কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীতে ২৬টি খোলা পয়েন্টে ভাঙন তীব্রতর হচ্ছে। ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করতে না পারায় প্রতিবছর দুর্গতরা হারাচ্ছে বসতভিটা, আবাদীজমি, গাছপালা ও পুকুরসহ নানা স্থাপনা। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা এবং স্থায়ীভাবে নদী তীররক্ষা কার্যক্রম গ্রহন না করায় ইতোমধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়েছে মূল্যবান অবকাঠামোসহ গ্রামের পর গ্রাম।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, তিস্তা নদীতে আমাদের একটি সমীক্ষা প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। সমীক্ষা প্রতিবেদন আমরা শীঘ্রই হাতে পেলে তিস্তা নদীর বামতীর বরাবর যে ৪০ কিলোমিটার নদীপথ রয়েছে সেগুলো প্রতিরক্ষায় প্রকল্প গ্রহন করতে পারবো। সমীক্ষা প্রকল্পটি অনুমোদন হলে এই এলাকার তিস্তা পাড়ের মানুষের যে দু:খ-দুর্দশা তা চিরতরে লাঘব হবে বলে আমরা মনে করি।
রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জানান, আমার ইউনিয়নের ৭০ ভাগ এলাকা তিস্তা নদী গ্রাস করে নিয়েছে। নদী গর্ভে চলে গেছে চর বিদ্যানন্দ, চর তৈয়ব খাঁ, কালীরহাট, পাড়া মৌলা, রামহরি, চতুরা, ডাংরা, গাবুরহেলান, মন্দির প্রমুখ এলাকা।
ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নে মেম্বার মামুনুর রশীদ ও মিনহাজুল ইসলাম জানান, মানচিত্র থেকে এই ইউনিয়নের বুড়িরহাট, চর গতিয়াসাম, চর খিতাব খা ও চর নাখেন্দার ৬০ ভাগ মূল ভূখন্ড তিস্তা নদী গ্রাস করেছে। এখানে বাড়ছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা।
এছাড়াও পাশাপাশি নাজিম খান ইউনিয়নের চর তৈয়ব খা ও হাঁসারপাড় এলাকার ৬০ভাগ তিস্তা নদীর পেটে চলে গেছে। এছাড়াও তিস্তা নদী ভাঙছে পাশ্ববর্তী উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া, থেতরাই ও বজরা ইউনিয়নে। আশির দশক থেকে ভাঙতে ভাঙতে তিস্তা নদী এখন হাতের নাগালে চলে এসেছে। বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হলেও রাক্ষুসী তিস্তা নদীর কাছে সেগুলো একদম টিকছে না। ফলে এলাকার মানুষ হারাচ্ছে তাদের মূল্যবান সম্পদ। এখন তারা স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থার দাবী জানিয়ে আসছেন।
কুড়িগ্রাম সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু জানান, তিস্তা নদীর মহাপরিকল্পনার কথা বলে নাগরিকদের ধোকা দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন মূল ভূখন্ড নদী গ্রাস করে নিলেও সংশ্লিষ্টরা সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন না। তিস্তা পাড়ের মানুষের কান্না পৌছাচ্ছে না সরকারের কানে। নদী ড্রেজিং ব্যবস্থা গ্রহন না করায় সামান্য বৃষ্টি ও বর্ষাতে তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চল। ভাঙনে মানুষ হারাচ্ছে তাদের মূল্যবান সম্পদ। এলাকার মানুষ প্রতিকার চেয়েও দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরে তাসনিম জানান, রাজারহাটে সোমবার (২৮আগস্ট) ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদে দুর্গত ৩০০ পরিবারে ৩টন চাল বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও ভাঙন কবলিতদের তালিকা করে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পাঠানো হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে সমন্বয় করে আমরা তিস্তা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে সব ধরণের উদ্যোগ গ্রহন করছি। এছাড়াও রাজারহাটে দুর্গতদের জন্য ৩টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আরো বরাদ্দ পাঠানো হবে। আমাদের কাছে পর্যপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। ভাঙন কবলিতরা যাতে সমস্যায় না পরেন এজন্য আশ্রয়কেন্দ্র তৈরী রাখা হয়েছে। এছাড়াও সদাশয় সরকার তিস্তা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে সমীক্ষার কাজ করছেন। আশা করা হচ্ছে স্থায়ীভাবে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করা হবে। যাতে চিরতরে মানুষের ভোগান্তি দূর হয়।