত্ব পান।pervez musharraf

১৯৯৯ সালে ভারতে হামলার মূল পরিকল্পনা পারভেজই করেছিলেন যেটা পরে কার্গিল যুদ্ধতে রূপ নেয়। প্রধানমন্ত্রী শরিফের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে পারভেজের তর্কাতর্কি থাকায় শরিফ পারভেজকে সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জেনারেল পারভেজ এর জবাব হিসেবে নওয়াজ শরিফকে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেন ১৯৯৯ সালে। শরিফ গৃহবন্দী হন এবং তাকে রাওয়ালপিন্ডির সেন্ট্রাল জেলে আটকে রাখা হয়।

পারভেজ দেশের শাসনক্ষমতা পরিপূর্ণভাবে নিজের হাতে তুলে নেন এবং ২০০১ সালে চেয়ারম্যান অব দ্যা জয়েন্ট চীফস অব স্টাফ কমিটির পদ ছেড়ে দেন যদিও তিনি আর্মি চিফের দায়িত্বে থেকে যান। ২০০১ সালের ২০শে জুন পারভেজ নিজেকে দেশের প্রকৃত প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন এবং ২০০২ সালের ১ই মে তারিখে একটি রেফারেন্ডামের মাধ্যমে তিনি পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট থাকবেন বলে জানান।pervez musharraf

২০১৬ সালে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয় এবং মোশাররফ চিকিৎসার জন্য দুবাই ভ্রমণ করেন। ২০১৯ দেশদ্রোহের অভিযোগে পাকিস্তানের লাহোর উচ্চ আদালতের বিচারক শহীদ করিমের বেঞ্চে পারভেজের মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হয়। তবে খুব শিগগিরই মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করা হয়।

তিনি তার বাবা-মায়েরদ্বিতীয় পুত্র। তার দুই ভাই, জাভেদ এবং নাভেদ। তিনি ১৯৬৮ সালে সেহবাকে বিয়ে করেন। তাদের সন্তান আয়লা এবং বিলা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

এক নজরে পারভেজ মোশাররফ

আপডেট সময় : ০৮:১২:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সেনা শাসক জেনারেল (অব.) পারভেজ মোশাররফ মারা গেছেন। ৭৯ বছরের এই সাবেক নেতা অ্যামাইলয়েডোসিস নামক একটি বিরল রোগ নিয়ে দুবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চার তারকা জেনারেল পারভেজ মোশাররফের জীবন ছিল নানা রঙে রঙিন।

১৯৯৯ সালে দেশে সামরিক আইন জারি করার পর মোশাররফ প্রধান নির্বাহীর পদ গ্রহণ করেন এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে অভিশংসন এড়াতে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। পরের নির্বাচনে ভরাডুবি হয় তার।

সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়ার পর ১৯৯৮ সালে তিনি বাহিনীর প্রধান হন। তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নওয়াজ শরিফ। সেনাবাহিনীর প্রধান হওয়ার প্রায় এক বছর পর তিনি নওয়াজ শরিফকেই ক্ষমতাচ্যুত করেন।

জেনারেল মোশাররফকে সেনাবাহিনীর প্রধান করা ছিল পিএমএল-নওয়াজের এই নেতার জন্য একটি বাজি। কারণ তিনি জ্যেষ্ঠ জেনারেলদের পাশ কাটিয়ে তাকে সেনাপ্রধান করেছিলেন। ১৯৯৯ সালে কাশ্মিরের বিভিন্ন এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হয় পাকিস্তান। ওই ব্যর্থতার দায় একা নিতে চায়নি সেনাবাহিনী।pervez musharraf

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মোশাররফকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন নওয়াজ। কিন্তু সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য। নওয়াজ সরকারের বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থান হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমর্থন জানান জেনারেল মোশাররফ।

প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিল্লিতে ১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট জন্ম পাকিস্তানের সাবেক এই একনায়কের। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তার পরিবার পাকিস্তানে চলে যায়।

পারভেজের জন্ম হয়েছিল দিল্লিতে ১৯৪৩ সালে। তিনি করাচি এবং তুরস্কের ইস্তানবুলে বড় হন। লাহোরের ফরমান ক্রিশ্চিয়ান কলেজে মোশাররফ গণিত নিয়ে ভর্তি হলেও পরিবারের অমতে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন ১৯৬১ সালে। ১৯৬৪ সালে তিনি একাডেমি থেকে ২য় লেফটেন্যান্ট হিসেবে বের হন। এই ২য় লেফটেন্যান্ট পদবীতেই তিনি ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

আশির দশকে ব্রিগেডিয়ার পদবীতে তিনি একটি গোলন্দাজ ব্রিগেডের অধিনায়কত্ব করেন। নব্বইয়ের দশকে মেজর-জেনারেল মোশাররফ একটি পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়কত্ব এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডো বাহিনী ‘স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপ’ এর প্রধান অধিনায়ক হন। পরে সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে ডেপুটি মিলিটারি সেক্রেটারি এবং ডাইরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশন্স ডাইরেক্টরেট ছিলেন।

১৯৯৮ সালের অক্টোবর মাসে পারভেজ মোশাররফের পদবী লেফটেন্যান্ট-জেনারেল থেকে পূর্ণ জেনারেল পদবীতে উন্নীত করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। পূর্ণ জেনারেল হিসেবে পারভেজ সেনাবাহিনী প্রধান এবং চেয়ারম্যান অব দ্যা জয়েন্ট চীফস অব স্টাফ কমিটির দায়িত্ব পান।pervez musharraf

১৯৯৯ সালে ভারতে হামলার মূল পরিকল্পনা পারভেজই করেছিলেন যেটা পরে কার্গিল যুদ্ধতে রূপ নেয়। প্রধানমন্ত্রী শরিফের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে পারভেজের তর্কাতর্কি থাকায় শরিফ পারভেজকে সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জেনারেল পারভেজ এর জবাব হিসেবে নওয়াজ শরিফকে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেন ১৯৯৯ সালে। শরিফ গৃহবন্দী হন এবং তাকে রাওয়ালপিন্ডির সেন্ট্রাল জেলে আটকে রাখা হয়।

পারভেজ দেশের শাসনক্ষমতা পরিপূর্ণভাবে নিজের হাতে তুলে নেন এবং ২০০১ সালে চেয়ারম্যান অব দ্যা জয়েন্ট চীফস অব স্টাফ কমিটির পদ ছেড়ে দেন যদিও তিনি আর্মি চিফের দায়িত্বে থেকে যান। ২০০১ সালের ২০শে জুন পারভেজ নিজেকে দেশের প্রকৃত প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন এবং ২০০২ সালের ১ই মে তারিখে একটি রেফারেন্ডামের মাধ্যমে তিনি পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট থাকবেন বলে জানান।pervez musharraf

২০১৬ সালে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয় এবং মোশাররফ চিকিৎসার জন্য দুবাই ভ্রমণ করেন। ২০১৯ দেশদ্রোহের অভিযোগে পাকিস্তানের লাহোর উচ্চ আদালতের বিচারক শহীদ করিমের বেঞ্চে পারভেজের মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হয়। তবে খুব শিগগিরই মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করা হয়।

তিনি তার বাবা-মায়েরদ্বিতীয় পুত্র। তার দুই ভাই, জাভেদ এবং নাভেদ। তিনি ১৯৬৮ সালে সেহবাকে বিয়ে করেন। তাদের সন্তান আয়লা এবং বিলা।