রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর ) রাবি ছাত্রলীগের সম্মেলন শেষে এ ঘোষণা দেন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে সম্মেলনের সূচনা করা হয়। এরপর শোক প্রস্তাব করেন রাবি ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক আবুল বাশার। এসময় বিগত কমিটিকালে মৃত্যুবরণ করা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। তারপর সাংগাঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু।
এ সময় বিদায়ী বক্তব্যে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, আজ যখন বিএনপি জামায়াত পিছনের রাস্তা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়। তখন ছাত্রলীগ নিজের উদ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। দায়িত্ব পাওয়ার সাথে সাথে আমি ও আমার সম্পাদক নিরলস ভাবে কাজ করে আসছি। আমি আশা করছি সম্মেলনের পর যারা নেতৃত্বে আসবে তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে শিক্ষার্থীদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌছে দিবেন।
তিনি আরো বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে রাবির ১৭ টি হলের পুর্নাঙ্গ কমিটি করেছি। সকল ইনস্টিটিউটের আলাদা কমিটি করেছি। এই দীর্ঘ চলার পথে আমার ভুল ক্ষমা আপনারা করবেন। আজকের পর আর আপনাদের সামনে নেতা হয়ে বক্তব্য দিতে দাড়াব না। ব্যক্তি স্বার্থে কাউকে কখনো কাজ দেইনি। আমার সকল কৃতিত্ব আজ কর্মীদের দিয়ে দিলাম। আর সকল ব্যর্থতার দায় ভার আমি ও আমার সাধারণ সম্পাদক মাথা পেতে নিলাম।
সম্মেলনে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে সাদ্দাম হোসেন বলেন, আজকের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলন সফল হয়েছে। কিবরিয়া ও রুনুর নেতৃত্বে রাবি ছাত্রলীগ ঐক্যবদ্ধ ছিল।
আমি চাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ হবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আদর্শ। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যাতে আমাদের আদর্শ দেখে ছাত্রলীগে যোগ দেয়। ছাত্রলীগ নেতাদের এমনভাবে নেতৃত্ব দিবে যাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে একটি বাগানের মতো বসবাস করতে পারে।
পদপ্রত্যাশীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, রাজনীতি মানে শুধু পদ অর্জন নয়। রাজনীতি মানে ব্যক্তিত্ব অর্জন, মানুষকে ছাড় দেওয়ার ক্ষমতা ও মানুষের সাথে গভীরভাবে সম্পর্ক তৈরি করা।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাসিক মেয়র এ.এইচ.এম. খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে আবারো দুর্যোগের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে। নির্বাচন আসলেই আওয়ামী লীগের বাইরের দল যারা নিজেদেরকে জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচয় দেয় কিন্তু তারা পবিত্র ধর্ম ইসলামকে ব্যবহার করে মৌলবাদী ও চরমপন্থীর রাজনীতি করে। সেই জামায়াত-বিএনপির মাথা নষ্ট হয়ে যায়। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল ভোটে জয়লাভের পর কেন জানি জামায়াত-বিএনপি আর নির্বাচন করতে চায় না। কিন্তু তারা যখন বলে স্বাধীন বাংলাদেশে নিবাচন হতে দেওয়া হবে না তখন সেটা মেনে নেয়া যায় না।
তিনি আরো বলেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একমাত্র কমান্ডার ছিলেন যে কখনো যুদ্ধের ময়দানে যায়নি। কোনো পাকবাহিনীকে মারেনি। কেননা তারা ছিল জিয়াউর রহমানের বন্ধু, শত্রু নয়। বলা যায় জিয়াউর রহমান ঘটনাক্রমে মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তানিরা তাকে বিশ্বত অনুচর মনে করে চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র খালাস করতে পাঠায়। কিন্তু পথিমধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে দেখা হলে তারা তাকে কালুরঘাটে পাঠান। বঙ্গবন্ধুর পাঠানো চিঠি পাঠ করে শুনানোর জন্য। কিন্তু দুঃখজনকভাবে অনেকে তাকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে।বাংলাদেশ বিরোধী শক্তির পৈতৃক সম্পত্তি নয়। তবে আওয়ামীলীগের পৈতৃক সম্পত্তি বলা যায়।
এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, আজকের আলোকিত বাংলাদেশকে অন্ধকারের অতল গহ্বরে তলিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আজ থেকে ২০ বছর আগেও বাংলাদেশের ৫০ ভাগ মানুষ তিনবেলা খেতে পারতো না। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে সবসময় মন্দা লেগে থাকত। আজকে বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানের প্রেতাত্মা ও বংধরেরা বাংলাদেশকে আবার পিছিয়ে নেবার ষড়যন্ত্র করছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা বেঁচে থাকতে আমরা বাংলাদেশকে পিছিয়ে নিতে দেব না।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. গোলাম কিবরিয়ার সভাপতিত্বে এতে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান এবং সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য- রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আয়েন উদ্দিন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২৫তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১১ ডিসেম্বর গোলাম কিবরিয়াকে সভাপতি ও ফয়সাল আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর। এরপর গত বছরের ২৫ অক্টোবর এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১২ নভেম্বর শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পরে সেই সম্মেলন স্থগিত করা হয়। ওই সময় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) জমা দেন ৯৪ জন পদপ্রত্যাশী। পরে চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর আজকের দিনকে সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।