আন্দোলন প্রত্যাহারে মাউশির ডিজির অনুরোধ, শিক্ষকদের ‘না’
- আপডেট সময় : ০৫:০৫:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০২৩ ৭৬ বার পড়া হয়েছে
সরকারের পক্ষ থেকে দাবি পূরণে কোনো আশ্বাস পেলে আন্দোলন স্থগিত করার কথা বলেছিলেন মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা। সবশেষ সোমবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের মহাপরিচালকের (ডিজির) ডাকে সাড়া দিয়ে তার সঙ্গে বৈঠকও করেছেন শিক্ষক নেতারা। তবে এই বৈঠক শেষেও শিক্ষকদের আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা আসেনি। বরং জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
বৈঠক শেষে আন্দোলনকারী শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি বজলুর রহমান মিয়া বলেন, মাউশি ডিজিসহ অন্যরা আমাদের জানিয়েছেন- বর্তমানে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিব অসুস্থ। তবে মাউশির পক্ষ থেকে আমাদের দাবির বিষয়টি মন্ত্রীকে জানানো হবে। এরপর মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত জানা যাবে।
আন্দোলনকারীদের এই মুখপাত্র বলেন, যেহেতু আমরা সুস্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি, তাই আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান চালিয়ে যাওয়া হবে। দেশের বিভিন্ন জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে জাতীয়করণ দাবিতে গত মঙ্গলবার (১১ জুলাই) থেকে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) ব্যানারে রাজপথের আন্দোলনে সরব রয়েছেন আন্দোলনরত এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা। সারাদেশ থেকে কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।
এরই অংশ হিসেবে সোমবার সকাল ৮টা থেকেই শিক্ষকরা প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হতে থাকেন। পরে সকাল ১০টার মধ্যে প্রেসক্লাবের সামনের পল্টন মোড় থেকে হাইকোর্ট মোড়গামী সড়ক অবরোধ করে রাস্তায় বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা। শুরু হয় মুহুর্মুহু স্লোগান। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষক-কর্মচারীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকলে বেলা ১১টা নাগাদ প্রেসক্লাবের সামনের উভয় পাশের রাস্তাই বন্ধ করে দেন তারা। এভাবে শিক্ষকদের আন্দোলন চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত।
রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এই সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আশপাশের কয়েকটি এলাকায়ও ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ, তৈরি হয় যানবাহনের দীর্ঘ সারি। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হাইকোর্ট মোড় থেকে পল্টন মোড়গামী সড়ক ফাঁকা করতে গেলে শিক্ষকদের সঙ্গে ধ্বস্তাধস্তি হয়। শিক্ষক নেতাদের দাবি- পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করলে কয়েকজন শিক্ষক আহত হয়েছেন। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষক সংগঠন বিটিএর সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকদের কেউই আহত শিক্ষকদের নাম জানাতে পারেননি। এরপর বিকেল ৩টায় হাইকোর্ট মোড় থেকে পল্টন মোড়গামী সড়ক যান চলাচলের জন্য ফাঁকা করে দিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা।
এরমধ্যে মাউশি মহাপরিচালকের আহ্বানে বৈঠকে অংশ নিতে আন্দোলনকারী শিক্ষক প্রতিনিধিদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মাউশিতে যান। বিকেলে সাড়ে ৫টায় শুরু হওয়া ওই বৈঠক শেষ হয় সন্ধ্যা পৌনে ৭টায়।
বৈঠকে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ ছাড়াও কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরীসহ অন্যরা অংশ নেন। আর আন্দোলনকারী শিক্ষকদের পক্ষে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি বজলুর রহমান মিয়া, সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেনসহ অন্যরা অংশ নেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, মাউশি ডিজির কাছে আমরা আমাদের দাবি তুলে ধরেছি। মাউশি ডিজিসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা গুরুত্ব দিয়ে আমাদের কথা শুনেছেন। তারা আমাদের দাবি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরার আশ্বাস দিয়েছেন। আলোচনা শুরু হলো।
সার্বিক বিষয়ে বৈঠক শেষে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষকদের ডেকে তাদের দাবির বিষয়টি শুনেছি। এই দাবির বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করব। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে আন্দোলন প্রত্যাহার করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে শিক্ষকদের অনুরোধ করেছি আমি।