ঈদের সময়ে অনেক পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে তাদের পিয় মানুষটিকে। গত ২৭ জুন থেকে শুরু হওয়া ঈদের ছুটিতে শনিবার (১ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত অর্থাৎ পাঁচ দিনে সড়কে ঝরেছে অন্তত ৩৪ তাজা প্রাণ। সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে ঈদের দিন ও তার পরদিন। এ দুই দিনেই নিহত হয়েছে ২১ জন। এ ছাড়া ঈদের ছুটি শুরুর দিন মঙ্গলবার পাঁচজন, ঈদের আগের দিন বুধবার পাঁচজন এবং শনিবার বিকেল পর্যন্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
বগুড়ায় পাঁচজন, রাজধানী, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিরাজগঞ্জে চারজন করে, টাঙ্গাইলে তিনজন, মুন্সীগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুরে দুজন করে এবং চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কিশোরগঞ্জ, রংপুর, রাজবাড়ী ও দিনাপুরের ফুলবাড়ীতে একজন করে নিহত হয়েছে।
ঈদের দিন বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরও দুজন। ওই দিন সকালে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের সলঙ্গা থানার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পুকুরপাড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলো- গাইবান্ধা সদরের ফুলকড়ি গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে সুজন (৩০), একই জেলার সাঘাটা থানার হাসিলকান্দি গ্রামের সুবুজ আলীর ছেলে রাব্বি (২৫), নাটোরের বেড়াবাড়িয়া এলাকার সোহরাব আলীর ছেলে রানা (৩২) ও নাটোরের বাগাতিপাড়া থানার তমালতলা এলাকার শরিফুল ইসলামের ছেলে আয়ান (৪)।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকামতলা বাজারে ঈদের নামাজ শেষে ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হন মোস্তফা কামাল (২৭) নামে এক ব্যক্তি। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করতেন।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান আকুব্বর আলী (৬৫) নামে এক ব্যক্তি। যশোরের শার্শায় বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় বিপ্লব হোসেন (১৪) নামে মোটরসাইকেল আরোহী এক কিশোর নিহত হয়। ওই দিন সকাল সোয়া ৮টার দিকে রংপুর মহানগরীতে বাসের সঙ্গে একটি পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে মিনহাজুল ইসলাম নামে একজন নিহত হন। তিনি পিকআপটির চালক ছিলেন।
এদিন বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে রাজবাড়ীতে মাইক্রোবাসের চাপায় সজীব মোল্লা নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। তিনি নৌবাহিনীর এন্ট্রি কর্মকর্তা ছিলেন।
বেশি মৃত্যু ঈদের পরদিন: ঈদের ছুটির ফাঁকা রাস্তায় দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে ঈদের পরদিন শুক্রবার। এদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় ১২ জনের প্রাণহানি হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে টাঙ্গাইলে বন্ধুরা মিলে একটি অটোরিকশায় ঘুরতে বের হন। ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় পৌঁছালে যাত্রীবাহী বাসের চাপায় তিনজন নিহত হন।
এদিন লক্ষ্মীপুরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারান শাফায়েত হোসেন (১৮) ও রাজন হোসেন (১৮) নামের দুই তরুণ।
শুক্রবার মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বেশনাল এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় জিসান রাজা (১৭) ও আপন মালত (১৬) নামে দুজনের। উপজেলার দীঘিরপাড় বাজার থেকে পুরা বাজারের দিকে যাওয়ার পথে রাত ১০টার দিকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলসহ পুকুরে পড়েন তারা।
একই দিন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় প্রাইভেট কারের চালকসহ দুজন নিহত হন। এদিন রাতে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানার কুর্মিটোলা এলাকায় প্রাইভেট কারের ধাক্কায় মোটরসাইকেলচালক ও আরোহী নিহত হন। এরা হলেন জান্নাত আক্তার (১৮) ও মো. শামীম (৩৫)।
এদিন বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় বাসচাপায় জয় কুমার দাস (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
শনিবার ( ১ জুলাই) ভোরে দিনাজপুর-গবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের উপজেলার বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন ডাঙ্গাপাড়া মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।নিহত রহিমা বেগম দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার পাহাড়পুর এলাকার আব্দুল খালেকের স্ত্রী।