• মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৩৩ অপরাহ্ন

মিষ্টির প্যাকেটে ঘুষ নেয়ার সময় দুদক কর্মকর্তার পিএসহ গ্রেপ্তার ৪

দেশের আওয়াজ ডেস্কঃ / ৬০ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশ : শনিবার, ২৪ জুন, ২০২৩

ঘুষ নেয়ার সময় রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত সহকারীসহ (পিএ) চারজন‌কে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃতরা হ‌লেন- গৌতম ভট্টাচার্য (৪২), হাবিবুর রহমান (৪২), পরিতোষ মন্ডল (৬৩) ও মো. এসকেন আলী খান (৫৭)।
শুক্রবার (২৩ জুন) আশিকুজ্জামান না‌মের একজন সি এন্ড এফ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার সময় তা‌দের ‌গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত‌দের কাছ থে‌কে মিষ্টির ৪টি প্যাকেট, নগদ দেড় লাখ টাকা, ৪টি মোবাইল ফোন, দুদকের মনোগ্রাম সম্বলিত খাকি রঙের ১টি খাম ও দুদকের একটি নোটিস উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তাকৃত‌দের ম‌ধ্যে গৌতম ভট্টাচার্য দুদক মহাপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. মোকাম্মেল হকের পিএ। এসকেন আলী খান চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য। অপর দুইজন পেশাগত ভাবে দালাল ও প্রতারক।

ডি‌বি জানায়, আশিকুজ্জামান বায়তুল মোকাররম মসজিদের কার্পেটের দোকানে ইমপোর্ট করা কার্পেট ও জায়নামাজ সরবরাহ করে থাকেন। গত ২০ জুন সকালে আশিকুজ্জামানের উত্তরার বাসায় দুদুকের মনোগ্রাম সম্বলিত খাকি রঙের খামে ১টি নোটিশ নিয়ে একজন অফিসার হাজির হন। কার্পেটের ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণের চোরাচালান এবং মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ তুলেন আশিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে।

সন্তান প্রসব সংক্রান্ত কার‌ণে স্ত্রীর হাসপাতা‌লে থাকা এবং দুদকের এই ভয়ানক অভিযোগ শুনে ঘাবরে যান আশিকুজ্জামান। তখন দুদকের ওই অফিসার আশিকুজ্জামানকে একটু সহানুভূতি দেখানোর ভান করে তাকে তখনই মোবাইল বন্ধ করে দিয়ে আত্মগোপনে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেয় এবং ভয় দেখান ডিবি, সিআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক এবং এনএসআই নাকি দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয় তাকে ধন্য হয়ে খুঁজছে। দুদকে তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি অভিযোগ আমলে নেয়া হয়েছে।

নোটিশ বহনকারী ব্যক্তিটি হোয়াটসঅ্যাপে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আশিকুজ্জামানকে কথা বলিয়ে দেন। হোয়াটসঅ্যাপে দুদকের ওই কর্মকর্তা মোবাইলে কথা বলা সমীচীন নয় মর্মে ডিটেইল্স জানার জন্য তাকে দুদক অফিসে স্বশরীরে হাজির হতে বলে।

দুদকের নোটিসে বিভিন্ন অভিযোগের পাশাপাশি উল্লেখ করা হয় ‘শূন্য থেকে সে আজ কোটি কোটি টাকার মালিক। তাকে দুদকের জিম্মায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সকল প্রমাণ পাওয়া যাবে। এমতাবস্থায় প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন’। কারণ দর্শানোসহ ব্যক্তিগত শুনানির জন্য ১০ জুলাই নির্ধারণ করা হয়।

ঘাবড়ে যাওয়া আশিকুজ্জামানকে দফায় দফায় ফোন দেয়া হয় হোয়াটসঅ্যাপে। ভয় দেখানো হয় সম্পত্তি ক্রোক করা, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ব্যবস্থা করা, গণমাধ্যমে সয়বাদ প্রকা‌শ ক‌রে বেজ্জতি করাসহ সিআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনএসআই, ডিবি পুলিশ এবং দুদকের মাধ‌্যমে ‌গ্রেপ্তার করিয়ে কঠোর শাস্তির ভয়।

ডি‌বি জানায, একপর্যায়ে আশিকুজ্জামানকে মতিঝিলের হিরাঝিল হোটেলের দ্বিতীয় তলায় এসে সমঝোতার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। সমঝোতা অনুসারে প্রথমে দুই কোটি টাকা দিতে বলা হলেও প‌রে দিতে বলা হয় এক কোটি টাকা। বিনিময়ে সমস্ত অভিযোগ থেকে অব্যাহতির নিশ্চয়তা দেয়া হয়।

এক কোটি টাকার ভিতর শুক্রবার জুম্মার আগে ২০ লাখ টাকা ‌দি‌তে বলা হয়। বাকি টাকা আগামী ‌রোববার ব্যাংক আওয়ারে পরিশোধের সমঝোতা হয়। ভিকটিম বিষয়টি গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগককে জানান। প‌রে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ দুদকের সাথে যোগাযোগ করে এবং দুদকের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলামসহ হোটেল হিরাঝিলের আশেপাশে অবস্থান নেয়।

প‌রে সমঝোতা অনুযায়ী ভিকটিম আশিকুজ্জামান চারটি মিষ্টির প্যাকেটে তার স্বাক্ষরিত দেড় লাখ টাকা ভরে হোটেল বহিরাঝিলে যান। তার কাছ থেকে মিষ্টির প্যাকেটে সংরক্ষিত টাকা গ্রহণ করার সময় আশেপাশে অবস্থান নেয়া ডিবি পুলিশ চক্রটি‌কে হাতেনা‌তে গ্রেপ্তার করে।

শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ব‌লেন, গ্রেপ্তারকৃত‌দের মধ্যে গৌতম ভট্টাচার্য দীর্ঘদিন ধরে দুদকের বিভিন্ন মহাপরিচালকদের পিএ হিসেবে কাজ কর‌ছেন। তি‌নি কখনো দুদকের ডিজি (তদন্ত), ডিজি (এডমিন), ডিজি (প্রসিকিউশন), ডিজি (মানি লন্ডারিং) এর অফিসের পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট (পিএ) হিসেবে কাজ কর‌ছেন।

গৌতম ভট্টাচার্য কর্ম সূত্রেই জানেন, দুর্নীতি সংক্রান্তে কিভাবে মানুষকে নোটিশ পাঠাতে হয়, কিভাবে তাদের কাছ থেকে আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক ব্যাখ্যা নেয়া হয় এবং কিভাবে অভিযোগ গঠন করা হয়। এই অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তি‌নি তার সহযোগীদের দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী, শিল্পপতি এবং চাকুরীজীবীকে টার্গেট করে তাদের ব্যক্তিগত নানা তথ্য সংগ্রহ করে দুদকের চিঠির খাম ও প্যাড/ফরমেট ব্যবহার করে অভিযোগের নোটিশ পাঠাতেন।

প‌রে কখনো মোবাইল হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলে, কখনো শিল্পকলা একাডেমীর ভিতরে বসে, কখনো আশেপাশের বিভিন্ন হোটেলে টার্গেটের টাকায় খেতে খেতে তাদের অভিযোগের দায় হতে অব্যাহতি দান/ সমঝোতার নামে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নি‌তেন। এভা‌বে তি‌নি বিপুল প‌রিমাণ টাকা হা‌তি‌য়ে নি‌য়ে‌ছেন।

হারুন অর রশীদ ব‌লেন, ভুয়া অভিযোগে এক ব্যবসায়ীকে দুদকের নামে চিঠি ইস্যু করে তাকে হয়রানি করা হচ্ছিল। এ চক্রে আছেন দুদকের মহাপরিচালকের পিএ, পুলিশ সদস্য (বরখাস্ত) এসকেন আলী খান ও দুই দালাল হাবিবুর রহমান, পরিতোষ মন্ডল। দুর্নীতির দমন কমিশনের (দুদক) নামে ওই ব‌্যবসায়ী‌কে একটি চিঠি দেয় দালাল চক্র। চক্রটি আশিকুজ্জামানকে জানায়, তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়েছে। এই মামলা থেকে বাঁচানোর কথা বলে চক্রটি প্রথমে তার কাছে ৫ কোটি ও পরে ২ কোটি টাকা দাবি করে। প‌রে দাবি করা টাকা নিতে চক্রের চার সদস্য হোটেলে আসলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

তি‌নি ব‌লেন, গ্রেপ্তারকৃত‌দের সাথে দুদুক কার্যালয়ের দায়িত্বশীল আর কেউ জড়িত আছে কিনা খতিয়ে দেখা হ‌চ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ