“আদা চাষ এত সহজ”
- আপডেট সময় : ০১:২১:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৭৩ বার পড়া হয়েছে
আদা বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ মসলা জাতীয় ফসল।
★★ আদা চাষের অনুকুল আবহাওয়াঃ
আদার জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া দরকার । আংশিক ছায়াযুক্ত স্থানে আদা ভাল হয়।
★★ আদা চাষের উপযুক্ত মাটিঃ
উর্বর দো-আঁশ মাটি আদা চাষের জন্য সবচেয়ে ভাল । তবে এঁটেল মাটিতে চাষ করলে পানি নিষ্কাশনের খুব ভাল ব্যবস্থা থাকতে হবে ।
★★ আদার জীবনকালঃ
জাত ভেদে জীবনকাল ২৯০-৩১০ দিন
★★ আদা চাষের উপযুক্ত সময় :
মধ্যে এপ্রিল থেকে মধ্যে মে পর্যন্ত।
★★ আদার জাত :
বারি আদা – ১ ও বারি আদা – ২ এছাড়াও স্হানীয় উন্নত ও বিশ্বস্ত জাতের আদা চাষ করা যেতে পারে।
★★ বিশেষ দ্রষ্টব্য : খাবার আদা অথবা ভারতীয়, বার্মার আদা, চীনের আদা লাগানো উচিত হবে না এতে চারা বের হলেও ফলন কম হতে পারে।
★★ আদার জমি তৈরিঃ
মার্চ-এপ্রিল মাসে বৃষ্টি হওয়ার পর জমি যখন জো অবস্থায় আসে তখন ৬-৮ টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করা হয় । এরপর ৪ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট বেডের চারিদিকে পানি সেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধার জন্য ৫০ সেমি. চওড়া নালা তৈরি করতে হবে ।
★★ আদার বীজ বপনের উপযুক্ত সময়ঃ
এপ্রিল থেকে মে মাসে আদা বপন করা যায়। তবে এপ্রিলের শুরুতে আদা লাগালে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
★★ বীজের পরিমাণ :
বিঘা প্রতি ৩৩ শতকে ২৫০-৩২০ কেজি আদার প্রয়োজন হয়।
শতক প্রতি গড়ে ৮-১০ কেজি
★★ বীজের সাইজ / আকার :
আদার ফলন অনেকাংশে বীজের আকারের ওপর নির্ভর করে। বীজ আদার আকার বড় হলে ফলন বেশি হয়। ৩৫-৪০ গ্রাম আকারের বীজ রোপণ করলে আদার ফলন বেশি পাওয়া যায়। এজন্য বীজ রাইজোমকে সাবধানে ২.৫-৫ সেমি. দৈর্ঘ্যের দুই চোখ বিশিষ্ট ৩৫-৪০ গ্রাম ওজনের খন্ডে কেটে নিতে হবে। তবে খরচের কথা বিবেচনা করলে তুলনামূলকভাবে ছোট (২০-৩০ গ্রাম) আকারের বীজ ব্যবহার করা যেতে পারে। এ আকারের বীজ রোপণ করলে ফলন সবচেয়ে বেশি হয়।
★★ বীজ শোধন পদ্ধতি :
প্রায় ৮০ লিটার পানিতে ১৬০ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম মিশিয়ে তার মধ্যে ১০০ কেজি আদা ৩০-৪০ মিনিট ডুবিয়ে শোধন করতে হবে। এ বীজ ছায়াযুক্ত স্থানে খড় বা চট দিয়ে ঢেকে রাখলে ভ্রুন বের হয়, যা জমিতে বপন করতে হয়।
★★ বীজ বপন দুরত্বঃ
সারি থেকে সারি ২০ ইঞ্চি বা ৫০ সে: মি:
গাছ থেকে গাছ প্রতি : ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সে: মি:
★★ বীজ বপন পদ্ধতিঃ
বীজ আদা রোপনের সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে সব আদার অংকুরিত মুখ একদিকে থাকে।
কারণ ৭৫-৯০ দিন পর এক পাশের মাটি সরিয়ে পিলাই (বপনকৃত আদা) সংগ্রহ করা যায়। এতে ৬০-৭০% খরচ উঠে আসবে।
★★ সার প্রয়োগ পদ্ধতি :
কৃষি পরিবেশ অঞ্চলের উপর সারের পরিমান নির্ভর করে । বেশি ফলন পেতে হলে আদার জমিতে প্রচুর পরিমাণ জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে ।
★★ সারের পরিমাণ (বিঘা প্রতি ৩৩ শতকে):
১.গোবর ১৫০০ কেজি
২.ইউরিয়া ৪৬ কেজি
৩.টিএসপি ৩৬ কেজি
৪.এমওপি/পটাশ ৩৩ কেজি
৫.জিপসাম ২৫ কেজি
৬.দস্তা ১কেজি
★★ প্রতি শতকে
গোবর ৪৫ কেজি
ইউরিয়া ১.৪ কেজি
টিএসপি ১.১০ কেজি
এমওপি/পটাশ ১ কেজি
জিপসাম ৭৫০ গ্রাম
দস্তা ৩০ গ্রাম
★★ সার_প্রয়োগ_পদ্ধতিঃ
জমি চাষের সময় গোবর, টিএসপি, অর্ধেক এমপি, জিপসাম এবং জিংক মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। অর্ধেক ইউরিয়া আদা রোপনের ৫০ দিন পর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া ও এমপি সমানভাগে দুই কিস্তিতে রোপনের যথাক্রমে ৮০ ও ১১০ দিন পর জমিতে পার্শ্ব প্রয়োগ করতে হবে। এই সময় গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে।
★★ আগাছা দমনঃ
বপনের ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে আদার গাছ বের হবে। বপনের ৫-৬ সপ্তাহ পর আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। আদার বৃদ্ধি ও পানি নিষ্কাশনের জন্য দুই সারির মাঝের মাটি ২-৩ বারে তুলে দিতে হবে। অনেক সময় মালচিং করলে ভাল হয়। জমিতে ছায়াদানকারী হিসেবে ধৈঞ্চা, বকফুল লাগানো যেতে পারে। সমস্ত গাছ ১.৫-২.০ মিটার লম্বা হলে আগা কেটে দিয়ে শাখা প্রশাখা বৃদ্ধি করে ছায়ার ব্যবস্থা করা। এছাড়া আদার জমিতে লাউ, শিম, পটল লাগিয়ে বাড়তি আয় করা যায়।
★★ পিলাইতোলাঃ
আদা রোপণের পর গাছও শিকড় গজিয়ে গেলে বীজ আদা তুলে নেওয়া যায়।
এতে গাছের বৃদ্ধিতে তেমন কোন ক্ষতি হয় না।
এ থেকে উত্তোলিত বীজ আদা বিক্রি করে কিছু আর্থিক লাভ হয়। এই পদ্ধতিটিকেই পিলাই তোলা বলে।
কারণ ৭৫-৯০ দিন পর এক পাশের মাটি সরিয়ে পিলাই (বপনকৃত আদা) সংগ্রহ করা যায়। এতে ৬০-৭০% খরচ উঠে আসবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : বস্তায় আদা চাষ করলে পিলাই না তোলাই ভালো।
★★ রোগবালাইঃ
কন্দ পচা রোগ হলে
রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে (আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাসে) কপার অক্সি ক্লোরাইড বা কপার হাইড্রো অক্সাইড গ্রুপের বালাইনাশক প্রতি লিটার পানিতে ৪ গ্রাম হারে মিশিয়ে কান্ড ও মাটির সংযোগস্থলে ১৫-২০ দিন পরপর প্রয়োগ করতে হবে। এই দমন ব্যবস্থা আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাখতে হবে।
৭। আক্রান্ত গাছ রাইজোমসহ সম্পূর্ণরুপে তুলে ধ্বংস করতে হবে।
★★ লিফ ব্লাইট রোগের আক্রমণের শুরুতে কার্বেন্ডাজিম ২ গ্রাম হারে লিটারে বা ফলিকুর ১ মিলি হারে লিটারে বা স্কোর ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যায়।
★★ পোকাঃ
পাতা খেকো পোকার ক্ষেত্রে
১। এ পোকা দমনের জন্য ১০ দিন পর পর ২-৩ বার বিকেল বেলায় ০.৫% হারে ডেসিস বা ০.২% হারে রাইসন বা সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের ঔষধ স্প্রে করতে হবে।
★★ কান্ড ছিদ্রকারী পোকার ক্ষেত্রেঃ
১। কান্ডে ছিদ্র দেখামাত্রই ০.২% হারে সেভিন ডাষ্ট ১০ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
রাইজোম ফ্লাই পোকার ক্ষেত্রে
১। এ পোকা আক্রমন হলে ক্লোরোপাইরিফস গ্রুপের কীটনাশক ২ গ্রাম/লিটার হারে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
★★ আদা_সংগ্রহঃ
কন্দ রোপনের ৯-১০ মাস পর পাতা শুকিয়ে গেলে সংগ্রহ করতে হয়। সাধারণত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে কোদাল দিয়ে মাটি আলাদা করে আদা উত্তোলন করা হয়। ফসল সংগ্রহের পর মাটি পরিষ্কার করে আদা সংরক্ষণ করা হয়।
★★ আদা সংরক্ষণঃ
আদা গাছ মরে যাওয়ার সাথে সাথেই আদা বস্তা থেকে আদা উঠিয়ে ফেলতে হবে। তা না হলে আদার ফলন কমে যেতে পারে। আদা উঠানোর পর বড় আকারের বীজ রাইজোম ছায়াযুক্ত স্থানে বা ঘরের মেঝেতে বা মাটির নিচে গর্ত করে গর্তের নিচে বালির ২ ইঞ্চি পুরু স্তর করে তার উপর আদা রাখার পর বালি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। পরে খড় বিছিয়ে দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এতে আদার গুনাগুন এবং ওজন ভাল থাকে।
লেখকঃ অতনু সরকার,
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, গোদাগাড়ী, রাজশাহী।