• মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন

নির্ধারিত মূল্যে মিলছে না ডিম আলু ও পেঁয়াজ

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ / ৩৮ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশ : সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সরকারের নড়েচড়ে বসার পরই বাজারে কিছুটা কমেছে পেঁয়াজের দাম। একদিনের ব্যবধানে এক থেকে দুই টাকা আর সপ্তাহের হিসাবে তা কমেছে চার থেকে ছয় টাকা। আলুর দামও কিছুটা কমেছে। তবে সরকার নির্ধারিত দামে মিলছে না আলু, পেঁয়াজ ও ডিম।

বাজারের লাগাম টানতে গত বৃহস্পতিবার তিন পণ্য-আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের মূল্য নির্ধারণ করে দেয় সরকার। এ সিদ্ধান্ত কার্যকরে সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগের কথাও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। কিন্তু খুলনাসহ সারাদেশে নির্ধারিত মূল্য কার্যকর হয়নি। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং করা হচ্ছে বললেন ভোক্তা অধিকার খুলনার সহকারী পরিচালক মো. অলিদ বিন হাবিব।

দেখা গেছে প্রতি কেজি আলুর দাম খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা। পেঁয়াজের দাম খুচরায় প্রতি কেজি ৬৪-৬৫ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। আর প্রতি পিস ডিম ১২ টাকা বেঁধে দেওয়া হলেও বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৪ টাকা। অর্থাৎ সরকারের আদেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভোক্তার পকেট কাটছেন ব্যবসায়ীরা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা ৩০ টাকা কেজি আলু ২০ টাকা দাম বাড়িয়ে ৫০ টাকা করার পর সরকার ১৫ টাকা কমিয়েছে। আর প্রতি পিস ডিমে অতি মুনাফা রোধে ১২ টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বাজারে কার্যকর নেই। সামপ্রতিক সময় একাধিকবার একাধিক পণ্যের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেও তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।

সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম অমান্য করার চিত্র খোদ সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার মূল্য তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে। টিসিবি জানায় সোমবার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু ৪৩ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৭০-৮০ টাকা। প্রতি হালি ডিম সর্বোচ্চ ৫৩ টাকায় বিক্রি হয়। অর্থাৎ প্রতি পিসের দাম হয় ১৩ টাকা ২৫ পয়সা।

জানতে চাইলে কনজ্যুমারস এ্যাসোসিয়শন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ ও অসাধুদের অতি মুনাফা রোধে সরকার একাধিকবার একাধিক পণ্যের দাম নির্ধারণ করেছে। কিন্তু সেই দাম কার্যকর করা যায়নি। ক্রেতার বাড়তি দরেই পণ্য কিনতে হয়েছে। এবারও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। যদিও দাম নির্ধারণের মাত্র তিনদিন অতিবাহিত হয়েছে। তাই আরও কয়েক দিন দেখলে বোঝা যাবে সরকার দাম কার্যকর করতে পেরেছে কিনা।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কোল্ড স্টোরেজে খোঁজ নিয়ে জানা যায় সেখানে প্রতি কেজি আলু ৩৪-৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি আড়তে বিক্রি হচ্ছে ৩৯-৪০ টাকা। আর খুচরা বাজারে ভোক্তার কাছে বিক্রি করা হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা। পাশাপাশি প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ পাইকারি আড়তে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা ও খুচরা বাজারে ৮০-৯০ টাকা। আর প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৪ টাকা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বললেন ভিন্ন কথা, বীজ আলু বাদ দিলে কোল্ড স্টোরেজে খাবারের আলু আছে প্রায় ১২ লাখ টন; যা দিয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। কোল্ড স্টোরেজে যারা আলু সংরক্ষণ করেন তারা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। মাঠ থেকে নিয়ে পরিবহণ খরচ ও কোল্ড স্টোরেজ ভাড়া মিলে এক কেজি আলুর খরচ হয় ১৮-২০ টাকা। সংরক্ষণকারীরা ৬-৭ টাকা লাভ করে আলু বিক্রি করলে কোল্ড স্টোরেজ থেকে ২৬-২৭ টাকায় বিক্রি করতে পারেন সেটাই উচিত। কিন্তু কোল্ড স্টোরেজে প্রতি কেজি আলু ৩৪-৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এটা ২৭ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। আর বিভিন্ন হাত ঘুরে ভোক্তা পর্যায়ে ৩৬ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। কারা দাম বাড়াচ্ছে তা সরকারও জানে। ব্যবস্থা নিলে মূল্য কমে আসবে।

এদিকে সোমবার খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতিকেজি আলু ৫০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা ও ব্রয়লার মুরগির ডিম প্রতিহালি ৫২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ সরকার গত তিনদিন আগে ঘোষণা দেন প্রতিকেজি আলু ৩৫-৩৬ টাকা, পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকা ও প্রতিহালি ডিম ৪৮ টাকা দরে বিক্রি করতে হবে।

এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোজ্য সয়াবিনের দাম রয়েছে এখনো ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। রবিবার নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে ভোজ্য সয়াবিন ফ্রেশ (৫ লিটার) ৮৫০ টাকা, তীর (৫ লিটার) ৮৫০ টাকা, বসুন্ধরা (৫ লিটার) ৮৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় রসুনের দাম হু-হু করে বেড়েই চলেছে। সোমবার নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি রসুন ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ দুই মাস আগেও প্রতিকেজি রসুন বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দবে।

দিনদিন বেড়েই চলেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। সোমবার নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা দরে। ব্রয়লার মুরগির মূল্য অস্বাভাবিক গওয়ায় বিপাকে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। কারণ বাজরে গরুর গোশ বিক্রি হয় চড়া দামে। বাজারে প্রতিকেজি গরুর গোশ ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে ক্রয় করা খুবই কষ্টের।

কমছে না মসুর ডালের দাম। সোমবার বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মসুর ডাল (সরু) ১৪০ টাকা, মসুর ডাল (মোটা) ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

কমছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির দাম। বাজারে ৪০ থেকে ৫০ নিচে মিলছে না সবজি। নগরীর স্ট্যান্ড রোডস্থ কেসিসি সুপার মার্কেট ও ময়লাপোতা কেসিসি সন্ধ্যা বাজারে প্রতিকেজি বেগুন ৬০ টাকা, উচ্ছে ৫০, কাঁচামরিচ ১২০ টাকা, পটল ৪০ কাকরল ৫০ টমোটো ৭০, রসুন ২৮০, ঝিঙে ৪০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

নগরীর গল্লামারী বাজারে সবজি ব্যাবসায়ী হেলাল হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, সবজির দাম উঠা-নামা করছে। তিনি বলেন, বাজার পর্যাপ্ত সবজি আছে।

অপর ব্যবসায়ী জয়নাল বলেন, প্রতিকেজি আলু ৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিকেজি আলু ৪০ টাকা দরে পাইকারি কিনতে হয়েছে।

আরেক ব্যবসায়ী হামিম সরদার বলেন, প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। ব্যবসায়ী মো: সাদ্দাম বলেন, সবজির দাম কখনো কমছে, কখনো বাড়ছে।

কেসিসি সন্ধ্যা বাজারে আসা ক্রেতা আব্দুল হামিদ বলেন, সরকার আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু সরকার নির্ধারণ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে না। পূর্বের দামেই কিনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এসব ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর খুলনার সহকারী পরিচালক মো. অলিদ বিন হাবিব বলেন, সরকার নির্ধারিত মূূল্যে যাতে পণ্য বিক্রি করা হয় এজন্য ইতোমধ্যে উপ-পরিচালক স্যার অভিযান পরিচালনা করেছেন। অভিযান অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং করা হচ্ছে। সরকার নির্ধারণ মূল্যে এসব পণ্য বিক্রি না করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, আমি নিজেও ছুটির দিনে (শুক্রবার ও শনিবার) ১২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠান মালিককে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

ক্যাব খুলনা জেলার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম ডেভিড এ বলেন, ক্যাব জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সাথে কাজ করে থাকে। সরকার যেটা বলেন, ব্যবসায়িরা তা সহজে মেনে নিতে চায় না। এটা একপ্রকার সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। আমাদের সকলের সচেতন হতে হবে। মুষ্টিমেয় কয়েকটি বাজারে অভিযান চালানো হয়ে থাকে। তিনি বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল। আইন আছে কিন্তু সঠিকভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। আইনের যথাযত প্রয়োগ হলে সকল সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ