• মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১১:১১ পূর্বাহ্ন

জিবরাইলের চার প্রশ্নের উত্তরে নবীজি যা বলেছিলেন

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ / ৫৭ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশ : শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

নবীজি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আল্লাহ তায়ালার বাণী আদান-প্রদানের কাজ করতেন হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম। তিনি কখনো কখনো মানুষের আকৃতি ধারণ করে আল্লাহর রাসূলের দরবারে উপস্থিত হবেন। কখনো আবার সবার দৃষ্টির আড়ালে থেকে ওহী নিয়ে আসতেন। মানুষের আকৃতি ধারণের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় জিবরাইল আলাইহিস সালাম বিখ্যাত সাহাবি হজরত দাহিয়াতুল কালবি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর আকৃতি ধারণ করেতেন।

একবার জিবরাইল (আ.) ধবধবে সাদা পোশাকে এবং নিকষ কালো কেশবিশিষ্ট অবস্থায় ছদ্মবেশে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে হাজির হন। হাদিস বিশারদদের মতে, দশম হিজরিতে বিদায় হজের কিছুকাল আগে জিবরাইল আলাইহিস সালাম সাহাবায়ে কেরামদের দ্বিন শিক্ষা দেওয়ার জন্য এসেছিলেন।

দেখে মনে হয়েছিলো তিনি দূরে কোথাও থেকে এসেছেন। কিন্তু তার চেহারায় সফরের কোনো ক্লান্তি নেই। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সাহাবায়ে কেরামের মাঝখানে বসে ছিলেন।

ওমর (রা.) বলেন, আমাদের কেউ সেই আগন্তুককে চিনতে পারেনি। লোকটি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র দুই হাঁটুর সঙ্গে নিজের হাঁটু মিলিয়ে বসলেন। এরপর নিজের দুই হাত হাঁটুর ওপর রাখলেন। সাহাবায়ে কেরাম অবাক হয়ে তাঁর কাজ দেখছিলেন। লোকটি মহানবী মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইসলাম, ঈমান, ইহসান ও কিয়ামত- এই চারটি বিষয়ে প্রশ্ন করলেন।

প্রথম প্রশ্ন

তার প্রথম প্রশ্ন ছিলো- হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে অবহিত করুন।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, ইসলাম হচ্ছে- ১. ‍তুমি এ সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল। ২. নামাজ কায়েম করা, ৩. জাকাত প্রদান করা, ৪. রমজানের রোজা রাখা এবং ৫. পথ খরচের সামর্থ্য থাকলে হজ পালন করা।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা শুনে লোকটি বললেন, আপনি সত্যিই বলেছেন। উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম লোকটির কথা শুনে অবাক হলেন। কারণ তিনি নিজে প্রশ্ন করছেন আবার সত্যায়নও করছেন। কিন্তু তারা কোনো কথা বলেননি।

দ্বিতীয় প্রশ্ন

দ্বিতীয়বার লোকটি আবার প্রশ্ন করলেন, আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবহিত করুন।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, ঈমান হলো—১. আল্লাহ তায়ালা, ২. তার ফেরেশতাকুল, ৩. আসমানি কিতাবগুলো, ৪. রাসুলগণ, ৫. পরকাল এবং তাকদিরের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। লোকটি এবারও বলেন, আপনি সত্যিই বলেছেন। সাহাবায়ে কেরাম আগের মতো এবারও আশ্চর্য বোধ করলেন।

তৃতীয় প্রশ্ন

তৃতীয়বার লোকটি আবার প্রশ্ন করলেন, আমাকে ইহসান সম্পর্কে অবহিত করুন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে বলেন, ইহসান হলো, এমনভাবে মহান আল্লাহর ইবাদত করো, যেন তুমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ। আর যদি তুমি তাকে দেখতে না পাও, তাহলে মনে করবে, তিনি তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন।

চতুর্থ প্রশ্ন

এরপর লোকটি চতুর্থ প্রশ্ন করলেন, আমাকে কিয়ামত সম্পর্কে অবহিত করুন। উত্তরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জিজ্ঞাসাকারী থেকে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি অধিক জ্ঞাত নয়। অর্থাৎ আপনার থেকে আমি এ প্রসঙ্গে অধিক অবগত নই।

প্রশ্নকারী বলেন, তাহলে আমাকে কিয়ামতের কিছু নিদর্শন (আলামত) বলে দিন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামতের নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি হলো—১. দাসী তার মনিবকে প্রসব করবে অর্থাৎ দাসী তার মনিবের সন্তান জন্ম দেবে এবং পরবর্তী সময়ে সে সন্তানটিই তার মনিবের স্থলাভিষিক্ত হবে। ২. আরেকটি নিদর্শন হলো, তুমি দেখতে পাবে যে যাদের পায়ে জুতা ও গায়ে জামা নেই, যারা শূন্য হাতে একসময় জীবনযাপন করত এবং মেষ চরাত তারাই পরবর্তী সময়ে বড় বড় প্রাসাদ গড়ে তুলবে এবং এসব কাজে প্রতিযোগিতা করবে। এসব প্রশ্ন করে লোকটি চলে গেলেন।

ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আরহু বলেন, আমরা কিছু সময় নীরব বসে রইলাম। অতঃপর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে লক্ষ্য করে বলেন, হে ওমর! আগন্তুক এ প্রশ্নকারীকে কি তুমি চিনতে পেরেছ? আমি বললাম, আল্লাহ ও তর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই বেশি জ্ঞাত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি হলেন, জিবরাইল আলাইহিস সালাম। তিনি দ্বিন শিক্ষা দেওয়ার জন্য তোমাদের কাছে এসেছিলেন।

অন্য বর্ণনামতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের আরেকটি নিদর্শন হলো, নগ্নপদ, নগ্নদেহ বিশিষ্ট, মূক ও বধিরদের তোমরা পৃথিবীর শাসক হিসেবে দেখতে পাবে। এরপর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা লুকমানের সর্বশেষ আয়াত পাঠ করে বলেন, পাঁচটি বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। ১. কিয়ামত কখন হবে, ২. কখন বৃষ্টি হবে, ৩. গর্ভাশয়ে সন্তান কী অবস্থায় আছে, ৪. আগামীকাল কী উপার্জন করবে, ৫. কোন জায়গায় সে মৃত্যুবরণ করবে। এই বর্ণনাটি হাদিসে জিবরাইল হিসেবে পরিচিত। (সহিহ মুসলিম, হাদিস, ৮, আবু দাউদ, হাদিস, ৪৬৯৫)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ