• মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১১:১৬ পূর্বাহ্ন

বাড়ীর ছাদের টবে ড্রাগন ফল চাষের দুর্দান্ত উপায়, হবে বাম্বার ফলন

নিজস্ব প্রতিবেদক / ২০ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশ : শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ড্রাগন ফল মূলত আমেরিকার প্রসিদ্ধ একটি ফল যা বর্তমানে আমাদের দেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আমাদের দেশে সর্বপ্রথম ২০০৭ সালে থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে এই ফলের বিভিন্ন জাত আনা হয়। নরম শাঁস ও মিষ্ট গন্ধ যুক্ত গোলাপি বর্ণের এই ফল খেতে অনেক সুস্বাদু আর তার সাথে এই ফল ভিটামিন সি, মিনারেল পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং ফাইবারের উৎকৃষ্ট উৎস।

ড্রাগন ফলের গাছ ক্যাকটাস সদৃশ্য এবং ছোট গোলাকার ফলের ভিতরের অংশ সাধারনত লাল ও সাদা বর্ণের হয়ে থাকে। ড্রাগন ফলের ভিতরের অংশে ছোট ছোট নরম বীজ থাকে। আমাদের দেশের আবহাওয়া ড্রাগন ফল চাষের জন্য উপযুক্ত এবং এখন পর্যন্ত পরিক্ষামূলক চাষেও ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে। আপনি চাইলে বাড়ির ছাদ বাগানে বড় টবে বা ড্রামে ড্রাগন ফল চাষ করে শখ পুরণ ও পুষ্টি আহরণ দুটোই করতে পারেন। নিম্নে ছাদ বাগানে ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করা হলো।

ড্রাগন ফল সাধারণত সারা বছরেই চাষ করা যায়। এটি মোটামুটি শক্ত প্রজাতির গাছ হওয়ায় প্রায় সব ঋতুতেই চারা রোপন করতে পারা যায়। তবে ছাদে ড্রাগন ফল চাষ করে ভালো ফলন পেতে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে চারা রোপন করলে অবশ্যই সুফল পাওয়া যাবে। ছাদ বাগানে ড্রাগন ফল চাষ করতে মাটির টব বা ড্রাম ব্যবহার করা যায়। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি ২০ ইঞ্চি আকারের ড্রাম বেছে নেয়া যায়। কারণ এই আকারের ড্রামে চারা ভালোভাবে শিকর ছড়াতে পারবে আর তাতে ফলন অনেক ভালো হবে।

যদিও প্রায় সব রকমের মাটিতে ড্রাগন ফল সহজেই চাষ করা সম্ভব। কিন্তু ভালো ফলন পেতে হলে অবশ্যই উৎকৃষ্ট জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে দোঁ-আশ মাটি বাছাই করতে হবে। শুরুতেই বেলে দো-আঁশ মাটি সংগ্রহ করে ভালো ভাবে পরিস্কার করে নিতে হবে। তারপর পরিমান মত গোবর, ৫০ গ্রাম পটাশ সার ও ৫০ গ্রাম টি,এস,পি, সার সংগ্রহ করা মাটির সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। সার ও মাটির মিশ্রনে পরিমান মত পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। এরপর বাছাই করা ড্রামে সকল উপকরণ গুলো ১০ থেকে ১২ দিন পর্যন্ত রেখে দিতে হবে। তারপর ড্রামের মাটি ভালো করে খুন্তি দিয়ে ঝুরঝুরে করে আরো ৪ থেকে ৫ দিন রাখতে হবে। মাটি কিছুটা শুষ্ক হয়ে উঠলে ভালো জাতের কাটিং চারা ড্রামে বা পাত্রে ড্রাগন রোপন করতে হবে।

ড্রাগন ফল গাছের সঠিক পরিচর্যা না করলে ফলন ভালো হবেনা। যদিও ড্রাগন ফল গাছে তেমন একটা রোগ বালাইয়ের আক্রমন হয়না তবে পারিপার্শ্বিক অন্যান্য যত্ন নিয়মিত নিতে হয়। চারা লাগানোর পর ড্রাম টি রোদ যুক্ত স্থানে রাখতে হবে। এটি ক্যাকটাস জাতীয় গাছ বলে চাষে খুব বেশি পানি দিতে হয়না। চারায় পানি দেয়ার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন গোড়ায় পানি না জমে। ড্রামের ভিতরের বাড়তি পানি সহজেই বের করে দেবার জন্য ড্রামের নিচের দিকে ৪ থেকে ৫ টি ছিদ্র মাটি ভরাট করার পুর্বেই করে দিতে হবে। ড্রাগন গাছের ডালপালা লতার মত হওয়ার কারনে গাছের হালকা বৃদ্ধির সাথে সাথেই খুঁটির সাথে বেঁধে দিতে হবে। এতে করে গাছ সহজেই ঢলে পরবেনা।

ড্রাগন ফল দুই ধরনের হয়- ভেতরের অংশ লাল ও সাদা। দেখতে ও খেতে চমৎকার হওয়ার পাশাপাশি পুষ্টিগুণের দিক থেকেও অনন্য ড্রাগন ফল। জেনে নিন কেন নিয়মিত এই ফল খাবেন। ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা গুলো হলো বেশ কিছু প্রয়োজনীয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মেলে ড্রাগন ফল থেকে। এগুলো আমাদের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।

এই ফল ফাইবার সমৃদ্ধ ও ফ্যাট ফ্রি। ফলে নিশ্চিন্তে ডায়েট লিস্টে রাখতে পারেন ড্রাগন ফল। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি মেলে ফলটি থেকে। নিয়মিত খেলে তাই বাড়ে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। শরীরের জন্য ক্ষতিকর ও উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সঠিক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে ড্রাগন ফল। আয়রনের চমৎকার উৎস রঙিন ড্রাগন ফল। রক্তশূন্যতার সমস্যা দূর করতে চাইলে তাই প্রতিদিন খাওয়া চাই উপকারী এই ফল। ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে ড্রাগন ফল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভূমিকা রয়েছে উপকারী এই ফলের। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে ড্রাগন ফল। ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ ফলটি নিয়মিত খেলে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে ও ছানি পড়ার ঝুঁকি কমে। ড্রাগন ফলের ছোট কালো বীজে রয়েছে ওমেগা থ্রি ও ওমেগা নাইন ফ্যাটি অ্যাসিড। এগুলো হার্টের জন্য উপকারী।

ড্রাগন ফলের কাটিং চারা রোপনের ১ বছর থেকে ১৮ মাস বয়সে ফল সংগ্রহ করা যায়। গাছে ফুল ফোঁটার মাত্র ৩৫-৪০ দিনের মধ্যেই ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। অতএব ছাদ অলস ফেলে না রেখে ছাদকে কাজে লাগানোর জন্য আহ্বান জানান কৃষিবিদরা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ