অবিলম্বে সরকার পদত্যাগ না করলে রাজপথেই ফয়সালা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দলটির শীর্ষ এই নেতা বলেছেন, ‘আগামী ১২ জুলাই ঢাকার সমাবেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা আসবে। যার মধ্যদিয়ে দেশের সব মানুষকে জাগ্রত করে এই সরকারকে বিদায় দিয়ে জনগণের নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আসুন আমরা সবাই উঠে দাঁড়াই।’
রোববার (৯ জুলাই) বিকেলে সিলেট শহরের সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণরে দাবি আদায়ে আমাদের কথা বলার অধিকারে ১৪ বছর ধরে বাঁধা দিয়ে আসছে সরকার। আমরা এক কঠিন সময় ও সংকটের মধ্যে উপনীত হয়েছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও অস্তিত্ব থাকবে কি না তা কয়েক মাসের মধ্যেই নির্ধারণ হবে।’
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, বেআইনিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে ব্যবহার করে। আর তারাই বলে দেশে না কি সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। তারা মনে করে দেশটা তাদের পৈতৃক সম্পত্তি। তাদের তালুকদারি। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করেছে।
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ বলছে- তারা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করবে। কিন্তু কোন সংবিধান? যেটা তারা নিজেদের মতো কাটা-ছেঁড়া করেছে, সেই সংবিধান? আমরা বলেছি, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা। যেটা ১৯৯৬ সালে নির্ধারণ হয়েছিল। আজকে কেউ ভোট দিতে পারেনি। তরুণরা ভোট দিতে পারেনি। এই কথা বলতে গিয়ে অনেককে মেরে পঙ্গু করা হয়েছে। আমাদের সিলেটের নেতা এম ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত দুটি নির্বাচনে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। সে জন্যই আমরা আবারও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলে ধরেছি। যদিও আওয়ামী লীগ নিজেরা এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল। আজকে এই সরকার ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু দেয়নি। চার কোটি যুবক এখন বেকার। এমতাবস্থায় তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ বাঁচাতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।এ জন্য সরকারকে বিদায় করা ছাড়া কোনো পথ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। তা না হলে ফয়সালা হবে রাজপথে।
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, তারুণ্যের সমাবেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করতে তরুণরা এগিয়ে আসছেন।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, বর্তমান সরকার অবৈধ এবং ক্ষমতায় থাকার তাদের কোনো অধিকার নেই। এই সরকারের আমলে কেউ ভোট দিতে পারেনি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন ও সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘরে ফিরব না- মর্মে উপস্থিত সব নেতাকর্মীকে শপথবাক্য পাঠ করিয়ে টুকু বলেন, আমরা অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাব না। এ সময় বেগম খালেদা জিয়াসহ সব কারাবন্দি নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করেন তিনি।
এছাড়া সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন ঘটাতে হলে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা তরুণদের যা সহযোগিতা দরকার তাই দেব।নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার ও শিক্ষা উপকরণের দাম কমানোসহ বিভিন্ন দাবিতে ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল সোয়া ৪টায় কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই সমাবেশে নতুন ভোটার ও তরুণদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
পূর্ব নির্ধারিত এই কর্মসূচিতে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। পরে সিলেট আলিয়া মাদরাসার মাঠের সমাবেশ থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম এ জিলানী। পাশাপাশি সমাবেশের পরিচালনায় ছিলেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।
এতে অন্যদের মধ্যে সিলেট বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, যুবদলের জাকির হোসেন সিদ্দিকী, স্বেচ্ছাসেবক দলের ফখরুল ইসলাম রবিন, ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেন, সিলেট জেলা বিএনপি সভাপতি মোহাম্মদ কাইয়ুম চৌধুরী, বিএনপির নিখোঁজ নেতা ও সিলেট বিভাগীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনা প্রমুখ বক্তব্য দেন।